গ্রাহকদের চাহিদা অনুসারে এখন বহু স্মার্টফোন নির্মাতা ব্র্যান্ড শক্তিশালী ব্যাটারি ও চার্জিং ক্যাপাসিটির সাথে হ্যান্ডসেট লঞ্চ করছে। কিন্তু ব্যাটারি যতই শক্তিশালী হোক না কেন, যদি কখনো তাতে চার্জ দিতেই ভুলে যান তবে কত ঘন্টা সেই ফোন সচল থাকবে? বেশি হলে ৩-৪ ঘন্টা! এক্ষেত্রে হ্যান্ডসেট সচল রাখতে চার্জার খুঁজে তা চার্জে বসাতে হবে। নয়তো পাওয়ার ব্যাঙ্কের উপর ভরসা করতে হবে। কিন্তু সেটাকেও তো আবার সময়ে সময়ে চার্জড করে রাখা চাই। অতএব ঝামেলার শেষ নেই! আর স্মার্টফোন দামী হোক বা সস্তা সেটায় চার্জ না থাকলে তা খেলনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
এক্ষেত্রে আমরা যদি বলি এমন একটা ব্যাটারি আছে যা স্মার্টফোনে ব্যবহার করা হলে দীর্ঘ ৫০ বছর চার্জিংয়ের ঝামেলাই পোহাতে হবে না তাহলে? না না মস্করা করছি না। বেজিং ভিত্তিক স্টার্টআপ টেক সংস্থা ‘বেটাভোল্ট’ (Betavolt) হালফিলে এমনই একটি নিউক্লিয়ার বা পরমাণু ব্যাটারি ডেভেলপ করেছে যা অতীব শক্তিশালী। এক বার চার্জ দিলেই ফোন চলবে টানা ৫০ বছর। তবে ‘নিউক্লিয়ার’ -এর নাম শুনে আবার ভয় পাবেন না যেন। এই ব্যাটারি দেখতে আর পাঁচটা সাধারণ ফোনে ব্যবহৃত ব্যাটারির মতোই, যদিও আকারে বেশখানিকটা ছোট হবে। তবে এতে পারমাণবিক শক্তি থাকায় এর পাওয়ার ধারণ ক্ষমতা সাধারণ ব্যাটারির থেকে কয়েক হাজার গুন বেশি হবে।
এবিষয়ে বেটাভোল্ট সংস্থার দাবি, এটি বিশ্বের প্রথম ব্যাটারি যার মধ্যে পারমাণবিক শক্তির ক্ষুদ্রকরণ উপস্থিত রয়েছে। এই পারমাণবিক ব্যাটারি মোট ৬৩টি আইসোটোপ (isotopes) -কে একত্রিত করে নির্মিত। এক্ষেত্রে এই ব্যাটারিতে ব্যবহৃত প্রযুক্তি আইসোটোপের মাধ্যমে উৎপন্ন শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করতে সক্ষম। ব্যাটারিটি দেখতে অনেকটা মাইক্রোচিপের মতো এবং আকারে একটি ১ টাকার কয়েনের সমান।
প্রসঙ্গত জানা যাচ্ছে, বেটাভোল্ট তাদের এই নয়া এই উদ্ভাবনটি স্মার্টফোন সহ অন্যান্য ডিভাইসে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য ব্যাপক উৎপাদনের টার্গেট নিয়েছে। আর এই উদ্দেশ্য পূরণের জন্য স্টার্টআপটি ইতিমধ্যেই এই পারমাণবিক ব্যাটারির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সফলতার সাথে সম্পন্ন করেছে। এক্ষেত্রে পরীক্ষার ফলাফল সামনে রেখে বেটাভোল্ট দাবি করেছে যে, ব্যাটারিটি -৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১২০-ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা পরিসরের মধ্যে কাজ করতে পারবে। আর এই কারণেই – “বিটাভোল্ট অ্যাটম এনার্জি ব্যাটারি – মহাকাশ চর্চার সরঞ্জাম, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, চিকিৎসা বিজ্ঞান, মাইক্রোপ্রসেসর, উন্নত সেন্সর, ছোট ড্রোন এবং মাইক্রো-রোবটের দীর্ঘস্থায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহের চাহিদা মেটাতে ব্যবহার করা যাবে” বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি৷
জানা গেছে, ব্যাটারি ক্যাপাসিটি সম্পূর্ণরূপে ক্ষয় হয়ে গেলে এর মধ্যে থাকা ৬৩টি আইসোটোপ, একটি তামার স্থিতিশীল ও অ-তেজস্ক্রিয় আইসোটোপে রূপান্তরিত হবে। যা পরিবেশ-বান্ধব হবে এবং কার্বন ফুটপ্রিন্ট হিসাব বিবেচিত হবে না।
বেটাভোল্ট নিউক্লিয়ার ব্যাটারির পরিমাপ কিরকম?
বেটাভোল্ট বিকশিত নিউক্লিয়ার বা অ্যাটম এনার্জি ব্যাটারির পরিমাপ হল ১৫x১৫x৫ মিমি। এই ব্যাটারিটি বর্তমানে ৩ ভোল্টের বিনিময়ে ১০০ মাইক্রোওয়াট শক্তি উৎপন্ন করে। তবে ২০২৫ সালের মধ্যে ১ ওয়াটের পাওয়ার আউটপুট অর্জন করবে বলে দাবি করেছে সংস্থার কর্তৃপক্ষ।