পার্ট টাইম জবের নামে WhatsApp-এ আন্তর্জাতিক নম্বর থেকে কল বা মেসেজ পাচ্ছেন? ভুলেও উত্তর দেবেন না
গত কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল স্ক্যামিং বা প্রতারণার ঘটনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যেকারণে টেলিকম অপারেটরগুলিকে সম্প্রতি AI ফিল্টার স্প্যাম ফিচার চালু করার নির্দেশ দিয়েছে ‘টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ বা ট্রাই (TRAI)। যাতে টেলিকম পরিষেবা গ্রহণকারীরা অযাচিত তথা স্প্যাম কল এবং এসএমএসের হাত থেকে মুক্তি পান। যদিও এই পদক্ষেপ স্ক্যামারদের বেআইনি কাজ করা থেকে রুখতে পুরোপুরি সফল হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।
কারণ প্রতারকরা এখন ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম 'হোয়াটসঅ্যাপ' (WhatsApp) -এর ব্যবহারকারীদের টার্গেট করা শুরু করেছে। সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে WhatsApp ব্যবহারকারীরা অভিযোগ করছেন যে, তারা অপরিচিত আন্তর্জাতিক নম্বর থেকে দিনে একাধিকবার অবাঞ্ছিত ভিডিও এবং ভয়েস কল পাচ্ছেন। মূলত হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের ঘরে বসে শুধুমাত্র ইউটিউব ভিডিও লাইক করে টাকা রোজগারের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে চাইছে স্ক্যামাররা। এই প্রতিবেদনে আমরা হোয়াটসঅ্যাপ ইন্টারন্যাশনাল কল স্ক্যাম সম্পর্কে যা যা জানতে পেরেছি তা আপনাদের সাথে আলোচনা করবো
আন্তর্জাতিক নম্বর থেকে অবাঞ্চিত ভয়েস ও ভিডিও কল পাচ্ছেন একাধিক WhatsApp ব্যবহারকারী
স্ক্যামাররা বর্তমানে মানুষ ঠকানোর আরেকটি নতুন উপায় খুঁজে পেয়েছে। হালফিলে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী আন্তর্জাতিক নম্বর থেকে ভয়েস এবং ভিডিও কল পাচ্ছে। এই আন্তর্জাতিক নম্বরগুলির কান্ট্রি কোড হল - +৮৪ (ভিয়েতনামের কান্ট্রি কোড), +৬২ (ইন্দোনেশিয়ার কান্ট্রি কোড), এবং +২২৩ (মালির কান্ট্রি কোড)। এই আন্তর্জাতিক কলগুলির বেশিরভাগই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি থেকে পরিচালনা করা হচ্ছে বলে অনুমান সাইবার বিশ্লেষকদের।
এক্ষেত্রে স্ক্যামাররা প্রকৃতপক্ষে আলোচ্য দেশগুলির বাসিন্দা নাকি শুধুমাত্র দেশগুলির কান্ট্রি কোড যুক্ত সিম কার্ড ব্যবহার করছে সেই সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি ৷ রিপোর্টে দাবি করা হচ্ছে যে, স্ক্যামাররা হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট সক্রিয় করতে এবং ভিক্টিমদের অনলাইন মোডে স্প্যাম কল করার জন্য 'ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রোটোকল' (VoIP) নম্বর কিনছে। এই বিষয়ে V4WEB সাইবার সিকিউরিটি সংস্থার ফাউন্ডিং ডিরেক্টর রিতেশ ভাটিয়া (Ritesh Bhatia) বলেছেন যে, "এই ধরনের নম্বর কেনার প্রক্রিয়া খুবই সহজ এবং যে কেউ এইভাবে অন্য দেশের সিম কিনতে পারেন৷"
এই ধরনের প্রতারণার ঘটনা অনেক কাল আগের থেকেই ঘটেছে, কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এসে তা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম Entrackr -এর কর্মকর্তা কুল ভূষণ (Kul Bhushan) নিজ অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেছেন যে, তিনি গত মাসে হোয়াটসঅ্যাপে তিনটি আন্তর্জাতিক কল পেয়েছিলেন এবং প্রতিদিন এইধরণের স্ক্যামিং কলের পরিমাণ বাড়তেই থাকছে। এছাড়া টুইটারে পোস্ট করে একাধিক মানুষ অনুরূপ সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে।
এমনকি টেকগাপ টিমের সদস্যও হোয়াটসঅ্যাপে আন্তর্জাতিক নম্বর থেকে একাধিকবার স্ক্যাম কল পেয়েছেন৷ যার মধ্যে একটি ভয়েস কল ইন্দোনেশিয়া থেকে করা হয়েছিল। তাই আমাদের পরামর্শ, এরূপ বাইরের দেশের কান্ট্রি কোড যুক্ত নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস বা ভিডিও কল এলে ভুলেও রিসিভ করবেন না। কারণ এইগুলি হল 'ফ্রড' কল, যা আপনাকে প্রতারণার জালে জড়াবে।
হোয়াটসঅ্যাপের এক মুখপাত্র Entrackr-কে দেওয়া একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন - “আমাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারী ও তাদের ডেটা নিরাপদ রাখতে বিগত কয়েক বছর ধরে ক্রমাগতভাবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি সহ অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, ডেটা সায়েন্টিস্ট তথা বিশেষজ্ঞ এবং এই সংক্রান্ত প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ করে যাচ্ছে।" এই মন্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, হয়তো খুব তাড়াতাড়ি 'ইন্টারন্যাশনাল স্ক্যামিং কল' প্রতারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে মেটা-অধীনস্ত প্ল্যাটফর্মটি।
হোয়াটসঅ্যাপ ইন্টারন্যাশনাল কল স্ক্যাম কীভাবে কাজ করে? (how WhatsApp International Call Scam work?)
শ্রেয়াংশ জৈন (Shreyansh Jain) নামের এক টুইটার ব্যবহারকারীর পোস্ট থেকে জানা গেছে, তিনিও সম্প্রতি আন্তর্জাতিক নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পেয়েছেন। ভিয়েতনামের কলার আইডি থেকে আসা কলের ওপ্রান্তে থাকা ব্যক্তিটি এইচআর প্রিসিলা ব্যারেট (HR Priscilla Barret) হিসাবে নিজের পরিচিতি দেন। স্ক্যামার, শ্রেয়াংশ -কে বাড়ি বসে সহজে টাকা রোজগার করার জন্য কাজের প্রস্তাব দেন। কাজ হিসেবে ইউটিউবে (YouTube) ভিডিও লাইক করতে হবে এবং প্রতিটি লাইকের জন্য ৫০ টাকা করে পেমেন্ট দেওয়া হবে। এই কাজ করলে প্রতিদিন ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারবেন বলেও প্রলোভন দেখানো হয়েছিল ভিক্টিমকে।
এক্ষেত্রে, স্ক্যামাররা ইউটিউব ভিডিও লাইক করানোর নামে ভিক্টিমকে এমন একটি অ্যাপ ইনস্টল করতে বলবে যা ম্যালওয়্যার দ্বারা সংক্রামিত। অথবা একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে যুক্ত হতে বলবে, যেখানে তারা আপনাকে স্টক এবং ক্রিপ্টো কারেন্টইতে কিছু পরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করতে বলবে। উভয় পন্থার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও ব্যাঙ্কিং ডেটা হস্তগত করা সম্ভব। আর একবার যদি কেউ এই ধরনের স্ক্যামের ফাঁদে পা দেয়, ৫০ টাকা রোজগারের লোভে লক্ষাধিক টাকার লোকসান হতে পারে।