মাত্র ৮ বছর বয়েসেই পাকা হ্যাকার! ডার্ক ওয়েব থেকে AK-47 অর্ডার করে খবরে পশ্চিমা শিশু
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে আমাদের রোজনামচার সাথে কম্পিউটার-স্মার্টফোনের মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইস এবং ইন্টারনেট যেভাবে জড়িয়ে পড়েছে তাতে করে জীবনের মানোন্নয়ন হয়েছে বটে, কিন্তু এদের কিছু নেতিবাচক দিক বারবার বিপদ ডেকে আনছে। যেমন এখন বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও ফোন, কম্পিউটার স্ক্রিনে অনেক সময় ব্যয় করছে। একইসাথে শৈশব-কৈশোরে থাবা বসিয়েছে ইন্টারনেটও, যার ফলে খেলা, পড়া বা অন্যান্য সৃজনশীলতার দিকে ঝোঁকার বদলে অন্তর্জালে পতঙ্গের মতো আকৃষ্ট হয়ে যথেচ্ছাচার চালাচ্ছে খুদেরা। কিন্তু ইন্টারনেট অ্যাক্সেস যে তাদের জন্য কতটা বিপজ্জনক, তা হালফিলে আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল। হ্যাঁ, এবার এমন একটি নতুন চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এসেছে, যার কথা জানলে আপনি ভয় পেতে বাধ্য! আসলে অতিসম্প্রতি নেদারল্যান্ডে বসবাসকারী বারবারা জেমেন নামের এক মহিলা, তাঁর মাত্র ৮ বছর বয়েসী ছেলে কীভাবে সাইবার অপরাধের জগতে জড়িয়ে গেছে, সেকথা সর্বসমক্ষে প্রকাশ করেছেন। ওই মহিলার মতে, ছেলেটি এত অল্প বয়সে হ্যাকিংয়ে হাত পাকিয়েছে এবং পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে সে গোপনে AK-27 রাইফেলসহ আরও কিছু অবৈধ ও বিপজ্জনক আইটেম ডার্ক ওয়েব থেকে অর্ডার করেছে।
মাত্র ৮ বছর বয়েসে ডার্ক ওয়েবের সাথে যুক্ত হয়েছে নেদারল্যান্ডের শিশু
পশ্চিমা দেশগুলি বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকার জন্যই বরাবর সমাদৃত হয়। সেক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডের এই 'অগ্রগতির' ঘটনাটি একইসাথে বিস্ময় এবং ভয়ের উদ্রেক করতে পারে। জানিয়ে রাখি, পেশায় মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ বারবারা নামের ওই মহিলা সংবাদ সংস্থা ইউরোনিউজের সাথে পুরো বিষয়টি শেয়ার করেছেন। বারবারা বলেছেন যে, তাঁর ছেলে খুব অল্প বয়স থেকেই হ্যাকিং শুরু করে এবং সে টাকা ছাড়াই মানে ফ্রি-তে অনলাইনে জিনিস অর্ডার করত। প্রথম প্রথম ছেলেটি পিজ্জার মতো ছোট জিনিস বিনামূল্যে কেনার চেষ্টা করত, কিন্তু ধীরে ধীরে সে হাতের বাইরে বেরিয়ে ডার্ক ওয়েবে পৌঁছে যায়। ডার্ক ওয়েব, ইন্টারনেটের সেই অংশ যেখানে বেআইনি কার্যকলাপ হয় এবং অস্ত্র বা মাদকের মতো অবৈধ জিনিস পাওয়া যায়।
অনলাইন গেমের মাধ্যমে হ্যাকারদের সাহায্য করত ওই শিশু
এক্ষেত্রে বারবারার ৮ বছর বয়সী ছেলে অনলাইন গেমের খেলার নামে হ্যাকার এবং অন্যান্য সাইবার অপরাধীদের সাথে যুক্ত ছিল এবং তাদের অবৈধ অর্থ লেনদেনে সহায়তা করত বলে জানা গিয়েছে। এমনকি ইন্টারনেটে সবার থেকে এই গর্হিত কাজ লুকানোর জন্য সে বিশেষ কোড ওয়ার্ড বা সেনটেন্স ব্যবহার করত। বারবারা এই গোটা বিষয়টির ভয়াবহতা বুঝতে পেরেছিলেন যখন একটি অবৈধভাবে অর্ডার করা একে৪৭ (AK-47) অটো রাইফেল পোল্যান্ড থেকে বুলগেরিয়া হয়ে তাঁর বাড়িতে আসে। এই অ্যাসল্ট রাইফেলটি ছেলে অর্ডার করেছে জেনে তিনি অত্যন্ত হতবাক হয়ে যান বটে, তবে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় পুলিশের কাছে রাইফেলটি হস্তান্তর করে। কিন্তু তাঁর ছেলের বয়স কম হওয়ায়, তার বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বারবারার মতে, রাইফেল সংক্রান্ত এই পুরো ঘটনার পর তাঁর ছোট্ট 'হ্যাকার' ছেলে মানসিক চাপে থাকতে শুরু করে এবং সারা রাত জেগে হ্যাকারদের আন্তর্জাতিক গ্রুপের সাথে কাজ শুরু করে। কিন্তু এবার সজাগ হয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন ওই মহিলা। আইনি সহায়তা না পেয়ে, তিনি সাইবার সিকিউরিটি সম্পর্কে ছেলেকে শিক্ষা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং এখন তিনি ডাচ পুলিশের সাথে সাইবার স্পেশাল ভলেন্টিয়ার হিসেবেও কাজ করছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি অন্যান্য অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে বলেছেন, কারণ শিশুদের সঠিক-ভুল বা আইন-অবৈধ ইত্যাদি বিষয় বোঝার ক্ষমতা নেই। অতএব আপনার বাড়িতেও যদি কোনো খুদে থাকে এবং সে ডিজিটাল লাইফে বেশি ব্যস্ত থাকে, তাহলে একটু সতর্ক হন। এতে আরও নানা শারীরিক এবং বৌদ্ধিক ক্ষতি হতে পারে।