টুইটার ছেড়ে Mastodon ব্যবহার করতে শুরু করেছেন সেলিব্রেটি থেকে সাধারণ মানুষ, চিন্তায় ইলন মাস্ক
Twitter নিয়ে এখন গোটা বিশ্বজুড়ে তুমুল শোরগোল চলছে। সম্প্রতি এই মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্মটি কেনার পর Tesla-র সিইও ইলন মাস্ক (Elon Musk) এর ভোল বদলের চেষ্টায় অনেক পরিবর্তন এনেছেন, যার জেরে অনেকেই হালফিলে এই অ্যাপটির প্রতি আকর্ষণ সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেলেছেন। অনেকেই বর্তমানে Twitter-এর হাত ছেড়ে দিয়েছেন, এবং এই তালিকায় আমজনতার পাশাপাশি ইলন মাস্কের প্রাক্তন বান্ধবী অ্যাম্বার হার্ড (Amber Heard), গ্রে'স অ্যানাটমি (Grey's Anatomy)-র প্রযোজক শোন্ডা রিমস (Shonda Rhimes), সুপারমডেল গিদি হাদিদ (Gidi Hadid) এবং সারা বরেলিস (Sara Bareilles)-এর মতো নামিদামি সেলিব্রিটির নামও শামিল রয়েছে। আর একজনকে ত্যাগ করলে তো অন্য আর-একজনের হাত ধরতেই হয়; সেক্ষেত্রে খুব স্বাভাবিকভাবেই Twitter-কে দূরে সরিয়ে এখন অনেকেই এরই অনুরূপ অন্য একটি অ্যাপ ব্যবহারে মজেছেন, এবং এর সুবাদে ইদানীংকালে টেক দুনিয়ায় ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়েছে মাস্টোডন (Mastodon)। আজ্ঞে হ্যাঁ! বর্তমানে Twitter-এর হাত ছেড়ে আমআদমির পাশাপাশি প্রখ্যাত তারকারাও এই অ্যাপটি ব্যবহারে আগ্রহী হয়েছেন। তবে এমন অনেকেই আছেন যারা এখনও পর্যন্ত এই অ্যাপটির নামও শোনেননি। তাই চলুন, Mastodon সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
Mastodon কী?
ম্যাস্টোডন হল জার্মানির একটি ওপেন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। অ্যাপটির প্রতিষ্ঠাতা ইউজেন রোচকো (Eugen Rochko) দাবি করেছেন যে, বর্তমানে এই প্ল্যাটফর্মটির এক মিলিয়নেরও বেশি মাসিক সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে। এর মধ্যে ৪,৮৯,০০০ জনেরও বেশি ইউজার ২৭ অক্টোবরের পর প্ল্যাটফর্মটিতে যোগদান করেছেন। ম্যাস্টোডন টুইটারের অনুরূপ একটি অ্যাপ, যেখানে অ্যাকাউন্ট হোল্ডাররা নিজেদের পোস্টগুলি লিখতে পারেন (যাকে "টুটস" বলা হয়), পাশাপাশি অন্যের করা টুটসগুলির রিপ্লাই দিতে এবং সেগুলিকে লাইক করতে পারেন; এবং সেইসাথে অন্যের করা টুটসকে রিপোস্ট করে একে অপরকে ফলো করারও সুযোগ রয়েছে ইউজারদের কাছে।
তবে ম্যাস্টোডন এবং টুইটারের মধ্যে মূল পার্থক্য হল অ্যাপ দুটির কার্যপদ্ধতি। এই মুহূর্তে টুইটার ইলন মাস্কের মালিকানাধীন, এবং তার নির্দেশেই অ্যাপটির যাবতীয় কার্যকলাপ সঞ্চালিত হয়। অন্যদিকে, ম্যাস্টোডনে বেশ কয়েকটি ক্যাটাগরির পাশাপাশি বিভিন্ন ভাষায় রয়েছে একাধিক সার্ভার। স্ব-অর্থায়নে পরিচালিত প্রতিটি সার্ভার কোনো ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যান্ডার্ড মেনে চলতে বাধ্য নয়, কারণ ছয় বছর বয়সী এই প্ল্যাটফর্মটির একমাত্র কর্মচারী হলেন রোচকো। ফলে ইউজাররা কোনো বাধানিষেধ এবং কড়া নিয়মাবলী ছাড়াই এই অ্যাপটি অতি অনায়াসে ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন। এছাড়া, কোনো সার্ভার ব্যবহার করার সময় ব্যবহারকারীরা দেখতে পাবেন যে আর কতজন ওই সার্ভারটি ব্যবহার করছেন। উপরন্তু, কেউ চাইলে সেটিংসে গিয়ে সার্ভার পরিবর্তনও করতে পারবেন।
কীভাবে Mastodon-এ লগ ইন করবেন?
১. প্রথমে নিজের ফোনে ম্যাস্টোডন অ্যাপটি ইনস্টল করুন।
২. ‘গেট স্টার্টের্ড’ (Get Started) অপশনে ক্লিক করুন।
৩. এরপর আপনাকে যে-কোনো একটি সার্ভার বেছে নিতে হবে।
৪. এরপর নিজের একটি আইডি তৈরি করুন এবং পাসওয়ার্ড দিন।
৫. এরপর নিজের মেইল আইডি দিয়ে অ্যাকাউন্টটি ভেরিফাই করা হয়ে গেলেই ইউজাররা এই অ্যাপ ব্যবহার করা শুরু করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, এর জন্য ব্যবহারকারীর বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে।
এক্ষেত্রে বলে রাখি, ম্যাস্টোডনে জয়েন করতে হলে আপনাকে প্রথম একটি থিমভিত্তিক সার্ভার বেছে নিতে হবে। এক্ষেত্রে থিমটি কোনো শহর, প্রযুক্তি এবং গেমিংয়ের মতো যে-কোনো বিষয় সম্পর্কিত হতে পারে। আর আগেই বলেছি যে, আপনি এই প্ল্যাটফর্মে অন্যান্য সমস্ত সার্ভার ব্যবহারকারীদের ফলোও করতে পারবেন।
Mastodon-এ অন্যান্য ইউজারদেরকে খুঁজে পেতে চাইলে কী করতে হবে?
এক্ষেত্রে বলি, আপনি যে সার্ভারটিকে বেছে নেবেন, সেটি আপনার ইউজারনেমের একটি অংশ হয়ে যাবে। সুতরাং, কারোর নাম যদি XYZ হয় এবং তিনি যদি ইউকে (UK) সার্ভারটি বেছে নেন, তবে ইউজারনেমটি হবে @xyz@mastodonapp.uk। আপনি যদি মাস্টোডনে কাউকে খুঁজে পেতে চান, তবে তার পুরো নামটি টাইপ করুন। সেক্ষেত্রে আপনি যদি সেই ব্যক্তির মতো একই সার্ভারে বিদ্যমান থাকেন, তবে কেবলমাত্র নামটি টাইপ করলেই আপনি তাকে অতি অনায়াসে খুঁজে পেয়ে যেতে সক্ষম হবেন। অর্থাৎ, আপনিও যদি ইউকে সার্ভার চুজ করেন, তাহলে XYZ টাইপ করলেই আপনি উপরিউক্ত ব্যক্তিটিকে খুঁজে পেয়ে যাবেন।
Mastodon-কে উপহাস করেছেন ইলন মাস্ক
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, চলতি সময়ে অনেকেই যে Twitter-এর হাত ছেড়ে Mastodon-এর দ্বারস্থ হচ্ছেন, সেকথা ইতিমধ্যেই ইলন মাস্কের কানে পৌঁছে গিয়েছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনাটিকে ভালো চোখে দেখেননি বিশ্বের সবচেয়ে ধনবান এই ব্যক্তি, আর সেজন্য তিনি একাধিক টুইট করে Mastodon সম্পর্কে নানা ব্যাঙ্গাত্মক কথা বলে প্ল্যাটফর্মটিকে যাচ্ছেতাইভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন। তবে এক রিপোর্টে একথাও বলা হয়েছে যে, টুইটগুলি করার পরমুহূর্তেই সেগুলিকে ডিলিট করে দিয়েছেন Twitter-এর নয়া কর্ণধার। সেক্ষেত্রে এবার ছেড়ে যাওয়া ইউজারদেরকে ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের সংখ্যা আরও বহুগুণে বাড়াতে আগামী দিনে ইলন মাস্ক কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবেন কি না, সেটা একমাত্র সময়ই বলতে পারবে।