পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি জ্বালানি আমদানির খরচ ছেঁটে রাজকোষের চাপ কমানোর লক্ষ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়ানোয় জোর দিচ্ছে মোদি সরকার। কিন্তু সেগুলির দাম বেশি হওয়ার পাশাপাশি এই ধরনের গাড়ি চার্জ দেওয়ার পর্যাপ্ত কেন্দ্রের অভাব রয়েছে দেশে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির চার্জিং স্টেশন গড়ে তোলার জন্য জায়গা বড় অন্তরায়। এই পরিস্থিতিতে ব্যাটারি-সোয়াপিং (Battery-Swapping) বা ব্যাটারি বদলের স্টেশনের ধারণাকে জনপ্রিয় করে তুলতে চাইছে কেন্দ্র।
তাদের দাওয়াই অনুসরণ করে এবার রাষ্ট্রায়ত্ত সিএনজি সরবরাহকারী ইন্দ্রপ্রস্থ গ্যাস (Indraprastha) বা আইজিএল (IGL) পুনের ইলেকট্রিক ভেহিকলস (EV) প্রস্তুতকারী কাইনেটিক গ্রিন (Kinetic Green)-এর সাথে জোট বেঁধে দিল্লিতে ব্যাটারি সোয়াপিং স্টেশন চালুর কথা জানাল৷ যার পোশাকি নাম এনার্জি কাফে (Energy Cafe)।
কাফে কথাটি শোনা মাত্রই কফিতে চুমুক আর সঙ্গে কিছু স্ন্যাক্স দিয়ে পেটপুজোর কথা মাথায় আসে। তবে ইন্দ্রপ্রস্থ গ্যাসের এনার্জি কাফেতে মানুষের জলখাবার পাওয়া না গেলেও তাদের প্রিয় বাহনদের পেটে পুনরায় শক্তিসঞ্চারের ব্যবস্থা রয়েছে। ওই কেন্দ্রে দু’চাকা ও তিন চাকা বৈদ্যুতিক গাড়ির চার্জ ফুরিয়ে যাওয়া ব্যাটারি চার্জে পরিপূর্ণ থাকা ব্যাটারির সঙ্গে এক্সচেঞ্জ বা বদলে নেওয়া যাবে।
চুক্তি অনুযায়ী, ওই ব্যাটারি বদলের কেন্দ্রগুলি গড়ে তোলার পরিকাঠামো সরবরাহের দায়িত্ব থাকবে ইন্দ্রপ্রস্থ গ্যাস বা আইজিএল। আর প্রযুক্তিগত দিকগুলি তদারকি করবে তাদের টেকনোলজি পার্টনার কাইনেটিক গ্রিন। কাইনেটিক গ্রিনের ইলেকট্রিক টু-থ্রি হুইলার ব্যবহারকারীরা তাদের স্মার্টফোনে এনার্জি কাফে অ্যাপ ইন্সটল করে সহজেই দেখে নিতে পারবেন কাছেপিঠে থাকা ব্যাটারি-সোয়াপিং স্টেশনের লোকেশন।
সরাসরি অ্যাপ থেকেই চার্জ দেওয়া ব্যাটারি বুক করে ইন্দ্রপ্রস্থ গ্যাসের যে কোনও রিফিলিং স্টেশনে শেষ হয়ে যাওয়া ব্যাটারি বদলে নেওয়া যাবে। যতটুকু চার্জ হয়েছে মাসুল ততটাই দিতে হবে। কাছে ক্যাশ না থাকলেও নো চাপ৷ অনলাইনেই পেমেন্ট করার সুবিধা থাকছে।
ইন্দ্রপ্রস্থ গ্যাস (আইজিএল) ও কাইনেটিক গ্রিন যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমাদের জোট দিল্লি থেকে শুরু করে ব্যাটারি সোয়াপিং স্টেশনের একটি গভীর নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে। যেখানে বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক দু’চাকা ও তিন চাক গাড়ি ব্যবহারকারীরা ব্যাটারি বদলের সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন।”
আইজিএল যোগ করেছে, ইলেকট্রিক মোবিলিটির দিকে ভারতের অগ্রসর হওয়ার সফরে ব্যাটারি সোয়াপিং বা ব্যাটারি বদলের ভাবনা জনপ্রিয়তা এবং গতি পাচ্ছে। এই প্রযুক্তি রেঞ্জ নিয়ে উদ্বেগ এবং ইভি চার্জ হতে বিপুল সময় নেওয়ার মতো জটিল সমস্যাগুলির সমাধান করবে। তাদের মতে, ব্যাটারি সোয়াপিংয়ের ধারণা ব্যবহার করে বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম অর্ধেকে নেমে আসতে পারে, এমনকি জ্বালানি তেল চালিত যানবাহনের থেকেও কম হতে পারে৷ কারণ, এই কনসেপ্টে ব্যাটারি ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি করা যেতে পারে।
প্রসঙ্গত, ইলেকট্রিক গাড়ি যে ব্যাটারিতে চলে, তার দর আকাশছোঁয়া। হিসাবে বসলে দেখা যাবে, মোট দামের ব্যাটারির খরচ প্রায় ৩০-৪০%। ফলে প্রথাগত জ্বালানির গাড়ির চেয়ে এই ধরনের গাড়ির দামও বেশি। কিন্তু বর্তমানে ব্যাটারি সমেত গাড়ি না কিনে সেটি সংস্থার থেকে ভাড়ায় নেওয়ায় ধারণা জনপ্রিয় হচ্ছে। ইতিমধ্যেই যা আমরা বাউন্সের প্রথম ইলেকট্রিক স্কুটার ইনফিনিটি (Infinity)-র ক্ষেত্রে দেখেছি। তেল ভরার যা খরচ সেই তুলনায় ব্যাটারি সোয়াপিংয়ের মাসুল অনেক কম। এই কারণেই সংশয় থাকলেও ব্যাটারি বদলের কনসেপ্ট নিয়ে আশাবাদী দেশের শিল্পমহল।
শেষে আইজিএল আরও বলেছে, বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ দেওয়া সময়সাপেক্ষ। কিন্তু ব্যাটারি বদল করতে দু’মিনিট সময় লাগে। ফলে এই ব্যবস্থায় ব্যাটারি চার্জিং বা আয়ু ফুরিয়ে এলে নতুন ব্যাটারি কেনার চিন্তাও ভোক্তাদের করতে হবে না। “