Pan-Aadhaar Update: প্যান ও আধার আপডেট না করলে বন্ধ হয়ে যাবে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট? জেনে নিন

গত কয়েক সপ্তাহে ভারতে ফিশিং এসএমএস জালিয়াতির ঘটনা বহুগুণে বেড়ে গিয়েছে। সারা দেশের অনেক মানুষ এখন ভুয়ো এসএমএস পাচ্ছেন, যেখানে তাদেরকে প্যান (PAN) বা আধার…

গত কয়েক সপ্তাহে ভারতে ফিশিং এসএমএস জালিয়াতির ঘটনা বহুগুণে বেড়ে গিয়েছে। সারা দেশের অনেক মানুষ এখন ভুয়ো এসএমএস পাচ্ছেন, যেখানে তাদেরকে প্যান (PAN) বা আধার (Aadhaar) কার্ড আপডেট করার কথা বলা হচ্ছে, আর অন্যথায় তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে যদিও সাইবার সেল, পুলিশ এবং সিকিউরিটি এক্সপার্টদের অনবরত প্রচেষ্টায় ইদানীংকালে বহু মানুষই সতর্ক হয়ে গিয়েছেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও এখনও অনেকেই হ্যাকারদের ছলাকলায় প্রলুব্ধ হয়ে নিজেদের অজান্তেই সাইবার জালিয়াতির ফাঁদে পা দিয়ে ফেলছেন। হালফিলে শুধু মুম্বাইতেই ৪০ জনেরও বেশি মানুষ তাদের ফোনে পাওয়া ভুয়ো এসএমএসের মধ্যে থাকা লিঙ্কে ক্লিক করার ফলে কয়েক দিনের মধ্যেই লক্ষ লক্ষ টাকা হারিয়েছেন। আবার সম্প্রতি পাওয়া খবর অনুযায়ী, জনপ্রিয় অভিনেত্রী নাগমা মোরারজি (Nagma Morarji)-ও জাল এসএমএসের মাধ্যমে প্রাপ্ত লিঙ্কে ক্লিক করার ফলে খোয়ালেন প্রায় এক লক্ষ টাকা।

ভুয়ো এসএমএসে থাকা লিঙ্কে ক্লিক করে প্রায় এক লক্ষ টাকা খোয়ালেন অভিনেত্রী নাগমা

সংবাদ সংস্থা এএনআই (ANI) জানিয়েছে যে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নাগমা একটি মেসেজ পান, যেখানে বলা ছিল যে, অবিলম্বে প্যান আপডেট (Pan Update) না করলে সন্ধ্যার মধ্যেই তার মোবাইল নেট ব্যাংকিং বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে আচমকাই এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ আসায় তিনি এটিকে ব্যাংকের তরফে পাঠানো জরুরী বিজ্ঞপ্তি বলে মনে করেন; এবং সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল, আপাতদৃষ্টিতে সেটিকে দেখে ব্যাংক থেকে পাঠানো এসএমএস বলেই মনে হচ্ছিল। তাই মোবাইল নেট ব্যাংকিং বন্ধ হয়ে যাবে, একথা ভেবে ভয় পেয়ে গিয়ে তিনি ভুয়ো এসএমএসে থাকা লিঙ্কটিতে অবিলম্বে ক্লিক করে ফেলেন।

রিপোর্ট অনুযায়ী, লিঙ্কে ক্লিক করার পরে নাগমাকে একটি ওয়েবসাইটে রিডাইরেক্ট করা হয়, এবং সেখানে তাকে তার মোবাইলে প্রাপ্ত ওটিপিটি (OTP) এন্টার করতে বলা হয়। ফলে নির্দেশমতো তিনি ওটিপিটি এন্টার করেন, এবং এর কিছুক্ষণ পরেই দেখা যায় যে, তার অ্যাকাউন্ট থেকে ৯৯,৯৯৮ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই এরপর নাগমা একদম নিশ্চিতভাবে বুঝতে পারেন যে, তিনি সাইবার জালিয়াতির শিকার হয়েছেন। তাই অবিলম্বে তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হন। তিনি গোটা ঘটনাটির সম্পর্কে বিশদে উল্লেখ করে মুম্বাই পুলিশের কাছে নিজের অভিযোগ জানিয়ে একটি এফআইআর দায়ের করেন। উল্লেখ্য, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০, ৪১৯ ধারা এবং আইটি আইনের ৬৬সি এবং ৬৬ডি ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে এবং জালিয়াতদেরকে হাতেনাতে ধরতে পুলিশ বর্তমানে জোরকদমে তদন্ত চালাচ্ছে।

গোটা দেশে এসএমএস জালিয়াতির ঘটনা জেটগতিতে বাড়ছে

উল্লেখ্য যে, যদিও এই ধরনের ফিশিং এসএমএস জালিয়াতির ঘটনা নতুন কিছু নয়, তবে গত কয়েক সপ্তাহে মুম্বাই সহ গোটা দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের ঘটনার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। জানিয়ে রাখি, গত সপ্তাহ পর্যন্ত মুম্বই পুলিশ এই ধরনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৭০ টিরও বেশি এফআইআর দায়ের করেছে। তাই নাগরিকদের সুরক্ষার্থে সাইবার সেল এবং মুম্বাই পুলিশ সকলকে কোনোরকম ভুয়ো কল বা এসএমএসের রিপ্লাই না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা স্পষ্টভাবে আপামর জনসাধারণকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, যদি কেউ ভুলবশত অজানা সোর্স থেকে পাওয়া মেসেজে মজুত থাকা লিঙ্কে ক্লিক করেন, তাহলে তাদের সারা জীবনের কষ্টার্জিত টাকা হারানোর সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন থাকা সকল ইউজারদের জন্য একান্ত আবশ্যক।

সাম্প্রতিক এসএমএস জালিয়াতির পিছনে রয়েছে একটি কুখ্যাত গ্যাং

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ইতিমধ্যেই পুলিশ ৩০০ টিরও বেশি সিম কার্ডের সন্ধান পেয়েছে, যার মাধ্যমে এই এসএমএসগুলি পাঠানো হচ্ছে। পুলিশের মতে, এই নতুন কেলেঙ্কারিটির পিছনে একটি বিশেষ গ্যাংয়ের হাত রয়েছে। যদিও গ্যাংটির সদস্য সংখ্যা সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি, তবে পুলিশ অনুমান করছে যে, জাল এসএমএস প্রেরণ করে সহজ-সরল সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করার জন্য তারা ৫,০০০ টিরও বেশি সিম কার্ড ব্যবহার করছে। সেক্ষেত্রে পুলিশ এই গ্যাংটিকে ধরার জন্য বর্তমানে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এরা ধরা পড়ুক কিংবা নাই পড়ুক, সাইবার জালিয়াতির হাত থেকে বাঁচতে হলে সকল ইউজারদের যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা একান্ত আবশ্যক। কারণ নিজেরা সতর্ক না হলে জালিয়াতদেরকে পরাস্ত করা কোনোমতেই সম্ভব নয়।

হ্যাকারদের হাত থেকে বাঁচতে হলে চোখকান খোলা রেখে চলতে হবে

উল্লেখ্য যে, গোটা বিশ্বজুড়ে রোজই নিত্যনতুন উপায়ে সাইবার জালিয়াতির বিভিন্নরকম ঘটনা ঘটছে। আর একজন নামী অভিনেত্রী যেখানে হ্যাকারদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন, তখন স্ক্যামারদের ফাঁদে পা দেওয়াটা তো সহজ-সরল সাধারণ মানুষের পক্ষে খুবই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে চলতি সময়ে হ্যাকারদেরকে আটকানোর যেহেতু কোনো উপায় নেই, তাই সুরক্ষিত থাকতে হলে নিজেদেরকেই যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কখনো কোনো অজানা সোর্স থেকে পাওয়া লিঙ্কে ক্লিক করবেন না, এমনকি কোনো অজানা নম্বর থেকে আসা কল বা এসএমএসের রিপ্লাই দেওয়াও একেবারেই উচিত নয়।

এছাড়া, কোনো অননুমোদিত সাইটে প্রবেশ করাও মোটেই ঠিক কাজ নয়। তদুপরি, অজানা কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কোনো পরিষেবার ওটিপি (OTP) শেয়ার করা থেকেও ইউজারদেরকে সর্বদা বিরত থাকতে হবে। উপরন্তু, যদি কখনো কারোর মনে হয় যে তিনি সাইবার জালিয়াতির শিকার হয়েছেন, তাহলে বিন্দুমাত্রও দেরি না করে তৎক্ষণাৎ সাইবার সেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা একান্ত আবশ্যক। সবসময় মনে রাখতে হবে যে, বর্তমান ডিজিটাল যুগে হ্যাকারদের হাত থেকে সুরক্ষিত থাকতে হলে চোখকান খোলা রাখার পাশাপাশি যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করাই হল এক এবং একমাত্র উপায়।