চীনা গেম না হওয়া সত্ত্বেও কেন ব্যান Garena Free Fire, জেনে নিন কারণ

গত ১২ ফেব্রুয়ারি আকস্মিকভাবে Google Play Store থেকে গায়েব হয়ে গেছে বহুল জনপ্রিয় Garena Free Fire (গ্যারেনা ফ্রি ফায়ার) মোবাইল গেমটি। যদিও তখন অপসারণের কারণ হিসেবে…

গত ১২ ফেব্রুয়ারি আকস্মিকভাবে Google Play Store থেকে গায়েব হয়ে গেছে বহুল জনপ্রিয় Garena Free Fire (গ্যারেনা ফ্রি ফায়ার) মোবাইল গেমটি। যদিও তখন অপসারণের কারণ হিসেবে নিশ্চিতভাবে কিছু না জানা গেলেও, মার্কেটে গুজব রটেছিল যে এটি ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ অবশেষে এই গুজবটি কঠোর বাস্তব সত্যিতে পরিণত হল!

আসলে বিগত প্রায় দু-বছরে কয়েকশোর বেশি চীনা অ্যাপ্লিকেশন ব্যান করার পর এবার আবারও দেশের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার খাতিরে ৫৪ টি অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে ভারত সরকার, যার মধ্যে অন্যতম একটি জনপ্রিয় ব্যাটেল রয়্যাল গেমও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বলে জানা গেছে, যার নাম গ্যারেনা ফ্রি ফায়ার। এর পরেই সরকারের নির্দেশ মেনে প্লে স্টোর থেকে গ্যারেনা ফ্রি ফায়ার অ্যাপ সরিয়ে নিয়েছে গুগল। তবে মজার ব্যাপার হল, সরকার গেমটির দ্বিতীয় ভার্সনটি কিন্তু নিষিদ্ধ করেনি, যা Garena Free Fire Max নামে পরিচিত। এটি এখনও গুগল প্লে স্টোরে ডাউনলোডের জন্য উপলব্ধ। উল্লেখ্য যে, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতে PUBG-র দুটি ভার্সন নিষিদ্ধ করার পরে ফ্রি ফায়ার ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

সম্প্রতি নিষিদ্ধ হওয়া চীনা অ্যাপগুলি সম্পর্কে এক বিবৃতিতে সরকার উল্লেখ করেছে যে, দেশের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার সাথে কোনোরকম আপোষ করা হবে না, সেজন্যই এই অ্যাপগুলিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই অ্যাপ্লিকেশনগুলি বিভিন্ন অনৈতিক তথা সমালোচনামূলক অনুমতি গ্রহণ করে, এবং ব্যবহারকারীদের সংবেদনশীল তথ্য সংগ্রহ করে। এই সংগৃহীত রিয়েল-টাইম ডেটাগুলির অপব্যবহার করা হচ্ছে এবং প্রতিকূল দেশে অবস্থিত সার্ভারগুলিতে প্রেরণ করা হচ্ছে।

সরকার আরও জানিয়েছে যে, নিষিদ্ধ কিছু অ্যাপ ক্যামেরার মাধ্যমে গুপ্তচরবৃত্তি এবং নজরদারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। পূর্বে নিষিদ্ধ হওয়া অ্যাপগুলির মতো এগুলিও মাইক, লোকেশন (GPS) অ্যাক্সেস করা, এবং ম্যালিশিয়াস নেটওয়ার্ক অ্যাক্টিভিটির সাথে জড়িত রয়েছে। সরকারের মতে, ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা, ভারতের প্রতিরক্ষা, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং জনসাধারণের শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে ক্ষতিকর – এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার জন্য এই অ্যাপগুলিকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কিন্ত Garena Free Fire তো কোনো চীনা অ্যাপ নয়! তাহলে কেন এটিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে? সম্প্রতি এই প্রশ্ন তুলেছে ফ্রি ফায়ারের ডেভেলপার এবং পাবলিশার, সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক সংস্থা Garena (গ্যারেনা)। যদিও ভারত সরকারের তরফ থেকে এই প্রশ্নের এখনও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নিষেধাজ্ঞার পিছনের কারণ হতে পারে চীনের সঙ্গে গেমটির যোগসূত্র। এখন আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন যে গ্যারেনা তো সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক একটি সংস্থা, তবে কীসের যোগসূত্র? আসলে Tencent নামক একটি চীনা গোষ্ঠীর গ্যারেনায় প্রায় ১৮.৭ শতাংশ অংশীদারিত্ব রয়েছে বলে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, Tencent-এর সাথে জড়িত থাকার জন্য দেশের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত উদ্বেগের কারণে এর আগে PUBG Mobile-কেও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এর পরে, PUBG কর্পোরেশনের একটি সহায়ক সংস্থা Krafton গেমটিতে বেশ কিছু পরিবর্তন করে, এবং সেইসাথে পরবর্তীকালে আর যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য সমস্ত আটঘাঁট বেঁধে Battlegrounds Mobile India নামে ভারতে গেমটি পুনরায় চালু করে।

এদিকে গ্যারেনার মূল সংস্থা, Sea Ltd (সি লিমিটেড)-এর প্রতিষ্ঠাতা ফরেস্ট লি চিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তবে তিনি এখন সিঙ্গাপুরের নাগরিক, এবং সংস্থাটি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে যে, চীনের সাথে তাদের আর কোনো সম্পর্ক নেই। সংস্থাটি একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, “Sea সিঙ্গাপুরের একটি কোম্পানি এবং আমরা ভারতের ডিজিটাল ইকোনমি মিশনের অংশীদার হওয়ার লক্ষ্য রাখি। আমরা ভারত সহ বিশ্বব্যাপী আমাদের সকল ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা ভারতীয় আইন ও প্রবিধান যথাযথভাবে মেনে চলি, এবং আমরা চিনে আমাদের ভারতীয় ব্যবহারকারীদের কোনো ডেটা ট্রান্সফার বা স্টোর করি না।”

উল্লেখ্য যে, Garena Free Fire-এর গোপনীয়তা নীতি বা প্রাইভেসি পলিসিতেও একথা স্পষ্টভাবে বলা আছে। নীতি অনুযায়ী, গেমটি ভারতীয় ব্যবহারকারীদের কোনো ডেটা শেয়ার কিংবা প্রসেস করে না। এই ডেটাগুলি ভারত বা সিঙ্গাপুরে কোম্পানির সার্ভারে স্টোর করা হয়। Garena শুধুমাত্র গোপনীয়তা আইন অনুযায়ী এবং ব্যবহারকারীদের সম্মতি সাপেক্ষে বিদেশে তাদের তথ্য ট্রান্সফার করবে। তবে নির্দিষ্টভাবে এই গেমটি ব্যান হওয়া সম্পর্কে যেহেতু ভারত সরকারের তরফে কোনো সুনিশ্চিত বিবৃতি পাওয়া যায়নি, তাই Garena Free Fire নিষিদ্ধ হওয়ার সঠিক কারণ জানতে আমাদের আনুষ্ঠানিক সরকারি বিবৃতি পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।