Electric Scooter দুই প্রকার, আপনার জন্য উপযুক্ত কোনটা? সুবিধা কিসে বেশি?

পেট্রোল ও ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির জন্য সাধারণ মানুষের নাজেহাল অবস্থা। এর সাথে রয়েছে পরিবেশ দূষণের অভিশাপ। তাই মানুষ এখন এর বিকল্প খুঁজতে বাধ্য করেছে। এমনই পরিস্থিতিতে আশার আলো দেখাচ্ছে ব্যাটারি চালিত স্কুটার। গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থাগুলি বর্তমানে দেশীয় প্রযুক্তিতে ইলেকট্রিক স্কুটার বানানোর দিকে বিশেষভাবে নজর দিয়েছে। বাজারে ইলেকট্রিক গাড়ির চাহিদা এখন তুঙ্গে। একদম প্রথম দিকে কম গতি সম্পন্ন ক্ষুদ্র অথচ দক্ষ বৈদ্যুতিক স্কুটারের প্রচলন ছিল। কয়েক বছর আগেও বৈদ্যুতিক স্কুটার বলতে মানুষ এগুলোকে কেবল বুঝত। কিন্তু বর্তমানে মানুষের প্রত্যাশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে তুলনামূলক বেশি গতি সম্পন্ন ইলেকট্রিক স্কুটার।

জনপ্রিয়তার দিক থেকে এই উচ্চগতি সম্পন্ন ইলেকট্রিক স্কুটার বাজারে বেশ নাম করে ফেলেছে। যদিও এই দুই ধরনের বৈদ্যুতিক স্কুটারের মধ্যে চোখে পড়ার মতো বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। আজকের প্রতিবেদনে চলুন দেখে নেওয়া যাক তারই বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য।

পারফরম্যান্স:

নাম শুনলেই বোঝা যাচ্ছে পারফরম্যান্সের নিরিখে উচ্চ গতিসম্পন্ন স্কুটারগুলি, কম গতিসম্পন্ন স্কুটারগুলিকে পিছনে ফেলে কতটা এগিয়ে আছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় Hero Flash নামক বৈদ্যুতিক স্কুটারটির সর্বোচ্চ গতি ২৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টাতে সীমিত রয়েছে। যেখানে উচ্চ গতিসম্পন্ন স্কুটার Ather 450X Gen3 এর সর্বোচ্চ ১০০ কিমি/ঘন্টা গতি লাভ করতে পারে। প্রযুক্তিগত কারণেই পূর্বের স্কুটারগুলি একটা সীমিত গতির পর নিজের গতি বৃদ্ধি করতে পারত না। সেই দিক থেকে বিচার করে উচ্চগতি সম্পন্ন স্কুটারগুলি গ্রাহকদের কাছে অনেকটাই লোভনীয় ও গ্রহণযোগ্য। কিন্তু একটা কথা বলতেই হবে, অনেক সময় শহরের ট্রাফিক জ্যামের মধ্যেও এই লো-স্পিড স্কুটারগুলো ত্রুটিহীন ভাবে সন্তোষজনক পারফরম্যান্স দিতে পারে।

স্পেসিফিকেশন্স:

স্পেসিফিকেশনের কথা বললে প্রথমেই বলতে হয় কম ক্ষমতা যুক্ত ইলেকট্রিক মোটরের কারণে এই জাতীয় কম গতি বিশিষ্ট বৈদ্যুতিক স্কুটারগুলি তুলনামূলক কম মূল্যে বাজারে উপলব্ধ হয়। এতে সাধারণত ২৫০ ওয়াট শক্তি বিশিষ্ট বৈদ্যুতিক মোটর দেখা যায়। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এর নির্দিষ্ট দাম বেঁধে দেওয়ার পিছনে অন্য কারনও আছে। এছাড়া নিয়ন্ত্রিত পারফরমেন্সের জন্য এর নির্মাণ কার্যে সংস্থাগুলোকে বেশি মূল্য ব্যয় করতে হয় না।

অপরদিকে উচ্চগতি সম্পন্ন স্কুটারগুলি স্বাভাবিকভাবে উচ্চ ক্ষমতাযুক্ত ইলেকট্রিক মোটরের শক্তিতে বলিয়ান। এর দুর্দান্ত পারফরমেন্সের পিছনে ৫ কিলোওয়াট বা ৫০০০ ওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ইলেকট্রিক মোটর ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

রেজিস্ট্রেশন:

লো-স্পিড ইলেকট্রিক স্কুটারের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের কাছে অবশ্য একটি লাভজনক দিক আছে। এর জন্য কোন রেজিস্ট্রেশন বা আরটিও চার্জ দেওয়ার দরকার হয় না। সুতরাং কোনো বৈধ লাইসেন্স-এর প্রয়োজন পড়ে না। আর অল্পবয়সীরা এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে কম খরচে নিজেদের চাহিদা পূরণ করছে। অপরদিকে যেহেতু উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন স্কুটারগুলি সাধারণ পেট্রোল চালিত স্কুটারের সমতুল্য তাই এর রেজিস্ট্রেশন এবং বৈধ লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক।

রাইডিং রেঞ্জ এর পার্থক্য:

এই দুই ধরনের স্কুটারগুলি দ্বারা প্রাপ্ত রাইডিং রেঞ্জ বিস্তর ফারাক তৈরি করে। কম ক্ষমতা বিশিষ্ট কম গতি সম্পন্ন এই মডেলগুলি প্রতি চার্জে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ কিমি যেতে সক্ষম। উচ্চগতির স্কুটারের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কিন্তু খানিক আলাদা। উচ্চগতি যুক্ত Ola S1 Pro এর মত মডেল সর্বোচ্চ ১৭০কিমি/চার্জ যেতে পারে। বলাই বাহুল্য গ্রাহকরা Ola S1 Pro এর মত স্কুটারই কিনতে বেশি আগ্রহী।

ফিচার্স এবং মূল্য:

এই বৈদ্যুতিক স্কুটারগুলির মধ্যে প্রযুক্তিগত দিক থেকে বিশেষ কোনো পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় না। TVS iQube যেমন টাচস্ক্রিন সহ টিএফটি ডিসপ্লে এবং ব্লুটুথ সংযোগ দেওয়া হয়েছে, তেমন কম গতির Okinawa R30 থেকে শুধুমাত্র বেসিক ডিজিটাল ডিসপ্লে এর সুবিধা মেলে। আবার এও দেখা গেছে কিছু সংস্থা তাদের লো স্পিড মডেলে ব্লুটুথ রেখেছে। এগুলি দামের দিক থেকে অবশ্য বেশ পকেট সাশ্রয়ী। কম গতিসম্পন্ন স্কুটারগুলি আপনি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে পেতে পারেন। এটি অনেক গ্রাহকদের কাছেই বেশ স্বস্তি এনে দেয়। অপরদিকে উচ্চ গতির স্কুটারগুলির দাম শুরু হচ্ছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা থেকে। এগুলো মূলত প্রিমিয়াম গ্রাহকদের নজর আকৃষ্ট করে।

অতএব আপনি যদি কম দূরত্বের মধ্যে নিত্য যাতায়াতের জন্য বৈদ্যুতিক স্কুটারের সন্ধানে থাকেন তাহলে কম গতিসম্পন্ন গাড়িগুলোই যথার্থ হবে। বলা ভালো এগুলো ব্যাটারি চালিত সাইকেলের একটু উন্নত সংস্করণ। তবে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করার জন্য অবশ্যই উচ্চ গতি সম্পন্ন স্কুটারই আপনার জন্য উপযুক্ত।