হার্ট অ্যাটাকের আগেই সতর্ক করে যুবকের প্রাণ বাঁচালো Apple Watch, ঘটনা জানলে চমকে উঠবেন

অ্যাপল ওয়াচগুলি (Apple Watch) বর্তমানে রক্ষাকবচ স্বরূপ হয়ে উঠেছে ইউজারদের জন্য। কেননা বিগত কয়েক বছরের মধ্যে ডিভাইসটি একাধিকবার মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য প্রশংসিত হয়েছে এবং…

অ্যাপল ওয়াচগুলি (Apple Watch) বর্তমানে রক্ষাকবচ স্বরূপ হয়ে উঠেছে ইউজারদের জন্য। কেননা বিগত কয়েক বছরের মধ্যে ডিভাইসটি একাধিকবার মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য প্রশংসিত হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। ‘এখনো হচ্ছে’ বলার কারণ, সম্প্রতি মৃত্যুর মুখ থেকে এক যুবককে ফিরিয়ে এনেছে অ্যাপল ওয়াচ ৭ সিরিজ (Apple Watch 7 series)। যদি এই ওয়্যারেবলটি সঠিক সময়ে বারংবার নোটিফিকেশন পাঠিয়ে ইউজারকে সতর্ক না করতো, তাহলে রক্তক্ষরণের কারণে ঘুমের মধ্যেই তিনি মারা যেতেন। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর আকস্মিক এই রক্তক্ষরণের বিষয়টি, যা কিনা পরবর্তীতে হার্ট অ্যাটকের সম্ভাবনাকে ইঙ্গিত করছিল, তা ধরা পড়েছে অ্যাপল ওয়াচটির – হার্ট মনিটরিং সেন্সর, এমার্জেন্সি এসওএস (SOS) এবং ফল ডিটেকশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইন-বিল্ট হেলথ তথা এমার্জেন্সি ফিচারের দৌলতে।

মৃত্যুর মুখ থেকে যুবককে ফিরিয়ে আনলো Apple Watch 7 Series

ডিজিটালমোফো প্রোফাইল নাম সহ এক ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা লিখে সম্প্রতি একটি পোস্ট শেয়ার করেছে রেডিট (Reddit) প্ল্যাটফর্মে। তিনি লিখেছেন – কিছুদিন পূর্বে তিনি ক্লান্ত এবং দুর্বল বোধ করার দরুন কাজের ফাঁকে একটু ঘুমোনোর চেষ্টা করছিলেন। আর ঠিক সেই সময়েই তার হাতে থাকা অ্যাপল ওয়াচ ৭ সিরিজ ওয়্যারেবলটি হাই-পালস রেট শনাক্ত করার কারণে বারংবার তাকে সতর্কতা পাঠায়। কিন্তু যেহেতু তিনি DND মোড অন করে ঘুমোচ্ছিলেন, সেহেতু নোটিফিকেশনের কোনও শব্দ তিনি পাননি। তবে ঘুম থেকে ওঠার পর তিনি স্মার্টওয়াচটি চেক করতে গিয়ে দেখেন যে, ১০টিরও বেশি অ্যালার্ট নোটিফিকেশন তাকে পাঠানো হয়েছে। এমনকি সেই সময়ও নোটিফিকেশন পাঠানো অব্যাহত রেখেছিল ডিভাইসটি।

অত্যাধিক কাজের চাপ নেওয়ার কারণে শরীর খারাপ হচ্ছে এমনটা প্রথমে মনে হলেও, বার বার এরূপ নোটিফিকেশন পেয়ে ব্যক্তিটি ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আর যেমন ভাবা তেমন কাজ, অর্থাৎ তৎক্ষণাৎ তিনি ভিডিও কলিংয়ের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করে নেন। এরপর ডাক্তার ভিডিও কলের মাধ্যমে তাকে পরীক্ষা করেন এবং এই বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নও জিজ্ঞাসা করেন। পাশাপাশি অ্যাপল ওয়াচ প্রদত্ত পালস রেট, ব্লাড অক্সিজেন লেভেল ইত্যাদি তথ্য চেক করেন। শেষে, যাবতীয় শারীরিক লক্ষণ দেখার পর সেই ডাক্তার ৯১১ নম্বরে ফোন করে অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে দেন ব্যক্তিটির কাছে।

এরপর পোস্টদাতাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে ডাক্তাররা বেশ কয়েকটি টেস্ট করানোর পর জানান যে, তার হিমোগ্লোবিন রেট ৩ g/dL -এরও কম। এক্ষেত্রে আপানাদের জানিয়ে রাখি, পুরুষদের জন্য স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন হার ১৩ g/dL বা এর বেশি এবং মহিলাদের জন্য ১৩ g/d বা এর বেশি হওয়া উচিত। আর যদি কোনো ভাবে হিমোগ্লোবিন লেভেল ৫.০ g/dl -এর নিচে নেমে যায়, তবে হার্ট অ্যাটাক বা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। অতএব, অ্যাপল ওয়াচটি যদি সেদিন সঠিক সময়ে নোটিফিকেশন না পাঠাতো তবে সেই ব্যক্তি হয়তো ঘুমের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়তো। কেননা যখন লোকটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল, তখন তার অবস্থা খুবই গুরুতর ছিল।

যাইহোক, প্রাথমিকভাবে চিকিত্সকরা মনে করেছিলেন যে তিনি হয়তো হৃদরোগে আক্রান্ত। কিন্তু টেস্ট করানোর পর জানা যায়, তার ডাইজেস্টিভ ট্র্যাক্ট বা পরিপাক নালীতে রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো। চিকিৎসাশাস্ত্রে এরূপ লক্ষণ জিআই (GI) ব্লিডিং নামে পরিচিত।

আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে, সামান্য একটা স্মার্টওয়াচ কীভাবে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ শনাক্ত করলো? এক্ষেত্রে জানিয়ে রাখি, Apple Watch 7 সিরিজে – ইন-বিল্ট পালস রেট মনিটর আছে, যা পালস রেট ট্র্যাক রাখে। পাশাপাশি, হার্ট মনিটরিং সিস্টেম হৃৎপিণ্ডে অনিয়মিত বিটিং শনাক্ত করতে সক্ষম। আবার SpO2 সেন্সর শরীরের ব্লাড অক্সিজেন লেভেলের উপর নজর রাখে। ফলে এই প্রত্যেকটি হেলথ ফিচার একত্রে কাজ করে এবং শরীরে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখে দিলেই তৎক্ষণাৎ ইউজারকে অ্যালার্ট পাঠিয়ে দেয়। আর যদি ডিভাইসটি ইউজারের শারীরিক পরিস্থিতি গুরুতর মনে করে, তবে এমার্জেন্সি এসওএস ও ফল ডিটেকশনের ফিচার ব্যবহার করে কন্টাক্ট লিস্টে থাকা ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করতেও সক্ষম।