ভেবে চিন্তে ব্যবহার করুন WhatsApp, ডিসেম্বরে ব্যান করা হল ৩৬ লক্ষের বেশি অ্যাকাউন্ট

২০২২ সালের ডিসেম্বরে ভারতে ৩৬ লক্ষেরও বেশি অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করেছে Meta মালিকানাধীন ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম WhatsApp। এর মধ্যে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে কোনো অভিযোগ কোম্পানির কাছে পৌঁছোনোর আগেই ১,৩৮৯,০০০ টি অ্যাকাউন্টকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সংস্থার তরফে সম্প্রতি প্রকাশিত সেফটি রিপোর্ট থেকে জানা গেছে যে, নতুন আইটি রুলস ২০২১-এর আওতায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, বিগত প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে একাধিকবার জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও অসৎ কার্যকলাপ (ইন্টারনেটের অপব্যবহার কিংবা ক্ষতিকারক বা অবাঞ্ছিত তথা স্প্যাম মেসেজ প্রেরণ) করা থেকে কিছু ইউজারদেরকে কোনোমতেই আটকানো যাচ্ছে না। ফলে WhatsApp-ও ক্রমেই কঠোর থেকে কঠোরতর হচ্ছে, এবং প্ল্যাটফর্মে অনৈতিক আচরণের জন্য সংস্থাটি প্রতি মাসে লক্ষাধিক ইউজারের অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করে চলেছে। সেক্ষেত্রে আগামী দিনে একেবারে নির্বিঘ্নে এই অ্যাপ ব্যবহার করা চালিয়ে যেতে হলে সকলের অবিলম্বে সতর্ক হয়ে যাওয়া খুবই জরুরি।

নিরাপত্তার খাতিরে গত ডিসেম্বরে ৩৬ লক্ষেরও বেশি ভারতীয় অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করলো WhatsApp

মেটা মালিকানাধীন কোম্পানিটি জানিয়েছে যে, তারা ১ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মোট ৩৬,৭৭,০০০ টি হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করেছে। এই ৩৬ লক্ষেরও বেশি অ্যাকাউন্টের মধ্যে ১,৩৮৯,০০০ টি অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে কোনো রিপোর্ট পাওয়ার আগেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। হোয়াটসঅ্যাপের তরফে প্রকাশিত মাসিক কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপটি ভারতীয় ব্যবহারকারীদের থেকে মোট ১৬০৭ টি অভিযোগ পেয়েছে। এর মধ্যে ১৪৫৯ টি নিষেধাজ্ঞার আবেদন থাকলেও হোয়াটসঅ্যাপ মাত্র ১৬৪ টির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। উল্লেখ্য, সুরক্ষা সম্পর্কিত বিষয়েও সংস্থার কাছে ১৩ টি রিপোর্ট এসেছে, তবে এগুলির বিরুদ্ধে কোম্পানিটি বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলেই জানা গিয়েছে৷

প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, ২০২১ সালে কার্যকর হওয়া নতুন তথ্য প্রযুক্তি আইন অনুসারে, প্রতি মাসে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট প্রকাশ করা, প্রাপ্ত অভিযোগের বিবরণ এবং গৃহীত পদক্ষেপের বিবরণ উল্লেখ করা বড়ো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলির (পাঁচ মিলিয়নেরও বেশি ব্যবহারকারী) জন্য বাধ্যতামূলক। সেক্ষেত্রে যদিও প্রথম দিকে এই কাজ করতে প্রচুর টালবাহানা করেছিল মেটা মালিকানাধীন সংস্থাটি, তবে অবশেষে সরকারের নির্দেশ মেনে তারা এই ধরনের মাসিক রিপোর্ট প্রকাশ করতে শুরু করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। ফলে প্ল্যাটফর্মটির মারফত কোনো অসৎ কার্যকলাপ করলে ভবিষ্যতেও যে নিশ্চিতভাবে লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট ব্যান করা হবে, সেকথা নিঃসন্দেহে বলাই বাহুল্য।

ব্যবহারকারীদেরকে সুরক্ষিত রাখতে প্রতিনিয়ত অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে WhatsApp

অ্যাকাউন্ট ব্যান তথা ইউজারদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, এই এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড মেসেজিং পরিষেবা প্রদানকারী প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা এবং গোপনীয়তাকে যথেষ্ট অগ্রাধিকার দেওয়াই হল সংস্থাটির মূল লক্ষ্য। তাই বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি সহ অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, ডেটা সায়েন্টিস্ট তথা বিশেষজ্ঞ, এবং এই সংক্রান্ত প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ করে চলেছে হোয়াটসঅ্যাপ। এছাড়া, কোনো অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে বারংবার রিপোর্ট বা ব্লকিং জাতীয় প্রতিক্রিয়া এলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপও নিয়ে থাকে কোম্পানির সিকিউরিটি রিসার্চার টিম। অর্থাৎ মোদ্দা কথা হল, এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইউজারদেরকে যাতে কোনোরকম সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়, সেদিকে কড়া নজর রেখেছে সংস্থাটি। তাই যদি কেউ অযথা অসৎ কার্যকলাপ করে কোম্পানি কর্তৃক প্রদত্ত শর্তাবলী লঙ্ঘন করার চেষ্টা করে, তাহলে তা কোনোমতেই বরদাস্ত করবে না হোয়াটসঅ্যাপ। ফলে একথা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, অ্যাপটির অপব্যবহার করলে ইউজারদের কঠোর সাজার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় নেই।

ভারতে কোনো ম্যালিশিয়াস WhatsApp অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে কীভাবে অভিযোগ দায়ের করবেন?

যদি কেউ আপনার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে খারাপ আচরণ বা ব্যবহার করে থাকে, তাহলে আপনি তাদের বিরুদ্ধে সংস্থার কাছে রিপোর্ট করতে পারেন। বলে রাখি, কোনো ম্যালিশিয়াস অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে হলে ইউজারদেরকে ক্রমান্বয়ে হোয়াটসঅ্যাপের সেটিংস (Settings) > হেল্প (Help) > কন্ট্যাক্ট আস (Contact Us) অপশনগুলিতে ট্যাপ করতে হবে। আবার, আপনি যদি সরাসরি আপনার অভিযোগ গ্রিভান্স অফিসারের কাছে পৌঁছে দিতে চান, তাহলে আপনি ইমেইলও করতে পারেন। সেক্ষেত্রে কী কারণে আপনি সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টটির বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ সহ আপনার নাম, কান্ট্রি কোড সমেত ফোন নম্বর, ইত্যাদি প্রয়োজনীয় ইনফর্মেশন মেইলে উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া, একটি চিঠির মারফত নিজের অভিযোগ নীচের ঠিকানায় পোস্ট করেও এই কাজটি সেরে ফেলতে পারবেন ইউজাররা:

Siddhartha Nahar
Attention: Grievance Officer
WhatsApp, LLC
Unit B8 and B10
The Executive Center
Level 18, DLF Cyber City, Building No. 5, Tower A, Phase III
Gurgaon – 122002
India