এই চাঁদিফাটা গরমে সাধের গাড়ি যত্নে রাখবেন কীভাবে? এই 5 বিষয়ে সচেতন না হলে মুশকিল

গরম পড়তেই সুয্যি মামার দাপটে নাজেহাল এই দেশবাসী। দিল্লির মৌসম ভবনের সতর্কবার্তা অনুযায়ী আগামী ৪/৫ দিন ভারতের বিভিন্ন অংশে তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা প্রবল। বেগতিক পরিস্থিতি থেকে…

গরম পড়তেই সুয্যি মামার দাপটে নাজেহাল এই দেশবাসী। দিল্লির মৌসম ভবনের সতর্কবার্তা অনুযায়ী আগামী ৪/৫ দিন ভারতের বিভিন্ন অংশে তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা প্রবল। বেগতিক পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে সরকারি তরফে জারি করা হয়েছে নানা ধরনের নির্দেশিকা। এই গরমের দিনে নিজের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আপনার গাড়িটির যত্ন-আত্তির জন্যও কিছু অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এমনিতেই গাড়ির মধ্যে থাকা ইঞ্জিনে প্রতিমুহূর্তে জীবাশ্ম জ্বালানির দহনের ফলে উৎপন্ন হয় তাপ। তার মধ্যে যদি পরিবেশের তাপমাত্রা থাকে ৪০ ডিগ্রির উপরে তবে পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক হতে পারে তা আন্দাজ করা যায়। তাই গাড়ি না বিগড়াতে চাইলে নিম্নলিখিত ৫ পদক্ষেপ নেওয়া অতি প্রয়োজনীয়।

গাড়ির ফ্লুইডের মাত্রা যাচাই করা

যে সমস্ত ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে গাড়ি ব্যবহার করছেন তারা নিশ্চয়ই জানেন এর মধ্যে নানা ধরনের কার্যকলাপ সুষ্ঠুভাবে করার জন্য বেশ কিছু তরল পদার্থ ব্যবহৃত হয়। যেমন ট্রান্সমিশন ফ্লুইড, পাওয়ার স্টিয়ারিং ফ্লুইড, লিকুইড কুলিং ফ্লুইড এবং উইন্ডশিল্ড ওয়াইপার ফ্লুইড। ইঞ্জিনকে ঠান্ডা রাখতে যে লিকুইড কুলিং প্রযুক্তিযুক্ত রেডিয়েটর ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে থাকে বিশেষ ধরনের ক্যুলান্ট। তাই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন প্রখর তাপে ইঞ্জিনের তাপমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এর ভূমিকা কতটা।

এছাড়াও যে ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা হয় সেটিও কিন্তু ইঞ্জিনের ভেতরে ঘর্ষণ বল কমিয়ে আদতে ইঞ্জিনের সামগ্রিক তাপমাত্রাকে খানিকটা নিয়ন্ত্রণে রাখে। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে এই অয়েলের পরিমাণ কমে আসা এবং গুণগতমান নষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাই অবশ্যই এই বিষয়টি নজরে রাখবেন। গরমের দিনগুলিতে ইঞ্জিনের ওভার হিটিং এর কারণেই মূলত গাড়ির ব্রেক ডাউন এর ঘটনা ঘটতে দেখা যায়।

বাতানুকূল যন্ত্রের কার্যকারিতা পরখ করা

গঙ্গা পাড়ের কলকাতা হোক কিংবা যমুনার তীরে থাকা দিল্লি, সর্বত্রই সূর্যের ব্যাটিং স্কোর চল্লিশের উপরেই। এই প্রবল গরমে গাড়ির কেবিনকে ঠান্ডা রাখতে হলে তার এয়ার কন্ডিশনিং যন্ত্রটিকেও সঠিক কাজ বজায় রাখতে হবে। ঘরে ব্যবহৃত বাতানুকূল যন্ত্রের মতই গাড়িতে লাগানো যন্ত্রটিকেও নির্দিষ্ট সময় অন্তর সার্ভিস করার প্রয়োজন। দরকার হলে বদলাতে হবে কেবিন ফিল্টার। বাইরের পরিবেশের তাপমাত্রা যতই হোক না কেন গাড়ির এসি যদি পর্যাপ্ত ঠান্ডা হওয়া প্রদান করতে পারে তবে লং রাইডের মজা উপভোগ করতে বাঁধা কোথায়?

টায়ার প্রেসার দেখে নেওয়া

যে কোনো গাড়িকে রাস্তার সঙ্গে সংযুক্ত রাখতে এবং সাবলীল ভাবে চলাফেরা করতে চাকার সঙ্গে সংযুক্ত টায়ারের ভূমিকা অনেকটা। গরম কিংবা ঠান্ডা আবহাওয়ার সঙ্গেই টায়ারের মধ্যে থাকা বাতাসের চাপের পরিবর্তন হয়। সেই কারণে প্রতি মুহূর্তে গাড়ি নিয়ে বেরোনোর আগে টায়ারে হওয়ার প্রেসার যাচাই করে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। মনে রাখবেন চাকায় কম হওয়া থাকলে তা রাস্তার সঙ্গে অতিরিক্ত ঘর্ষণ বল সৃষ্টি করে বলে অতি দ্রুত ক্ষয় পায়। এমনকি এই পরিস্থিতিতে ইঞ্জিনের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ায় মাইলেজ খানিকটা কমে আসে। আবার প্রবল গরমের দিনগুলিতে রাস্তার পিচের তাপমাত্রা বাতাসের তাপমাত্রার কয়েক গুণ থাকায় তার সরাসরি প্রভাব পড়ে টায়ারের উপর। এই সময় বছরের অন্যান্য দিনগুলির তুলনায় সামান্য কম টায়ার প্রেসার রাখতে পারলে তা আদতে মঙ্গলময়।

ব্যাটারির স্বাস্থ্য পরীক্ষা

আপনার কাছে যত দামি গাড়ি থাকুক না কেন তার ইঞ্জিন চালু করতে ব্যাটারির প্রয়োজন পড়বেই পড়বে। এমনকি গাড়ির মধ্যে থাকা বিভিন্ন রকম বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিকে সচল রাখতেও অনেক সময় দরকার পড়ে এই শক্তি ভান্ডারের। প্রতিনিয়ত ব্যাটারিতে চার্জ বৃদ্ধি এবং হ্রাসের ফলে এমনিতেই এটি খানিকটা গরম অবস্থাতেই থাকে। গ্রীষ্মের দিনগুলিতে এই গরমের পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই অনেকটা বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত গরম কিংবা প্রবল ঠান্ডায় ব্যাটারির মধ্যে থাকা রাসায়নিক পদার্থগুলি সঠিকভাবে কার্যকারিতা বজায় রাখতে পারে না বলেই এর কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়। সেই কারণেই লম্বা ট্রিপে যাওয়ার আগে ব্যাটারির পরিস্থিতির দিকে খানিকটা নজর রাখবেন।

ব্রেকের অবস্থা যাচাই করা

ডিস্ক কিংবা ড্রাম সব ধরনের ব্রেকের মধ্যেই যখন সেটিকে প্রয়োগ করা হয় তখন যথেষ্ট তাপ উৎপন্ন হয়। তাছাড়া জনবহুল রাস্তাতে আমাদের অনেক বেশি করে ব্রেক প্রয়োগ করার দরকার পরে। এর ফলে ব্রেকের উত্তাপ যেমন বাড়তে থাকে তেমনই ক্ষয় পেতে থাকে ব্রেকিং প্যাড। গ্রীষ্ম এবং শীত যে কোনো সময়ই গাড়ির ব্রেকিং সিস্টেম সম্পূর্ণ সঠিকভাবে কার্যকর থাকাটা অনেক বেশি প্রাধান্য পাওয়া উচিত। যদি কোনো কারণে ব্রেকেট থেকে অদ্ভুত শব্দ উৎপন্ন হয় অথবা অনেকটা বেশি চাপ দিয়ে ব্রেক প্রয়োগ করতে হয় তবে অবশ্যই এটি কোনো সমস্যার লক্ষণ। অতি দ্রুত মেকানিকের কাছে এটি দেখানো উচিত।