সম্পর্ক ভাঙ্গার পরেও বান্ধবীকে Apple AirTag-এর মাধ্যমে ট্র্যাক! হাজতে দিন কাটাচ্ছেন প্রাক্তন

বর্তমান ডিজিটাল যুগের বাসিন্দারা কমবেশি সকলেই Apple (অ্যাপল)-এর AirTag (এয়ারট্যাগ)-এর কথা শুনেছেন। এটি একটি ট্র্যাকিং ডিভাইস যা মূলত অন্য কোনো ডিভাইসকে ট্র্যাক করার জন্য ব্যবহৃত হয়। ফলে হারিয়ে যাওয়া বা চুরি যাওয়া কোনো জিনিস খুঁজে পেতে চাইলে Apple-এর এই ছোট্ট ইলেকট্রনিক গ্যাজেটটির মারফত খুব সহজেই সেই কাজ করা সম্ভব। তবে বর্তমান সময়ে এই কার্যকর জিনিসটির অধিকমাত্রায় অপব্যবহার করা হচ্ছে। অনেকেই এখন পরিচিত কারো ওপর নজর রাখতেও Apple-এর এই ট্র্যাকিং ডিভাইসটিকে ব্যবহার করছে। এর আগে এই ধরনের ঘটনার আমরা বহুবার শুনেছি, তবে হালফিলে এই তালিকায় নয়া সংযোজন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এমনিতে সম্পর্ক ভাঙলে মানুষ কত কিছুই না করে। সেক্ষেত্রে সম্প্রতি জানা গিয়েছে যে, Apple-এর AirTag মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের (UK) এক বাসিন্দা তার প্রাক্তন প্রেমিকার উপর নজর রাখতেন। তবে শেষমেশ ধরা পড়ে যাওয়ায় তাকে নয় সপ্তাহের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

Amazon থেকে AirTag কিনে প্রাক্তন বান্ধবীর ওপর নজর রাখতেন ওই ব্যক্তি

ডেইলি মেইল পাবলিকেশন (Daily Mail publication)-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ক্রিস্টোফার পল ট্রটম্যান (Christopher Paul Trotman) নামের ৪১ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি তার প্রাক্তন বান্ধবীকে দীর্ঘদিন ধরে ক্রমাগত ফোন কল করে বিরক্ত করছিলেন। কিন্তু অপরপ্রান্ত থেকে আশানুরূপ কোনো প্রতিক্রিয়া না মেলায় অবশেষে তিনি অ্যামাজন (Amazon) থেকে একটি এয়ারট্যাগ অর্ডার করেন। প্রাক্তন বান্ধবীর সমস্ত গতিবিধির ওপর যাতে সর্বক্ষণ নজর রাখা যায়, তার জন্য ক্রিস্টোফার ওই মহিলার গাড়িতে এয়ারট্যাগটিকে লাগিয়ে দেন। আর এর পর থেকেই এক রোমাঞ্চকর তথা চাঞ্চল্যকর ঘটনার সূত্রপাত হয়।

প্রাক্তন প্রেমিকের কারসাজি বুঝতেই পারেননি ক্রিস্টোফারের বান্ধবী

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, ক্রিস্টোফার পল ট্রটম্যান প্রায় ১০ বছর ধরে ওই মহিলার সাথে “কন্ট্রোলিং” রিলেশনশিপে ছিলেন। অর্থাৎ এখান থেকে খুব স্পষ্টভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে, দুজনের মধ্যে সম্পর্ক মোটেই ভালো ছিল না। তবে ২০২০ সালের আগস্টে তাদের সম্পর্কের ইতি ঘটে। এরপর ২০২২ সালের মার্চ মাসে নতুন আইফোন (iPhone) কেনেন ক্রিস্টোফারের বান্ধবী, আর কেনার পরেই তিনি একটি নতুন এয়ারট্যাগ নোটিফিকেশন পান। প্রাথমিকভাবে ওই মহিলা এয়ারট্যাগের সঙ্গে তার ফোনটিকে কানেক্ট করার অনুরোধটিকে উপেক্ষা করেছিলেন। কিন্তু তিনি বিন্দুমাত্রও আঁচ করতে পারেননি যে, তার প্রাক্তন প্রেমিক তার ওপর নজরদারি চালাচ্ছে।

প্রাক্তন বান্ধবীর মেয়ের জন্যই ধরা পড়ে অভিযুক্ত

মানে, সম্পর্কের ইতি ঘটলেও এক মুহূর্তের জন্যও প্রাক্তন বান্ধবীর পিছু ছাড়েননি ক্রিস্টোফার। তিনি সবসময় তার বান্ধবীর নাইটআউট এবং পার্টি সম্পর্কে সমস্ত খবরাখবর রাখতেন। তবে এসব কিছুই জানা যেত না যদি না ক্রিস্টোফারের প্রাক্তন বান্ধবীর মেয়ে আসল ঘটনাটির উপর থেকে পর্দা সরাতেন। আসলে ওই বান্ধবীর মেয়েই এয়ারট্যাগ নোটিফিকেশনটি পেয়ে অনেক খোঁজাখুঁজির পর আবিষ্কার করেন যে, তাদের গাড়ির পিছনের বাম্পারে ওই ট্র্যাকিং ডিভাইসটিকে ইন্সটল করা রয়েছে। এরপর তৎক্ষণাৎ তারা পুলিশের কাছে গিয়ে নিজেদের অভিযোগ দায়ের করেন এবং তার ভিত্তিতে এয়ারট্যাগ ব্যবহার করেই পুলিশ অভিযুক্ত ট্রটম্যানকে খুঁজে বের করে। 

অবশেষে সাজা পেতেই হল ট্রটম্যানকে

তবে শুরুতেই কিন্তু অভিযুক্তকে জামিনে মুক্তি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কারণ ধরা পড়া মাত্রই ট্রটম্যান জানান যে, এটা নিছকই একটা রসিকতা ছিল। যেহেতু তিনি এখনও তার প্রাক্তন বান্ধবীকে ভালোবাসেন, সেই কারণেই তিনি তাকে ট্র্যাক করছিলেন। ফলে নিজের অপরাধ স্বীকার করে নেওয়ায় পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জামিনে মুক্তি দেয়। কিন্তু এরপর সাক্ষীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় তাকে পুনরায় গ্রেফতার করা হয় এবং সাজা হিসেবে ট্রটম্যানকে নয় সপ্তাহের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে আদালত।