ট্রাকের পিছনে ‘Horn Ok Please’ লেখা থাকে কেন? 99 শতাংশ মানুষই এর উত্তর জানেন না

আমাদের দেশ ভারতবর্ষে এত বিভিন্ন ধরনের ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা এবং জাতির মানুষ একসঙ্গে বাস করেন যে ভারতকে উপমহাদেশ বলেও আখ্যা দেওয়া হয়। এদেশের এই বৈচিত্রে…

আমাদের দেশ ভারতবর্ষে এত বিভিন্ন ধরনের ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা এবং জাতির মানুষ একসঙ্গে বাস করেন যে ভারতকে উপমহাদেশ বলেও আখ্যা দেওয়া হয়। এদেশের এই বৈচিত্রে নিদর্শন মেলে রাস্তাঘাটেও। কখনও অদ্ভুত দর্শনের গাড়ি তো কখনো বলিউডের জনপ্রিয় হিন্দি গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লরি কিংবা ট্রাকের হর্ন, এই সমস্ত কিছুই দেখতে পাওয়া যায় ভারতের রাস্তায়। তবে তবে যে জিনিসটি সবচেয়ে বেশি নজরে আসে তা হল প্রচুর পরিমাণ ট্রাকের পিছনে বড় বড় করে ইংরেজি হরফে লেখা- “Horn Ok Please”। কখনও ভেবে দেখেছেন এমন লেখার কারণ কি?

ট্রাকের পিছনে ‘হর্ন ওকে প্লিজ’ লেখা থাকে কেন

“Horn Ok Please” এই তিনটি শব্দের সরলীকরণ করলে বোঝা যায় যে লরির পেছনে থাকা গাড়িটিকে হর্ন বাজাতে বলা হচ্ছে। সাধারণত বড় আকারের লরিগুলি চেহারায় এতটাই বড় হয় যে তার চারপাশের ব্লাইন্ড স্পট থেকে অনেকটাই বেশি। অর্থাৎ লরির একদম পিছনে থাকা ছোট গাড়ি কিংবা মোটরসাইকেলকে কোনো ভাবেই লরির ড্রাইভারের আসনে বসে দেখা সম্ভব নয়। তাছাড়াও বেশিরভাগ লরিগুলিতেই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সাইড মিরর কিংবা সাইড ইন্ডিকেটরের মতো অতি প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি কার্যত নষ্ট অবস্থায় পড়ে থাকে। এই কারণেই পিছনের থেকে কোনো গাড়ি যখন এমন বড় ট্রাককে অতিক্রম করতে চায় তখন যাতে অবশ্যই হর্ন বাজিয়ে ট্রাকের ড্রাইভারকে সতর্ক করা হয় সেই উদ্দেশ্যেই এমন লেখা থাকে।

“OK” লেখা কেন?

এবার নিশ্চয়ই প্রশ্ন করবেন তবে তো “Horn Please” লিখলেই প্রয়োজন মিটতো। “OK” লেখার দরকার কী? এই প্রশ্নের কিন্তু অনেকেই বিভিন্নভাবে দিয়েছেন। এক তথ্যসূত্র অনুযায়ী দাবি করা হচ্ছে যে অনেক সময় কেবলমাত্র “Horn Please” শব্দটি লেখা থাকলে দূর থেকে পিছনের ড্রাইভারের তা নজরে নাও আসতে পারে। সেই জন্যই মাঝখানে বড় হরফে “OK” শব্দটি যোগ করা হয়েছে।

অন্য এক দাবি অনুযায়ী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সারা বিশ্বজুড়ে যখন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের হাহাকার চলছে তখন মাত্রাতিরিক্তভাবে ডিজেলের চাহিদা বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত ডিজেলের অভাবে অনেক ট্রাকের মধ্যেই কেরোসিন ভরেই কাজ চালানো হতো। এই সমস্ত ট্রাকগুলির পিছনে “OK” অর্থাৎ “অন কেরোসিন” লিখে পিছনের ড্রাইভারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হতো, যাতে তারা ট্রাক-গুলির থেকে সুরক্ষিত দূরত্ব বজায় রাখেন। সেই থেকেই এই শব্দটি লেখার চল শুরু হয়েছে।

এছাড়াও রয়েছে আরও এক তথ্য। সেখানে দাবি করা হয়েছে যে একটা সময় পর্যন্ত ট্রাকের বাজারে টাটা মোটরসের একচেটিয়া আধিপত্য বজায় ছিল। এদিকে টাটার অধীনস্থ এক সংস্থা টাটা অয়েল মিলস। তাদের তৈরি জনপ্রিয় সুগন্ধি সাবানের নাম হল “OK”। এই সাবানটির বিজ্ঞাপন টাটার তৈরি ট্রাকগুলোর পিছনে দেওয়ার জন্যই এই “OK” শব্দটি লেখা হতো। মূলত এই তিনটে কারণ রয়েছে এমন লেখার পিছনে।

মহারাষ্ট্রে নিষিদ্ধ

দেশের বিভিন্ন ট্রাকগুলির পিছনে লেখা এই তিনটি শব্দ এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে বিভিন্ন সময় সিনেমা কিংবা গানের মধ্যেও এই ঘটনার ছোঁয়া দেখতে পাওয়া গেছে। যদিও ২০১৫ সালে মহারাষ্ট্র সরকার তাদের রাজ্যে চলা ট্রাকগুলির পিছনে “Horn Ok Please” কথাটি লেখার এই ধারাকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তাদের যুক্তি এর ফলে অযাচিতভাবে অতিরিক্ত হর্নের ব্যবহারে শব্দ দূষণ বাড়ছে প্রবল ভাবে। মহারাষ্ট্রের মধ্যে তাই “Horn Ok Please” লেখা ট্রাক কম দেখতে পাওয়া গেলেও অসমুদ্র হিমাচল কিন্তু মেতে এই সাংস্কৃতিক ধারাতেই। তবে এমন শব্দবন্ধ লেখার যৌক্তিকতা রয়েছে কিনা তা অবশ্যই তর্ক সাপেক্ষ।