Bajaj Freedom: সিটের নীচে CNG সিলিন্ডার, যদি ফেটে যায়! কতটা নিরাপদ বাজাজ ফ্রিডম
'কয়েক মাস দেখি। যদি ট্যাঙ্ক ফেটে কোনও দুর্ঘটনার খবর না পাই, তাহলেই নেবো।' কেনার কথা জিজ্ঞাসা করলে পরিচিতদের মধ্যে অনেকের...'কয়েক মাস দেখি। যদি ট্যাঙ্ক ফেটে কোনও দুর্ঘটনার খবর না পাই, তাহলেই নেবো।' কেনার কথা জিজ্ঞাসা করলে পরিচিতদের মধ্যে অনেকের মুখেই বাজাজের প্রথম সিএনজি বাইক ফ্রিডম ১২৫ নিয়ে এমনই কথা শোনা যাচ্ছে। নিঃসন্দেহে, মোটরসাইকেলে সিএনজি জ্বালানির ব্যবহার একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ। কিন্তু এই বাইকের সুরক্ষা ঘিরে নানা প্রশ্নে জেরবার সংস্থা। কারণ সিটের ঠিক নীচে গ্যাস সিলিন্ডার লম্বালম্বি ভাবে রাখা হয়েছে। ঠিক তার পাশেই পেট্রল ট্যাংক। ফলে চালাতে চালাতে যদি আচমকা ফেটে যায়, তাহলে তো সোজা উপরে! আপাতত এই ব্যাপারটি নিয়েই চিন্তিত বাইক চালকরা। তবে বাজাজ বুক ঠুকে বলছে, ফ্রিডম ১২৫ সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সুরক্ষিত।
নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে নিজেদের এবং শিল্পমহল নির্ধারিত মাপকাঠি মেনে পরীক্ষা করেছে বাজাজ। গাড়ির মতো ক্র্যাশ টেস্টের সম্মুখীন হয়েছে সিএনজি বাইকটি। আমজনতার ভয় কাটানোর জন্য গোটা ঘটনাটির ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে তারা। প্রথমে ১.৫ টন ওজনের একটি গাড়ির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটিয়ে তারপর ১০ টনের একটি লরির নীচে ফেলে দেওয়া হয়েছে ফ্রিডমকে। এই দুই পরীক্ষার ফলাফল দেখে চিন্তামুক্ত হতে পারেন বাইক চালকরা।
ফ্রন্টাল কলিশন টেস্ট
প্রথম পরীক্ষায়, বাজাজ ফ্রিডমের সঙ্গে চার চাকার ১৫০০ কেজি ওজনের একটি বস্তুর ক্র্যাশ টেস্ট করা হয়েছে। যার সঙ্গে একটি মাঝারি আকারের এসইউভি গাড়ির তুলনা টানা যায়। প্রথমে ঘন্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিতে দুই গাড়ির মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটানো হয়। ভিডিয়োতে বাইকটির খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে দেখা যায়নি। ফুয়েল ট্যাঙ্কের ঢাকনাটা খুলে গিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভয় যে ব্যাপারটা নিয়ে ছিল, সেই সিএনজি ট্যাঙ্ক অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। ট্যাঙ্কের অবস্থান বদল, কোনও ফাটল বা গ্যাস লিক হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি বলে দাবি বাজাজের। এটুকু স্পষ্ট, ট্যাঙ্কটি বেশ সলিড ও ফ্রেমটা খুব মজবুত।
ট্রাক রানওভার টেস্ট
দ্বিতীয় পরীক্ষাটি ছিল আরও ভয়ঙ্কর। ফ্রিডম ১২৫ সিএনজির উপর দিয়ে ১০,০০০ কেজি ওজনের ১২ চাকার একটি ট্রাক চালানো হয়। এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই বাইকটি দুমড়ে মুচড়ে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু সিলিন্ডারে কোনও আঁচড় লাগেনি। গ্যাসের চাপ অপরিবর্তিত থেকেছে। তবে লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, এই রানওভার টেস্টে ট্রাকটি বাইকের ফুয়েল ট্যাঙ্ক হয়ে সামনের চাকার উপর দিয়ে বেরিয়ে গেছে। সিএনজি ট্যাঙ্কের মাঝখান বরাবর দিয়ে গেলে কী অবস্থা হত, সেটা অজানা থাকল।
আশ্বস্ত করে বাজাজ জানিয়েছে, ফ্রিডম বাইকটিকে উপর থেকে নীচে ফেলেও পরীক্ষা করা হয়েছে। দুই পাশে ধাক্কা লাগলে কতটা অভিঘাত বহনে সক্ষম সেটা খতিয়ে দেখা হয়েছে। দুই ক্ষেত্রেই অবশ্য ফলাফল এক। ট্যাঙ্কের কোনও ক্ষতি হয়নি। ফলে ফেটে যাওয়ার প্রশ্নও আসছে না। তবে মনে রাখবেন, এই পরীক্ষাগুলিতে সব কিছু পূর্ব নির্ধারিত। অর্থাৎ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ওজন এবং গতি সুচারুভাবে মেপে ক্র্যাশ টেস্ট করা হয়েছে। ফলে সম্পূর্ণরূপে বাস্তবিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে বলা যাবে না।
আমরা জানি, দু'চাকা গাড়ি কতটা দুর্ঘটনাপ্রবণ। তাতে সিএনজি থাকুক বা পেট্রল, অথবা উভয় জ্বালানির উপস্থিতি, সঠিক ভাবে রাস্তায় না চালালে ঝুঁকি বাড়তে বাধ্য। ফ্রিডম ১২৫ বাজাজের তিন বছরের গবেষণার ফসল। বিশ্বের প্রথম সিএনজি পরিচালিত বাইক এটি। এই বাইকের মতো বাই-ফুয়েল ব্যবস্থা বিশ্বের আর কোনও টু-হুইলারে নেই। এতে ২ কেজি সিএনজি সিলিন্ডার ও ২ লিটার পেট্রল ট্যাংক রয়েছে। বাইকটি ৩৩০ কিলোমিটার (সিএনজিতে ২১৭ ও পেট্রলে ১১৫ কিমি) রেঞ্জ দিতে সক্ষম বলে দাবি করেছে বাজাজ। দাম ৯৫,০০০ টাকা (এক্স-শোরুম) থেকে শুরু।
বাজাজ ফ্রিডমে ১২৫ সিসির ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। এটি ৯.৪ হর্সপাওয়ার ও ৯.৭ এনএম টর্ক উৎপন্ন করতে সক্ষম। বাইকটির বিশেষ ফিচার্স হল, ব্লুটুথ কানেক্টিভিটি যুক্ত রিভার্স এলসিডি ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেল, এলইডি হেডলাইট, এলইডি টেলল্যাম্প, এবং ইউএসবি চার্জিং পোর্ট। হ্যান্ডেলবারে ডানদিকে একটি সুইচ রয়েছে, যেটা টিপে পেট্রল ও সিএনজি মোডের মধ্যে অদল-বদল করা যাবে।