EAST: আসল সূর্যের থেকেও পাঁচগুণ শক্তিশালী, কৃত্রিম সূর্যের পরীক্ষায় সফল চীন

চীনের বানানো একটি অত্যাশ্চর্য নিউক্লিয়ার ফিউশন রিঅ্যাকটর ডিভাইস, যা সাম্প্রতিক এক পরীক্ষায় সূর্যের চেয়েও পাঁচ গুণ বেশি তাপমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে Advertisement চীন সাম্প্রতিক…

চীনের বানানো একটি অত্যাশ্চর্য নিউক্লিয়ার ফিউশন রিঅ্যাকটর ডিভাইস, যা সাম্প্রতিক এক পরীক্ষায় সূর্যের চেয়েও পাঁচ গুণ বেশি তাপমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে

চীন সাম্প্রতিক কালে এক ধরনের “কৃত্রিম সূর্য” আবিষ্কার সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে, যার নাম এক্সপেরিয়েনশিয়াল অ্যাডভান্সড সুপারকন্ডাক্টিং টোকামাক (EAST)। এটি ভবিষ্যতে বিশুদ্ধ শক্তির আধার হিসেবে কাজ করবে। এই ডিভাইস সেটআপটি হল চীনের বানানো একটি অত্যাশ্চর্য নিউক্লিয়ার ফিউশন রিঅ্যাকটর ডিভাইস, যা সাম্প্রতিক এক পরীক্ষায় সূর্যের চেয়েও পাঁচ গুণ বেশি তাপমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই অর্জিত ৭০ মিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাটি প্রায় ২০ মিনিট পর্যন্ত বহাল ছিল। এই ডিভাইসটি পারমাণবিক ফিউশনের শক্তি ব্যবহার করে, যার ব্যবহার সচরাচর খুবই কম দেখা যায়।

যারা অবগত নন তাদের জানিয়ে রাখি, ফিউশন প্রক্রিয়ায় দুটি হালকা নিউক্লিয়াস একত্রিত হয়ে একটি ততোধিক ভারী নিউক্লিয়াস গঠন করে এবং শক্তি নির্গত করে। মূলত সূর্যে এ ধরনের বিক্রিয়া ঘটিয়ে শক্তি উৎপন্ন হয়। তাই এ ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করলে সেটাকে ‘কৃত্রিম সূর্য’ বলা হয়ে থাকে। সবচেয়ে আশার কথা যেটা তা হল এই ধরনের পরীক্ষানীরিক্ষা গুলি বিজ্ঞানীদের ক্রমশ “অপরিমেয় বিশুদ্ধ শক্তির” লক্ষ্য পূরণের কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছে।

তবে, এই ধরনের ঘটনা কিন্তু চীনেই প্রথম ঘটলো এমনটা নয়। এর আগেও ২০২০ সালে কোরিয়ান সুপার কন্ডাকটিং টোকামাক অ্যাডভান্সড রিসার্চ সেন্টার (কেস্টার) এর তরফে এক পরীক্ষামূলক পদ্ধতিতে প্রায় ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উৎপাদন করা সম্ভবপর হয়। এই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত ধরে রাখতেও সক্ষম হয় ওই প্রতিষ্ঠানটি।

ফসিল ফুয়েল ও কয়লাকেন্দ্রিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো প্রচুর পরিমাণে পরিবেশ দূষণ ঘটানোয়, চীন ও কোরিয়ার মতোই বিশ্বের নানা দেশ ফিউশন প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনে তৎপর হয়েছে। ফ্রান্সের মারসেলেতে রয়েছে ফিউশন প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় রিঅ্যাকটর ইন্টারন্যাশনাল থার্মোনিউক্লিয়ার এক্সপেরিমেন্টাল রিঅ্যাকটর। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যও নিজস্ব ফিউশন রিঅ্যাকটর বানানোর কাজ শুরু করছে।

তবে, এই সংক্রান্ত সর্বশেষ পরীক্ষাটি হয়েছে চীনের পূর্বাঞ্চলীয় আনহুই প্রদেশের হেফেই ইনস্টিটিউট অফ ফিজিক্যাল সায়েন্স বিভাগে। গং জিয়ানজু, (Gong Xianzu), EAST পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, এই বিষয়ে মন্তব্য করেন, “সাম্প্রতিক অপারেশনটি ফিউশন চুল্লি চালানোর জন্য একটি শক্তপোক্ত বৈজ্ঞানিক এবং পরীক্ষামূলক ভিত্তি স্থাপন করে দিয়েছে।”

এখানকার, ইনস্টিটিউট অফ প্লাজমা ফিজিক্সের পরিচালক সং ইউনতাও (Song Yuntao) এই বিষয়ে যথেষ্ট আশাবাদী। তিনি জানান, “এখন থেকে পাঁচ বছর পর, আমরা আমাদের ফিউশন চুল্লি তৈরি করতে শুরু করব, যার নির্মাণের জন্য আরও ১০ বছর মতো সময় লাগবে।” এ বিষয়ে তার দৃঢ় বিশ্বাস, ২০৪০ সালের মধ্যেই পাওয়ার জেনারেটর তৈরি করা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে।