অ্যাপল ওয়াচ (Apple Watch) আর এখন শুধু স্মার্টওয়াচ হিসেবে জনপ্রিয় নয়। বহুমুখী কার্যকারিতার কারণে এটি অনেকের কাছে ভগবান স্বরুপ। সম্প্রতি এমন আরও একটি ঘটনা সামনে এসেছে। যেখানে ইউজারের শ্বাস-প্রশ্বাসের হারে অসামঞ্জস্যতা সম্পর্কে সচেতন করে তার জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে অ্যাপলের ওয়্যারেবলটি। যার পর ওই ব্যক্তি বলেছেন যে, “অ্যাপল ওয়াচ একটি দুর্দান্ত ডিভাইস, যা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে উপযোগী বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং আমার অভিজ্ঞতা শুনে বন্ধুরাও ওয়্যারেবলটি কিনেছে “
রক্ত জমাট বাঁধার সতর্কতা পাঠিয়ে আবারো এক ইউজারের প্রাণ বাঁচালো Apple Watch
জানা গেছে কুনিহান (Counihan) নামের এক ব্যক্তি, স্লিপ প্যাটার্ন, ওয়ার্কআউট সেশন এবং অন্যান্য দৈনন্দিন অ্যাক্টিভিটিগুলি ট্র্যাক করতে অ্যাপল ওয়াচ কিনেছিলেন। তাই দিনের প্রায় বেশিরভাগ সময়, এমনকি রাতেও ব্যবহার করতেন ওয়াচটি। হঠাৎ একদিন ওয়্যারেবলটি পরে থাকাকালীন তিনি লক্ষ্য করেন যে, রেসপিরেটরি রেট (respiratory rate) অর্থাৎ শ্বাস-প্রশ্বাসের হার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। আপনাদের অবগতের জন্য জানিয়ে রাখি, রেসপিরেটরি রেটের অধীনে একটি মানুষের প্রতি মিনিটে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ এবং ত্যাগের সংখ্যা গণনা করা হয়। আর যদি কোনো কারণ ছাড়াই রেসপিরেটরি রেটে পরিবর্তন দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে কোনো শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।
যাইহোক, কুনিহান বারংবার অ্যালার্ট পেয়ে যখন অ্যাপলের ‘হেলথ অ্যাপ’ ওপেন করেন, সেখানে তার রেসপিরেটরি রেটের ডেটা দেখানো হয়। অ্যাপটিতে ‘হেলথ ট্রেন্ডস’ নামক একটি সেকশন আছে, যেখানে ব্যক্তিটির শ্বাসযন্ত্রের মেট্রিকে পরিবর্তন দেখা যায়।
এই বিষয়ে কুনিহান জানিয়েছেন – “আমি অক্টোবরে প্রথমবার সতর্কতা পেয়েছিলাম যে আমার শ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা বেড়েছে। মূলত একটি মানুষ প্রতি মিনিটে নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে থাকে। আমি প্রতি মিনিটে ১৪ বার শ্বাস নিয়ে থাকি, যা বেড়ে ১৭ বা ১৮ হয়ে গিয়েছিল।” এরপর শ্বাস-প্রশ্বাসে এরূপ অসামঞ্জস্যতা দেখে তিনি সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রী এবং ছেলের সাথে পরামর্শ করেন। পরবর্তীতে একটি হাসপাতালের ‘আউট পেসেন্ট কেয়ার’ বিভাগে চেক আপ করান। যেখানে ডাক্তার তার এক্স-রে করেন এবং ব্রঙ্কাইটিসের জন্য কিছু ওষুধ দিয়ে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন।
কিন্তু বাড়ি এসে ওষুধ খাওয়ার পরও, একই দিনে ব্যক্তিটি আরেকটি অ্যালার্ট মেসেজ পান। যেখানে তার ব্লাড অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ার লক্ষণ ডিটেক্ট করে ওয়াচটি। এরপরে তাকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তার সিটি স্ক্যান করান। যারপর ডাক্তাররা আবিষ্কার করেন যে কুনিহানের সমগ্র ফুসফুসে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। রোগ সনাক্ত করার পর চিকিৎসা করা সহজ হয়ে যায়। ডাক্তাররা তাকে রক্ত পাতলা করার কয়েকটি ওষুধ দেন, যার পর সে সুস্থ বোধ করেন।
কুনিহান অ্যাপল ওয়াচকে তার জীবন বাঁচানোর জন্য সম্পূর্ণ কৃতিত্ব দিয়ে বলেছেন যে – “অ্যাপল ওয়াচ যদি বারবার সতর্কতামূলক মেসেজ না পাঠাতো এবং এই অবস্থায় যদি শুতে চলে যেতাম তাহলে হয়তো ভোরের আলো দেখতে পেতাম না।” ডাক্তাররা জানিয়েছেন এমন শারীরিক উপসর্গ যুক্ত ৬০% মানুষই অসুস্থ বোধ করার কারণে বিছানায় শুতে চলে যান এবং ফলস্বরূপ ঘুমের মধ্যেই তারা প্রাণ হারান। অতএব অ্যাপলের স্মার্ট ওয়্যারেবলটি যদি সঠিক সময়ে রেসপিরেটরি রেট বেড়ে যাওয়ার এবং ব্লাড অক্সিজেনের মাত্রা কমার তথ্য প্রদান না করতো তবে হয়তো ঘুমের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়তেন কুনিহান।