OnePlus, Motorola সহ এই ১০টি স্মার্টফোন থেকে সবচেয়ে বেশি নির্গত হয় রেডিয়েশন, দেখুন লিস্ট

স্মার্টফোন কেনার সময় আমরা সকলেই মূলত ফোনের ক্যামেরা, র‌্যাম, প্রসেসরের ওপর নজর রাখি, কিন্তু এর মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস দেখতে ভুলে যাই, আর সেটি হল…

স্মার্টফোন কেনার সময় আমরা সকলেই মূলত ফোনের ক্যামেরা, র‌্যাম, প্রসেসরের ওপর নজর রাখি, কিন্তু এর মাঝে একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস দেখতে ভুলে যাই, আর সেটি হল ফোনের রেডিয়েশনের ফ্রিকোয়েন্সি লেভেল। সব ফোনেই কমবেশি হলেও রেডিয়েশন (radiation) পাওয়া যায়, যা মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর বলে অনেকেই মনে করে থাকেন। সম্প্রতি Bankless Times-এর এক রিপোর্টে ১০টি স্মার্টফোনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, যেগুলি থেকে সবচেয়ে বেশি রেডিয়েশন নির্গত হয় বলে জানা গেছে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, কোনো বেনামি নয়, এই তালিকার প্রত্যেকটি স্থানই দখল করে রয়েছে মোটোরোলা (Motorola), ওয়ানপ্লাস (OnePlus), সোনি (Sony), গুগল পিক্সেল (Google Pixel)-এর মতো বিশ্বের নামজাদা কয়েকটি কোম্পানির স্মার্টফোন। আসুন, এখন তালিকাটির ওপর একনজরে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।

এই তালিকার সবথেকে ওপরে রয়েছে Motorola Edge, যার SAR (এসএআর অর্থাৎ স্পেসিফিক আবসর্পশন রেশিও) স্কোর ১.৭৯ ওয়াট/কেজি। যদিও এই ধরনের তালিকায় সবার ওপরে থাকা মোটেও কোনো সুখবর নয়, কারণ এর অর্থ হল এই ফোনটি সবচেয়ে বেশি রেডিয়েশনের জন্য দায়ী। এই স্মার্টফোনটি ZTE Axon 11 5G-এর চেয়ে ০.২০ ওয়াট/কেজি বেশি রেডিয়েশন নির্গত করে, যেটি ১.৫৯ ওয়াট/কেজি স্কোর নিয়ে তালিকায় এর পরের অবস্থানে রয়েছে।

এরপর এই তালিকায় রয়েছে OnePlus 6T এবং Sony Xperia XA2 Plus, যাদের এসএআর স্কোর যথাক্রমে ১.৫৫ ওয়াট/কেজি এবং ১.৪১ ওয়াট/কেজি। এরপরে গুগল পিক্সেলের দুটি স্মার্টফোন – Google Pixel 3XL এবং Google Pixel 4a যথাক্রমে ১.৩৯ ওয়াট/কেজি ও ১.৩৭ ওয়াট/কেজি স্কোর সহ এই তালিকায় নিজেদের নামকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এর পরবর্তী স্মার্টফোন হিসেবে Oppo Reno5 5G মডেল ১.৩৩ ওয়াট/কেজি স্কোর নিয়ে এই তালিকায় বিরাজ করছে। আর তালিকার শেষ তিনটি ফোনের মালিকানাধীন কোম্পানি হিসেবে আবারও একবার হাজির হয়েছে ওয়ানপ্লাস, সোনি এবং গুগল পিক্সেলের ফোন। এই তিনটি ফোন হল যথাক্রমে Sony Xperia XZ1 Compact (স্কোর ১.৩৬ ওয়াট/কেজি), Google Pixel 3 (স্কোর ১.৩৩ ওয়াট/কেজি), এবং OnePlus 6 (স্কোর ১.৩৩ ওয়াট/কেজি)।

আগেই বলেছি যে, SAR (স্পেসিফিক আবসর্পশন রেশিও) স্কোরের ওপর ভিত্তি করে এই তালিকাটি প্রকাশিত হয়েছে। মানব শরীর কত দ্রুত রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি এনার্জি শোষণ করে, তা এই রেশিও থেকে বোঝা যায়। অনেক দেশ একটি SAR (সার) লেভেল সেট করেছে যা প্রতিটি স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশন সর্বোচ্চ ১.৬ ওয়াট/কেজি SAR লেভেল সেট করেছে। এখন যদি এই সাম্প্রতিক প্রকাশিত তালিকাটিতে চোখ রাখা যায়, তাহলে দেখা যাবে যে, Motorola Edge কিন্তু SAR লেভেল অতিক্রম করে গিয়েছে, যা রীতিমতো চিন্তার বিষয়। আর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি হল, তালিকায় উল্লিখিত সবকটি ফোনই কয়েকবছর আগে লঞ্চ হওয়া সেরা কয়েকটি স্মার্টফোন। আর এগুলির বেশিরভাগই প্রিমিয়াম বিভাগের অন্তর্গত। যদিও এই ফোনগুলির ব্যবহারকারীর সংখ্যা খুবই কম, কিন্তু তাই বলে স্মার্টফোনগুলির এই ধরনের একটি তালিকায় জায়গা করে নেওয়া কিন্তু মোটেই শোভনীয় নয়।

তবে এখন মূল প্রশ্নটি হল, স্মার্টফোন থেকে নির্গত রেডিয়েশন কি সত্যিই ক্ষতিকর? একথা অনস্বীকার্য যে, ব্যবহার করার সময় প্রতিটি স্মার্টফোন থেকেই খুব কম পরিমাণে হলেও নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন নির্গত হয়। এই রেডিয়েশন বা বিকিরণগুলি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি (RF) এনার্জি নামেও পরিচিত। মানুষের শরীর রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি এনার্জি শোষণ করে, যা মোবাইল ফোন থেকে নির্গত হয়। তবে এসব কথা শুনে চিন্তার কিন্তু একদমই কোনো কারণ নেই, কেননা ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট জানিয়েছে যে, নন-আয়োনাইজিং রেডিয়েশন যে মানব শরীরে ক্যান্সারের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তোলে, তার কোনো সম্যক প্রমাণ কিন্তু এখনও পাওয়া যায়নি।

এখনও পর্যন্ত কেবল এইটুকু লক্ষ্য করা গেছে যে, ব্যবহার করার সময় স্মার্টফোনটি শরীরের যে অংশের সংস্পর্শে থাকে, শুধুমাত্র শরীরের সেই অংশটুকু গরম হয়ে যায়। তবে এর জন্য যে শরীরে কোনো কুপ্রভাব পড়তে পারে, তারও কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ এখনও মেলেনি। ফলে অযথা ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই বললেই চলে। কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ পাওয়া যাক বা না যাক, মানুষের মন যেন কোনো যুক্তিই মানতে চায় না! তাই যদি আপনার মনে কোনোরকম কোনো শঙ্কা থাকে, তাহলে স্মার্টফোন কেনার আগে সেটির রেডিয়েশন ফ্রিকোয়েন্সি লেভেল অবশ্যই চেক করে নিন।