পেট্রল-ডিজেল, হাইব্রিড, নাকি CNG বা ইলেকট্রিক, কোন ধরনের গাড়ি আপনার কেনা উচিত?
বিকল্প যত বেশি, পছন্দের জিনিসটি বেছে নেওয়াও ততোই কঠিন। মানুষের মনস্তত্ত্ব বিচার করলে বোঝা যায়, কথাটি অক্ষরে অক্ষরে...বিকল্প যত বেশি, পছন্দের জিনিসটি বেছে নেওয়াও ততোই কঠিন। মানুষের মনস্তত্ত্ব বিচার করলে বোঝা যায়, কথাটি অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। ইদানিং ভারতের গাড়ির বাজারের দশাও একইরকম। একেতো জ্বালানির প্রকারভেদ, তার ওপর প্রতিটি সেগমেন্টে একশো-একটি মডেল। সবমিলিয়ে গ্রাহকদের খানিকটা ‘শাপলা ক্ষেত’-এ পড়ার মতো অবস্থা হয়। কোনটি ছেড়ে কোনটি কিনবেন, সেই নিয়ে বাঁধে চরম দ্বিধা। যা থেকে একটি নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হতে কার্যত নাজেহাল হতে হয়। অনেক সময় তো একে তাকে জিজ্ঞেস করে বা নেটের সাহায্য নেওয়া সত্ত্বেও, সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। সেজন্যই এই প্রতিবেদন। এখানে পেট্রোল অথবা ডিজেল, হাইব্রিড নাকি ইলেকট্রিক, নাকি সিএনজি, কোন জ্বালানির বিকল্প আপনার জন্য আদর্শ হবে, তা নিয়ে সবিস্তারে আলোচনা রইল।
ইন্টার্নাল কম্বাশান ইঞ্জিন (ICE) – পেট্রল ও ডিজেল
এক কথায় বলতে গেলে যে সমস্ত ব্যক্তি পুরনো ধ্যান ধারণায় বিশ্বাসী, তাঁদের জন্য পেট্রোল চালিত যানবাহন সেরা পছন্দের গাড়ি হতে পারে। কারণ এতে সর্বাধিক রিফাইনমেন্ট ও আউটপুট ডেলিভারিতে মসৃণতা মেলে। অর্থাৎ বেশি আরপিএম গতিতে আনন্দদায়ক পারফরম্যান্স দেয় এই জাতীয় গাড়ি। কিন্তু এক্ষেত্রে একটি বিষয় হল, যাদের প্রত্যহ দীর্ঘ পথ যাত্রা করতে হয়, তাদের জন্য এই জাতীয় যানবাহন মোটেই সুখদায়ক নয়। কারণ সেক্ষেত্রে জ্বালানির খরচ সামলাতে নাভিশ্বাস ওঠাই স্বাভাবিক।
বহু মানুষ বেশি মাইলেজ এবং পাওয়ার বেশি পাওয়ার জন্য ডিজেল গাড়িকে প্রাধান্য দেন। এটি একেবারেই বাস্তব যে ডিজেল গাড়ি পেট্রোল ভার্সনের তুলনায় বেশি টর্ক প্রদান করে। কিন্তু যারা নিয়মিত গাড়ি ব্যবহার করেন না, তাঁদের কাছে ডিজেল গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সামলানো একটু কষ্টসাধ্য বিষয়।
সিএনজি অথবা এলপিজি (CNG or LPG)
প্রত্যহ যাদের গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেরোতে হয়, তাঁদের জন্য সিএনজি অথবা এলপিজি চালিত যানবাহন সেরা বিকল্প। শহরের মধ্যেই নিত্যদিন চলাচলের জন্য জ্বালানি তেল চালিত গাড়ির তুলনায় এতে খরচ অনেকটাই কম। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, একটি পেট্রোল অথবা ডিজেল চালিত গাড়ির চাইতে সিএনজি অথবা এলপিজি চালিত মডেলের পাওয়ার ও পারফরম্যান্স সব সময় কম হয়। যদিও পকেটের জন্য এটি বেশ স্বাস্থ্যকর। আবার জ্বালানি হিসাবে সিএনজি বা এলপিজি সর্বত্র উপলব্ধ নয়। সেটাও মাথায় রাখতে হবে। অধুনা ভারতে বেশ কিছু সিএনজি চালিত গাড়ি উপলব্ধ রয়েছে। যার মধ্যে Maruti Suzuki Ertiga S-CNG, Hyundai Aura CNG, Tata Tiago iCNG অন্যতম।
বৈদ্যুতিক গাড়ি (Electric Vehicle)
যে সকল ক্রেতা গাড়ির নিয়মিত পরিচর্যার দায়ভার থেকে মুক্ত হতে চান, তাঁদের জন্য ইলেকট্রিক গাড়ি উপযুক্ত। এছাড়া এতে জ্বালানির খরচ নগণ্য। আবার এগুলি পরিবেশের জন্য স্বাস্থ্যকর। তবে সমস্যা হল একটি পেট্রোল/ডিজেল চালিত গাড়ির তুলনায় বর্তমানে এই জাতীয় গাড়ির দাম অনেকটাই বেশি। উপরন্তু এদেশে অপর্যাপ্ত চার্জিং পরিকাঠামো। তাই বর্তমান পরিস্থিতি বিচার করে বলা যায়, এই জাতীয় যানবাহন তাদের জন্যই উপযুক্ত, যাদের একটি আইসি ইঞ্জিনের গাড়ি রয়েছে। বর্তমানে ভারতের অন্যতম বৈদ্যুতিক মডেলগুলির মধ্যে Tata Nexon EV, MG ZS EV, Hyundai Kona EV, Audi e-tron অন্যতম।
ফুল-হাইব্রিড (Full Hybrid)
ফুল হাইব্রিড জ্বালানির গাড়ি সেই সকল ক্রেতার জন্য আদর্শ যারা প্রথাগত জ্বালানির সাথে বৈদ্যুতিকে চালানোর স্বাদ পেতে চান। এই জাতীয় গাড়িতে পেট্রোল ইঞ্জিনের সাথে একটি ইলেকট্রিক মোটর সহাবস্থান করে। কখনো সম্পূর্ণ ইলেকট্রিক মোটর, আবার কখনো দুইয়ের সহযোগে চালানো যায় গাড়ি। যদি ফুল হাইব্রিড গাড়ি হয়, সে ক্ষেত্রে ব্যাটারির চার্জ করানোর প্রয়োজন পড়ে না। চলতে চলতে ব্যাটারি নিজে থেকেই চার্জ হয়ে যায়। যার সুবিধা, কেবল ইলেকট্রিক মোটরে চলার সময় মেলে। বেশ কিছুটা পথ একপ্রকার নিখরচায় চালানো যায়। কিন্তু বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো এক্ষেত্রেও একই সমস্যা। পেট্রোল ডিজেলের চাইতে হাইব্রিড গাড়ির দাম বেশি। বর্তমানে বাজারে উপলব্ধ সেরা কয়েকটি হাইব্রিড গাড়ি হল – Honda City e:HEV, Toyota Camry, Toyota Urban Cruiser Hyryder, Toyota Vellfire।