ভারতের প্রথম হাইড্রোজেন চালিত গাড়ির সফল পরীক্ষা হল পুনেতে

ফসিল ফুয়েল অর্থাৎ পেট্রোল-ডিজেলের ভাণ্ডার একদিন হবে নিঃশেষিত। প্রশ্ন উঠতেই পারে, তবে কি পরিবহনের চাকা চিরতরে স্তব্ধ হয়ে যেতে চলেছে? একদমই নয়। ভবিষ্যতের যানবাহনের শক্তির…

ফসিল ফুয়েল অর্থাৎ পেট্রোল-ডিজেলের ভাণ্ডার একদিন হবে নিঃশেষিত। প্রশ্ন উঠতেই পারে, তবে কি পরিবহনের চাকা চিরতরে স্তব্ধ হয়ে যেতে চলেছে? একদমই নয়। ভবিষ্যতের যানবাহনের শক্তির উৎস হিসেবে বিজ্ঞানীরা একাধিক বিকল্পের সন্ধান দিয়েছেন এবং সেগুলি উপযুক্ত প্রয়োগ ও ব্যবহার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণাও চলছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ফুয়েল সেল বা জ্বালানি কোষ। ফুয়েল সেল হচ্ছে এমন একটি তড়িৎ রাসায়নিক কোষ যেখানে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় সরাসরি ডিসি কারেন্ট জেনারেট হয়।

বর্তমানে জাপান, সাউথ কোরিয়া, আমেরিকা এবং জার্মানির মতো দেশগুলিতে হাইড্রোজেন ফুয়েল দ্বারা চালিত বাস এবং গাড়ি দেখতে পাওয়া যায়।

এতো গেল বিদেশ-বিঁভূইয়ের কথা। ভারতে এই ধরনের গাড়ির কনসেপ্ট একটু বিলম্বে এসেছে এবং বর্তমানে কোনও সংস্থাই এখানে হাইড্রোজেন চালিত যানবাহন বিক্রি করে না এটা ঠিকই। তবে মনে হয় না, এদেশের সড়কে হাইড্রোজেন জ্বালানীর গাড়ি প্রত্যক্ষ করার জন্য আমাদের বেশী দিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ শনিবার The Council of Scientific and Industrial Research (CSIR) এবং KPIT Technolgies যৌথ উদ্যোগে পুনের National Chemical Labratory-তে ফুয়েল সেল স্ট্যাকের মাধ্যমে চালিত Hydrogen Fuel Cell (HFC) প্রোটোটোটাইপ (মূল নমুনা বা মডেল) গাড়ির সফল ট্রায়াল পরিচালনা করা হয়েছে।

জানিয়ে রাখি, হাইড্রোজেন গ্যাস দ্বারা চালিত গাড়িগুলি, ইন্টারনাল কম্বাশন ইঞ্জিনে হাইড্রোজেনের দহনের মাধ্যমে অথবা সাধারণভাবে ফুয়েল সেলের মধ্যে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের কেমিক্যাল রিয়্যাকশন ঘটিয়ে হাইড্রোজেনের কেমিক্যাল এনার্জিকে মেকানিক্যাল এনার্জিতে রূপান্তর করে।

সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে ডেভলপ করা এই HFC প্রযুক্তি জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার ছাড়াই হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন (বায়ু থেকে) গ্যাসের মধ্যে ঘটা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে বৈদ্যুতিন শক্তি উৎপাদন করে।

NCL-এর প্রোজেক্ট লিডার হর্ষবর্ধন জানিয়েছেন, “ফসিল ফুয়েলের মাধ্যমে চালিত গাড়িগুলি বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে কার্বন মনোক্সাইড, সালফার-ডাই-অক্সাইডের মতো ক্ষতিকারক গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন করে। সেখানে পরিবেশবান্ধব HFC টেকনোলজি দ্বারা চালিত গাড়িগুলি থেকে বাইপ্রোডাক্ট হিসেলে জল নির্গত হয়।”

সেক্ষেত্রে যানবাহন থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণের মাত্রা হ্রাস করে পরিবেশ দূষণমুক্ত করে তোলা যাবে। এরই সাথে HFC প্রযুক্তির গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির সাথে সাথে পেট্রোল-ডিজেলের ওপর নির্ভরতা কমানোও সম্ভবপর হবে।

ট্রায়ালের জন্য KPIT, বৈদ্যুতিন শক্তি দ্বারা পরিচালিত পাঁচ আসন বিশিষ্ট বিদ্যমান একটি সেডান গাড়িতে সম্পূর্ণ ফুয়েল সেল স্ট্যাক এবং পাওয়ারট্রেনের সাথে সর্ম্পর্কিত কম্পোনেন্টসগুলি লাগিয়েছিল।

ফুয়েল সেল গাড়িতে রাখা হয়েছিল টাইপ থ্রী কমার্শিয়াল হাইড্রজেন ট্যাঙ্ক। এটি ৩৫০ বার প্রেশারে ১.৭৫ কেজি মতন হাইড্রোজেন গ্যাস স্টোর করে রাখতে পারে। ভারতীয় সড়কে ৬০-৬৫ কিমি গতিবেগে চালালে একক ফুয়েল রিফিলিংএ এই গাড়ি ২৫০ কিমি গড়পড়তা চলতে পারবে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এই প্রযুক্তি, যাত্রীবাহী গাড়ির চেয়ে ট্রাক বা বাসের মতো ভারী বাণিজ্যিক যানবাহনের জন্য বেশী উপযুক্ত।

পরিবেশ বান্ধব, স্থায়ীত্ব ও কর্মদক্ষতা বেশী হলেও এই প্রযুক্তি বাণিজ্যিকভাবে উপলভ্য করতে গেলে বেশ কিছু বাধাও আছে। যেমন- হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল উৎপাদন করা বেশ খরচসাপেক্ষ। কারন এর ডিজাইনে ক্যাটালিস্ট হিসেবে প্ল্যাটিনামের মতো উপাদান ব্যবহার হয়। এছাড়াও হাইড্রোজেন উৎপাদন, মজুদ এবং সরবরাহ করাও বেশ কঠিন। অন্যদিকে হাইড্রোজেন ফুয়েল সেলের গাড়ি রিফিলিং করার জন্য বৈদ্যুতিন ও পেট্রোল-ডিজেল গাড়ির মতো যথেষ্ট পরিমানে চার্জিং বা ফুয়েলিং স্টেশনও দরকার। এখন দেখার, বিপুল সম্ভাবনাময় ফুয়েল সেল টেকনোলজি এই সীমাবদ্ধতাগুলি কিভাবে অতিক্রম করতে পারে।