সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কিনছেন? এই বিষয়গুলো ভাল করে না দেখলে পরে কপাল চাপড়াতে হবে

Avatar

Updated on:

Top 5 things to consider before buying a used car

একদিকে যখন কোভিডের ক্ষত সারিয়ে উঠে বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে তখনই আবার রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ যেন সামগ্রিক বিশ্বকেই এক ঘোরতর সংকটের মুখে এনে ফেলেছে। এর প্রভাব সরাসরি এসে পড়েছে ভারতীয় অর্থনীতিতে। ভারতবর্ষ তথা সমগ্র বিশ্বজুড়েই তাই জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে পুরনো গাড়ি কেনার হিড়িক বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত ভাবে। এমনকি অনেক নামজাদা গাড়ি নির্মাতারাও তাদের সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি বিক্রির আলাদা প্লাটফর্ম তৈরি করেছে। এমন হাত ফেরত গাড়ি কেনার প্রবণতার পেছনে যেমন রয়েছে পকেট বাঁচানোর তাগিদা, তেমনই অনেকেই নতুন গাড়ি কেনার আগে সেকেন্ড হ্যান্ড মডেল কিনে হাত পাকাতে তৎপরতা।

আবার যেহেতু অর্থনীতির ভাষায় ব্যবহারযোগ্য এই সমস্ত সামগ্রী “ক্ষয়ীষ্ণু সম্পদ” তাই এই ক্ষেত্রে বেশি টাকা বিনিয়োগ করতে অনেকেই নারাজ। কারণ যাই হোক না কেন নতুন গাড়ি কেনার পুরো প্রক্রিয়া যতটা সহজ কিংবা কম ঝুঁকিপূর্ণ তার সম্পূর্ণ উল্টোটাই হল সেকেন্ড হ্যান্ড মডেল কেনা। এই সময় আপনার কষ্টার্জিত অর্থ বিনিয়োগ করার আগে সমস্ত দিক খুঁটিয়ে পরখ করা উচিত। তাই মাথায় রাখুন নিচের এই বিষয়গুলি।

সহজেই সিদ্ধান্তে না পৌঁছানো

গাড়ি কেনার জন্য আপনার যতই তাড়া থাকুক না কেন হাত ফেরত পুরনো মডেল কেনার আগে অযথা তাড়াহুড়ো না করাই ভালো। এই মুহূর্তে পুরনো গাড়ির বাজারে বিভিন্ন ধরনের মডেল উপলব্ধ রয়েছে। তাই কোনো গাড়ি উপর থেকে দেখে যতই আকর্ষণীয় মনে হোক না কেন তা সবিস্তারে যাচাই করা প্রয়োজন। সব সময় মনে রাখা উচিত চকচক করলেই তা সোনা হয় না। এমনকি গাড়ির ওডোমিটারে যদি কম দূরত্ব চলার ইঙ্গিত থাকে তা সত্ত্বেও দ্রুততার সঙ্গে অন্তিম সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর মত নির্বুদ্ধিতা থেকে বিরত থাকুন।

গাড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষা

যখনই আপনি নির্দিষ্ট একটি পুরনো গাড়ির মডেল কেনার কথা স্থির করবেন তার অন্দরমহল কিংবা বহিরঙ্গ সবকিছুই ভালোভাবে পরোক্ষ করুন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ অর্থাৎ এর ইঞ্জিনটিকেও পরীক্ষা করা প্রয়োজন। গাড়ির সমস্ত পার্টস সম্পর্কে আপনার সম্যক ধারণা থাকলে নিজেই এই সমস্ত বিষয়টি পরখ করতে পারেন, নয়তো বিশ্বস্ত কোনো গাড়ি বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। গাড়ির প্রত্যেকটি অংশের পেইন্ট, বডি প্যানেল, টায়ার, ইঞ্জিনের স্বাস্থ্য, কেবিনের ভেতরের অংশ, স্টিয়ারিং, হুইল অ্যালাইনমেন্ট, সিটের সমস্ত অংশ, ইনফোটেনমেন্ট সিস্টেম, মিউজিক সিস্টেম, এয়ার কন্ডিশনার, ব্রেক এই সমস্ত কিছুই সঠিকভাবে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। এমনকি ইঞ্জিন অয়েল ও ট্রান্সমিশন ওয়েলের অবস্থা ডিপস্টিক এর মাধ্যমে যাচাই করুন।

প্রয়োজনে একাধিকবার টেস্ট ড্রাইভ

নতুন হোক কিংবা পুরনো টেস্ট ড্রাইভ না করে কোনো অবস্থাতেই গাড়ি কেনার কথা স্বপ্নেও ভাববেন না। সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কেনার আগে বিভিন্ন রকম পরিস্থিতিতে সেই গাড়িটি চালিয়ে তার সমস্ত যন্ত্রাংশের কর্মক্ষমতা পরখ করে নেওয়া উচিত। একবারে না হলে পুনরায় টেস্ট ড্রাইভ করুন। দরকার হলে আপনার পরিচিত গাড়ি বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিন। মনে রাখবেন যত বেশি সময় সেই পুরনো গাড়িটির সঙ্গে কাটাতে পারবেন তত তার ভালো ও খারাপ দিকগুলি স্পষ্ট হবে আপনার কাছে।

রক্ষণাবেক্ষণের রেকর্ড যাচাই

পুরনো যে গাড়িটি আপনি কিনতে চলেছেন তার বর্তমান মালিক এতদিন পর্যন্ত গাড়িটির সময়মতো সার্ভিসিং এবং রক্ষণাবেক্ষণ কতটা করেছেন তার প্রমাণ থাকে সার্ভিস বুকে। এমনকি এতে গাড়িটিতে বদলানো কোনো পার্টসের উল্লেখ পর্যন্ত করা থাকে। যদিও অনেক গাড়ি মালিক এই জাতীয় সার্ভিস হিস্ট্রি আলাদাভাবে নথিবদ্ধ করার পক্ষপাতি নয়। তবে গাড়িটির সাথে থাকা কোম্পানির নিজস্ব সার্ভিস মেনুয়াল দেখে নেওয়াটা আপনার কর্তব্য।

রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট দেখে নেওয়া

যে কোনো ধরনের চার চাকা অবশ্যই সরকারিভাবে মোটর ভেহিকেল দপ্তরে নথিভুক্ত থাকে। আর সেজন্যই এই সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য মেলে গাড়ির সঙ্গে থাকা RC অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে। এই কাগজের মধ্যেই গাড়িটির বর্তমান মালিকের নাম, গাড়ির ইঞ্জিন নম্বর, চ্যাসিস নম্বর সমস্ত কিছুই লিপিবদ্ধ থাকে। এমনকি রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটটি আসল কিনা সেটিও দেখে নেওয়া প্রয়োজন। ডুপ্লিকেট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট হলে তার উপরে DRC লেখা থাকবে। এমন ক্ষেত্রে বিক্রেতার কাছ থেকে এই সার্টিফিকেটের বর্তমান অবস্থার কথা ভালোভাবে জানুন। পুরনো গাড়িটি কেনার জন্য সম্পূর্ণ অর্থ হস্তান্তর করার আগে অবশ্যই এই রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে আপনার নাম থাকা বাধ্যতামূলক।

এছাড়াও গাড়িটির সাথে থাকা আসল ইনভয়েস, ইনসিওরেন্স কাগজ, রোড ট্যাক্স রিসিপ্ট এবং পলিউশন সার্টিফিকেট দেখে নিন। মনে রাখবেন গাড়ি কেনার আগে ফর্ম নম্বর ৩৫ এবং নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (NOC) এই দুটি অবশ্যই চেয়ে নেবেন। এছাড়াও পুরনো এই গাড়িটির ইঞ্জিনে কোনো রকম পরিবর্তন কিংবা রঙের পরিবর্তন সমস্ত কিছুই রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে উল্লেখ থাকতে হবে।

সঙ্গে থাকুন ➥