সবচেয়ে সস্তায় 5G পরিষেবা চালু করতে চলেছে Reliance Jio, নিলাম শেষ হতেই হুঙ্কার মুকেশ আম্বানির সংস্থার

গোটা দেশে কবে 5G (৫জি) পরিষেবা রোলআউট হবে, এই নিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরেই তুমুল জল্পনা-কল্পনা চলছে। তবে সম্প্রতি আয়োজিত 5G স্পেকট্রামের নিলামপর্বই হল এখন…

গোটা দেশে কবে 5G (৫জি) পরিষেবা রোলআউট হবে, এই নিয়ে বিগত কয়েক বছর ধরেই তুমুল জল্পনা-কল্পনা চলছে। তবে সম্প্রতি আয়োজিত 5G স্পেকট্রামের নিলামপর্বই হল এখন দেশের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। গত সোমবার খুব সফলভাবে এই নিলামপর্ব সম্পন্ন হয়েছে, যার ফলে পরবর্তী প্রজন্মের নেটওয়ার্ক যে খুব শীঘ্রই দেশের আপামর জনগণের দরজায় কড়া নাড়তে চলেছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই বললেই চলে। সদ্য সমাপ্ত হওয়া এই নিলামপর্ব থেকে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য সামনে এসেছে। তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে খবরটি মিলেছে তা হল, এই মুহূর্তে Reliance Jio (রিলায়েন্স জিও) 5G পরিষেবা প্রদানের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত! আজ্ঞে হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন! ফলে ফের একবার টেলিকম সেক্টরে সংস্থাটি যে নতুন বিপ্লব নিয়ে আসতে চলেছে, সেকথা বলাই বাহুল্য।

গোটা দেশে 5G পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে সবচেয়ে বেশি টাকার স্পেকট্রাম কিনল Jio

উল্লেখ্য যে, প্রায় ৬ বছর আগে জিও ৪জি (4G) নেটওয়ার্ক এনে দেশে রীতিমতো ঝড় তুলেছিল মুকেশ আম্বানির সংস্থা রিলায়েন্স। উত্তরোত্তর ইউজারবেস বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন জিও দেশের শীর্ষস্থানীয় টেলিকম কোম্পানি হয়ে উঠেছে। এখন‌ আবার সদ্য আয়োজিত ৫জি স্পেকট্রামের নিলাম চলাকালীন সবচেয়ে বেশি টাকা খরচ করেছে জিও, যার সুবাদে সংস্থাটি দাবি করছে যে, এই মুহূর্তে তারা গোটা দেশে সাশ্রয়ী মূল্যে ৫জি রোলআউটের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত। উল্লেখ্য, প্রথম দিন থেকেই ৫জি স্পেকট্রামের নিলামে এগিয়ে ছিল রিলায়েন্স জিও, আর সবশেষে সবচেয়ে বেশি টাকা দর হেঁকে বাজিমাত করেছে মুকেশ আম্বানির মালিকানাধীন কোম্পানিটি।

প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, নিলামে ৬০০ মেগাহার্টজ, ৭০০ মেগাহার্টজ, ৮০০ মেগাহার্টজ, ৯০০ মেগাহার্টজ, ১৮০০ মেগাহার্টজ, ২১০০ মেগাহার্টজ, ২৫০০ মেগাহার্টজ, ৩৩০০ মেগাহার্টজ এবং ২৬ গিগাহার্টজের ব্যান্ডগুলির জন্য দর হেঁকেছিল সংস্থাগুলি। তবে ৭০০ মেগাহার্টজের অত্যধিক ব্যয়বহুল স্পেকট্রাম কিনতে গিয়েই জিও বাকিদের তুলনায় অনেক বেশি টাকা খরচ করেছে বলে জানা গিয়েছে। আলোচ্য ব্যান্ডের এয়ারওয়েভ কেনার ফলে জিও-র ৫জি ও ৪জি – উভয় পরিষেবাতেই উন্নতি চোখে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, ২০১৬ ও ২০২১ সালের নিলামে ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের স্পেকট্রাম বিক্রি হয়নি। তবে এবার ২২ টি সার্কেলে মোট ৪০ টি স্পেকট্রাম কিনেছে জিও।

4G-র চাইতে ১০ গুণ বেশি হবে 5G-র স্পিড

জিও-র বিবৃতি অনুযায়ী, উক্ত ব্যান্ডউইথের ফলে একটি টাওয়ার থেকেই ছয় থেকে দশ কিলোমিটার পর্যন্ত সিগন্যাল পৌঁছে যাবে। ফলে খানিকটা দূরত্ব অন্তর একাধিক টাওয়ার স্থাপন করার কোনো প্রয়োজন পড়বে না, যার ফলে খরচও অনেকটাই কমে যাবে। এবং সম্ভবত এই কারণেই গোটা দেশে সবচেয়ে কম দামে পরবর্তী প্রজন্মের নেটওয়ার্ক পরিষেবা দেওয়ার দাবি করছে জিও। সেইসাথে তারা একথাও বলেছে যে, তাদের ৫জি পরিষেবার গতি ৪জি-র থেকে ১০ গুণ বেশি দ্রুত হবে, ফলে ইউজাররা দুরন্ত গতির নেট সার্ভিস উপভোগ করতে সক্ষম হবেন। উল্লেখ্য, ৭০০ মেগাহার্টজের পাশাপাশি সংস্থাটি ৮০০ মেগাহার্টজ, ১৮০০ মেগাহার্টজ, ৩৩০০ মেগাহার্টজ এবং ২৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের স্পেকট্রামও কিনেছে।

২০ বছরের জন্য 5G স্পেকট্রাম কেনার প্রয়োজন হবে না, জানাল Airtel

জিও-র পরেই নিলামপর্বে যে টেলিকম সংস্থাটি সবচেয়ে আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিল, সেটি হল এয়ারটেল। দেশের দ্বিতীয় টেলিকম কোম্পানিটি জানিয়েছে যে, আগামী ২০ বছরের জন্য তাদের ৫জি স্পেকট্রাম কেনার প্রয়োজন হবে না। তবে জিও-র থেকে তারা যে কোনো অংশে পিছিয়ে নেই, সেকথা নিজের বিবৃতিতে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সংস্থার এমডি ও সিইও গোপাল ভিত্তল। তাঁর কথায়, এয়ারটেলই সর্বপ্রথম অত্যাধুনিক ৫জি টেকনোলজির হদিশ পেয়েছে এবং দেশের প্রতিটি কোণায় ৫জি পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে কোম্পানিটি জোরকদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সেইসাথে ভিত্তল আরও বলেছেন যে, কম দামে ৫জি স্পেকট্রাম পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত তিনি; পাশাপাশি তিনি ভবিষ্যতে অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে প্রচুর টাকা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।

নিলাম সম্পর্কিত আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

জিও, এয়ারটেল-এর পাশাপাশি আদানি গ্রুপ (Adani Group) এবং ভোডাফোন আইডিয়া (Vodafone Idea)-ও এই নিলামে অংশগ্রহণ করেছিল। আদানি গ্রুপ ২৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের স্পেকট্রাম কিনেছে, যা প্রাইভেট নেটওয়ার্কের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে। সংস্থাটি গুজরাট, মুম্বাই, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, রাজস্থান এবং অন্ধ্রপ্রদেশে স্পেকট্রাম কিনেছে বলে জানা গিয়েছে। অন্যদিকে, এয়ারটেল এবং ভোডাফোন আইডিয়া ১৮০০ মেগাহার্টজ এবং ৯০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের স্পেকট্রাম নিজেদের ঝুলিতে পুড়েছে। তবে ৬০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের স্পেকট্রাম নিলামের জন্য রাখা হলেও কোনো সংস্থাই সেটির প্রতি আগ্রহ দেখায়নি।