ভবিষ্যতে বাইক ও স্কুটারের ইঞ্জিনকে সচল রাখবে হাইড্রোজেন, এর সুফল ও সমস্যাগুলি জেনে নিন
পরিবেশবান্ধব যানবাহনের মধ্যে বর্তমানে প্রাধান্যের অগ্রভাগে রয়েছে বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি। কিন্তু সমগ্র বিশ্বের একদল বিশেষজ্ঞের মতে পরিবেশ দূষণ রোধে কেবলমাত্র বৈদ্যুতিক যানবাহন এক ও অদ্বিতীয় নয়। এর চাইতেও উৎকৃষ্ট উপায় আমাদের প্রকৃতিতেই বর্তমান। তাঁরা মনে করেন অচিরাচরিত শক্তিগুলির মধ্যে অন্যতম হাইড্রোজেনকে ব্যাপকভাবে কাজে লাগিয়ে একটি পুরোদস্তুর পরিবেশের পক্ষে সহায়ক যান ছোটানো যায়। পারমাণবিক বোমায় মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত এই হাইড্রোজেনের ক্ষমতা ধ্বংসাত্মক হলেও, একে কাজে লাগিয়ে একটি গাড়ির ইঞ্জিনকে ছোটানো সম্ভব।
গত মাসে টেসলার (Tesla) প্রতিদ্বন্দ্বী আমেরিকান সংস্থা ট্রাইটন (Triton) ভারতে হাইড্রোজেন চালিত স্কুটার আনতে চলেছে বলে ঘোষণা করেছে। এগুলি তারা দেশের মাটিতেই তৈরি করবে বলে জানিয়েছে। যেখানে হাইড্রোজেন জ্বালানির ব্যবহার এখনও পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বেই নবজাতক হিসেবে রয়েছে, সে জায়গা থেকে ট্রাইটনের এই পদক্ষেপ বাহবা পাওয়ার দাবি রাখে। আবার সম্প্রতি দেশীয় টু-হুইলার নির্মাতা TVS এর হাইড্রোজেন স্কুটারের পেটেন্ট নথি ফাঁস হয়েছে। ফলে হাইড্রোজেন জ্বালানির হিসাবে যে ক্রমে গুরুত্ব পাচ্ছে, তা স্পষ্ট। কিন্তু হাইড্রোজেন দ্বারা একটি মোটরসাইকেল বা স্কুটার চালালে যেমন একাধিক সুফল মিলবে, পাশাপাশি রয়েছে বেশ কিছু সমস্যা। এই প্রতিবেদনে হাইড্রোজেনকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে সবিস্তারে আলোচনা করা হল।
হাইড্রোজেন চালিত যানবাহনের সুবিধা
সহজলভ্য
বর্তমানে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারির অন্যতম উপাদান লিথিয়াম আয়ন প্রকৃতিতে খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য হলেও, হাইড্রোজেন কিন্তু প্রায় সব দেশেই সহজলভ্য। বর্তমানে এর লভ্যতা পরিসীমাহীন। আবার পেট্রোল ডিজেলের মত হাইড্রোজেনের উপর সরকারের কোনো কঠোর নিয়ম আরোপ নেই।
পরিষ্কার
হাইড্রোজেন দহনের পর অবশিষ্টাংশ হিসেবে জল এবং সামান্য তাপ উৎপন্ন হয়। কারণ হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের দহনের ফলে তৈরি হয় জল। সে কারণে এটি অতি কার্যকর। এছাড়া গাড়িতে হাইড্রোজেন জ্বালানি সংরক্ষণ সহজ। পাম্প থেকে জ্বালানি ভরাতেও একদম অল্প সময় লাগে। যেখানে বৈদ্যুতিক ব্যাটারি চার্জ হতে কমপক্ষে কয়েক ঘন্টা লেগে যায়।
একাধিক উপায় তৈরি করা যায়
ইলেক্ট্রোলাইসিস পদ্ধতিতে, স্টিম মিথেন পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে হাইড্রোজেনের বিযুক্তকরণ, এমনকি কয়লা পুড়িয়েও হাইড্রোজেন উৎপাদন করা যায়। তবে কয়লা পুড়িয়ে হাইড্রোজেন উৎপাদনকে নিকৃষ্টতম উপায় হিসেবে ধরা হয়। কারণ এতে পরিবেশের দূষণের মাত্রা বাড়ে। এছাড়া ফুয়েল স্টেশনে হাইড্রোজেনের উৎপাদন সম্ভব।
হাইড্রোজেন চালিত যানবাহনের অসুবিধা
হাইড্রোজেনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও, বর্তমানে হাইড্রোজেন চালিত যানবাহনের সংখ্যা অতি নগণ্য। কারণ, হাইড্রোজেন উৎপাদন করতে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন। এবং উৎপাদিত হাইড্রোজেন সঞ্চয় করে রাখা বেশ কঠিন। সে কারণে সরকারের থেকে সহায়তায় ঘাটতি নজরে পড়ে।
অন্যদিকে সমগ্র বিশ্বে বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার দ্রুতহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈদ্যুতিক চার্জিং স্টেশন তৈরির জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারের থেকে ভর্তুকিও পাওয়া যাচ্ছে। আবার হাইড্রোজেন উৎপাদনের চাইতে একটি ব্যাটারির নির্মাণ সহজ। হাইড্রোজেনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল স্টোরেজ। অত্যাধিক উদ্বায়ী ধর্মী হওয়ার কারণে অতি নিরাপদভাবে উচ্চচাপে এগুলিকে সংরক্ষণ করতে হয়। তার থেকেও বড় সমস্যা এই গ্যাস ভরার পাম্পিং স্টেশনের অভাব।