ব্রেইন কন্ট্রোল করা যাবে ইনফ্রারেড লাইটের মাধ্যমে! চমকপ্রদ টেকনোলজি আবিষ্কার বিজ্ঞানীমহলের

মানুষের মস্তিষ্ক অর্থাৎ ব্রেইন শরীরের সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল অংশ। মানব তথা প্রাণীদেহের এই কঠিন এবং বিস্ময়কর বস্তুটির সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে বছরের পর বছর…

মানুষের মস্তিষ্ক অর্থাৎ ব্রেইন শরীরের সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল অংশ। মানব তথা প্রাণীদেহের এই কঠিন এবং বিস্ময়কর বস্তুটির সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে বছরের পর বছর ধরে বিজ্ঞানীরা অহরহ পরিশ্রম করে চলেছেন। দেহের মধ্যে স্থাপিত এই ছোট্ট জিনিসটি গোটা মানব শরীর চালিত করে, আর এর জন্য মস্তিষ্কে ছোটো-বড়ো নানারকমের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মজুত রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, মস্তিষ্ককে যদি একটি বড়ো স্যুইচবোর্ড হিসেবে কল্পনা করা যায়, তবে এটিতে হাজারো বাটন, নব, ডায়াল এবং লিভার আছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। আর এই ‘বাটন’-গুলির সাহায্যেই মানুষের আবেগ, স্মৃতি, এবং আচরণ নিয়ন্ত্রিত হয়।

কিন্তু এই সবকিছুই তো কল্পনাস্বরূপ, সত্যি সত্যিই তো আর মস্তিষ্কের সেলুলার সার্কিটে নব বা বাটন নেই যেগুলির সাহায্যে চাইলেই এটিকে ইচ্ছানুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। যদিও কথাতেই আছে মানুষের মন বোঝা বড়ো কঠিন, কিন্তু কীভাবে তা সহজে বুঝে নিয়ে সেটিকে ইচ্ছেমতো কন্ট্রোল করা যেতে পারে, তার জন্য এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বিজ্ঞানীরা নানারকম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে কথায় এও রয়েছে যে, পরিশ্রম করলে সুফল মিলবেই। সেক্ষেত্রে মানুষের মন বোঝার মত এই কঠিন কাজের আশানুরূপ ফল এবার স্নায়ুবিজ্ঞানীরা পেতে চলেছেন বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।

এবার দূর থেকেই কন্ট্রোল করা যাবে ব্রেইন

রিপোর্ট অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, উ সাই নিউরোসায়েন্স ইন্সটিটিউটের (Wu Tsai Neurosciences Institute) বিজ্ঞানীরা এমন একটি অত্যাশ্চর্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন যার সাহায্যে দূর থেকেই মানুষ তথা যে-কোনো প্রাণীর মস্তিষ্ককে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। এই টেকনোলজিটি অনেকটা কাউকে সম্মোহিত করার মতো। কোনো ব্যক্তিকে সম্মোহিত করে যেমন তাকে দিয়ে যে-কোনো কাজ করিয়ে নেওয়া যেতে পারে, তেমনি বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত এই নয়া টেকনোলজির সাহায্যে দূর থেকেই মস্তিষ্কে লাগানো চিপকে কন্ট্রোল করা সম্ভব। শুনে আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব বলে মনে হলেও গুওসং হং (Guosong Hong) এবং তার সহকর্মীরা এই প্রযুক্তিটিকে নিয়ে রিসার্চ করছেন, যা এই বছরের মার্চ মাসে নেচার বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং (Nature Biomedical Engineering) কর্তৃক প্রকাশিত হয়েছিল। অপ্টোজেনেটিকস (Optogenetics)-এর উপর ভিত্তি করে এই নতুন প্রযুক্তিটির উদ্ভাবন করা হয়েছে।

নয়া প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করবে? 

অপ্টোজেনেটিকস হল স্নায়ুবিজ্ঞানের একটি ট্রান্সফর্মেটিভ টুল। হং জানিয়েছেন যে, মস্তিষ্ক ভিজ্যুয়াল লাইটকে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারে না। তাই গবেষকরা ইনফ্রারেড লাইট ব্যবহার করেছেন এবং এই নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে তারা ‘টিআরপিভি১’ (TRPV1)-কে কাজে লাগিয়েছেন। এক্ষেত্রে বলে রাখি যে, ‘টিআরপিভি১’ একটি মলিকিউলার হিট সেন্সর। সোজা কথায় বললে, তাপের মাধ্যমে মস্তিষ্কে যথাযথ অনুভূতি জাগিয়ে তুলবে এই সেন্সর। এই চমকপ্রদ প্রযুক্তিটিকে বর্তমানে ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু মানুষের ওপর কবে এই টেকনোলজিটি প্রয়োগ করে দেখা হবে, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি। তবে সত্যি সত্যিই যদি এই পরীক্ষার সুফল মেলে, তাহলে আগামী দিনে স্নায়ুবিজ্ঞানের জগতে যে এক রোমাঞ্চকর তথা তাক লাগানোর মত ঘটনা ঘটবে, সেকথা নিঃসন্দেহে বলাই বাহুল্য!