পুরনো গাড়ি নতুনের মতো রাখতে চান? এই 5টি কাজ নিয়মিত করলে আর চিন্তা থাকবে না

প্রখ্যাত বাঙালি লেখক সুবোধ ঘোষ এর “অযান্ত্রিক” গল্পটি আইকনিক ভারতীয় পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের হাত ধরে সিনেমার পর্দায় দেখেছিল সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত এই দেশ। সেই গল্পের মূল কাহিনী আবর্তিত বিমল ও তার শতাব্দি প্রাচীন ট্যাক্সি “জগদ্দল”-কে নিয়ে। নিজের গাড়ির প্রতি তার মালিকের ভালোবাসার কথাই ফুটে উঠেছে সেই সিনেমায়। রুপালি পর্দার মতো না হলেও অনেক ক্ষেত্রেই নিজের পুরানো বাহনটিকে দীর্ঘকাল নিজের কাছে রেখে দেওয়ার বাসনা রয়েছে অনেকের। এমন বহু বাড়ির গ্যারেজে গেলে আজও তাদের পরিবারের সেই পুরনো চার চাকার সদস্যটির দেখা মেলে। একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে অত্যাধুনিক চারচাকার বিক্রি যেমন বেড়েছে তেমনভাবেই ভিন্টেজ মডেলের প্রতিও আকর্ষণ রয়েছে সমানভাবেই। এই জাতীয় পুরানো মডেলগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করার মতো নানা ধরনের আধুনিক রসদ পাওয়া যায় বর্তমান দিনে।

যদি আপনি আপনার পুরনো গাড়িটিকে আগামী দিনে আরও বেশ কয়েক বছর ব্যবহার করতে চান এবং তার থেকে পর্যাপ্ত মাইলেজ পাওয়ার আশা রাখেন সেক্ষেত্রে এর বেশ কিছু যত্নের প্রয়োজন। প্রতিনিয়ত পুরনো গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণে কাজ না করলে কিন্তু বড় রকমের কোনো রিপেয়ার অথবা ব্রেক ডাউনের সম্মুখীন হতে পারেন আপনি। অতএব চটপট দেখে নেওয়া যাক এমন কিছু টিপস।

পুরনো গাড়ি নতুনের মতো রাখার সহজ কিছু কৌশল-

ব্রেকিং সিস্টেমের যত্ন নেওয়া

যানবাহনের মধ্যে সুরক্ষা ব্যবস্থার একদম প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে ব্রেকিং সিস্টেম। গাড়ির বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই অনেক ক্ষেত্রে এই ব্রেকিং সিস্টেমে সমস্যা দেখা যায়। সেই কারণেই নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিজের গাড়ি তথা আপনার সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে ব্রেকপ্যাড, ব্রেক ফ্লুইড, ব্রেক পিস্টন সহ ব্রেকিং সিস্টেম লাগোয়া যন্ত্রাংশগুলির যত্ন নেওয়া একান্ত কর্তব্য। যদি মনে হয় ব্রেকপ্যাড অনেক বেশি ঘষে গিয়েছে তবে তা অবশ্যই বদলাতে হবে। ব্রেক ফ্লুইডের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কোনো কারণবশত ব্রেক ফ্লুইড লিক করে বেরোলে যত দ্রুত সম্ভব তা রিপেয়ার করতে হবে।

টায়ারের অবস্থা পরখ করা

আমরা মানবজাতি যেমন দুই পায়ে ভর করে বিশ্বজয় করে চলেছি যানবাহনের ক্ষেত্রে কিন্তু তার চাকাই আদতে পায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। আর দুর্ভাগ্যবশত গাড়ি-ঘোড়ার টায়ার কিন্তু সবচেয়ে বেশি নজরদারির বাইরেই থেকে যায়। একটি গাড়ি যত বেশি ব্যবহার করা হবে তার চাকা ও রাস্তার মধ্যে তত বেশি ঘর্ষণ হওয়ার দরুন টায়ারের উপরে অংশ সমান হয়ে যায়। এর ফলে টায়ারের গ্রিপিং ক্ষমতা কমে আসে। তাই অবশ্যই এমন পুরনো টায়ার বদলে ফেলতে হবে। তবে টায়ার বদল করার সময় স্থানীয় দোকানে পাওয়া সস্তার টায়ার এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়। এছাড়াও টায়ারের মধ্যে কোম্পানির ম্যানুয়াল বইতে লেখা এয়ার প্রেসার অনুযায়ী হওয়া ভরা একান্ত কর্তব্য।

স্টিয়ারিং হুইল সিস্টেমের যত্ন নেওয়া

পুরানো মডেলে অনেক সময় স্টিয়ারিং হুইল ঘুরানোর ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায়। এর ফলে গাড়ির সামনের টায়ারের উপরেও অনেক বেশি চাপ অনুভূত হয়। এই সমস্যার সমাধানে প্রতিনিয়ত স্টিয়ারিং ফ্লুইড বদল করতে হবে এবং তার সঙ্গেই সাসপেনশন সিস্টেম কোনো দক্ষ ব্যক্তির দ্বারা নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরখ করিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। এর ফলে গাড়ি স্টিয়ারিং হুইল যথার্থভাবে কাজ করতে সক্ষম হবে।

উইন্ডশিল্ড ওয়াইপার এর যত্ন

গাড়ি চালানোর সময় সামনের দৃশ্য পরিষ্কার না থাকলে যে কতটা সমস্যা হতে পারে তা সহজেই অনুমান করা যায়। বেশিরভাগ দুর্ঘটনার পেছনেই রয়েছে এই কারণটি। গাড়ির সামনে লাগানো এই বড় কাঁচ ঠিকঠাক ভাবে পরিষ্কার রাখতে গেলে অবশ্যই উইন্ডশিল্ড ওয়াইপারের কাজ সঠিক হওয়া প্রয়োজন। দীর্ঘদিন অবব্যবহারের ফলে এই ওয়াইপারের সামনে লাগানো রবারের অংশগুলি নষ্ট হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে পুরনোটি বদলে লাগাতে হবে নতুন ওয়াইপার। জিনিসটি অতি ছোট হলেও এর ভূমিকা কিন্তু অনেক বড়।

ফুয়েল লাইন চেক করা

আজকালকার দিনের অত্যাধুনিক ফুয়েল লাইন সেটআপ গাড়িগুলির মধ্যে লাগানো থাকলেও বেশ কয়েক বছরের পুরনো মডেলে কিন্তু সেই সময়কার প্রাচীন পন্থাই ব্যবহার করা হয়েছে। তাই অনেক সময় সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই ফুয়েল লাইনে চিড় ধরে সেখান থেকে জ্বালানি তেল চুঁয়ে পড়তে পারে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর থেকে অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা ঘটতেও দেখা গিয়েছে। তাই এই বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন। উপরন্ত নির্দিষ্ট দূরত্ব চালানোর পর ফুয়েল ফিল্টার পরিবর্তন করা আবশ্যক।