Bajaj Avenger-এর দাপটে কোনঠাসা, ছয় মাসে বিক্রি কার্যত শূন্য, এই বাইক বন্ধ করল Suzuki
গত ছয় মাসে যেন মাছি তাড়ানোর মতো অবস্থা। কেনার ইচ্ছাপ্রকাশ করে খোঁজখবর নেওয়া তো দূরের কথা, ২০২১-এর ডিসেম্বর থেকে ২০২২-এর...গত ছয় মাসে যেন মাছি তাড়ানোর মতো অবস্থা। কেনার ইচ্ছাপ্রকাশ করে খোঁজখবর নেওয়া তো দূরের কথা, ২০২১-এর ডিসেম্বর থেকে ২০২২-এর মে পর্যন্ত বিক্রি হয়নি একটাও। দেশের মোটরসাইকেল মহলের অন্দরে যে গুঞ্জন উঠেছিল, তা এবার সত্যিই মিলে গেল। ভারতে সুজুকি (Suzuki)-র দু'চাকা গাড়ি প্রস্তুতকারী শাখা জানিয়ে দিল, Intruder 155 বন্ধ করেছে তারা। এ দেশে সফর শুরুর পাঁচ বছরের মধ্যে থেমে গেল সুজুকির ওই ১৫৫ সিসি ইঞ্জিনের ক্রুজার বাইকের চাকা।
অবসর নিল Suzuki Intruder 155
দেশের দু'চাকা গাড়ি বাজারে ইন্ট্রুডার ১৫৫-এর ব্যর্থতার পিছনে একগুচ্ছ কারণ রয়েছে। মূলত আরাম-আয়েশ করে মোটরসাইকেল চালানোর অভিজ্ঞতা দিতে এ দেশে ইন্ট্রুডার লঞ্চ করেছিল সুজুকি। বাজারে উপলব্ধ অন্যান্য ক্রুজার বাইকের তুলনায় ডিজাইন অন্যরকম বলে প্রথম প্রথম হৈচৈ হয়েছিল ঠিকই। তিনকোণা হেডল্যাম্প, চওড়া পৃষ্ঠদেশ, তির্যকভাবে অবস্থিত ডুয়াল এগজস্ট প্রথম দর্শনের নজর কেড়ে নিয়েছিল। বাকানো প্যানেল আকর্ষণের অন্যতম কারণ ছিল। কিন্তু অত্যাধিক প্লাস্টিকের ব্যবহার ততটা ভরসা যোগায়নি ক্রেতাদের।
একটি ক্রুজার বাইকের জনপ্রিয়তার পিছনে মোটামুটি যে বিষয়গুলি কাজ করে - আরামপ্রদ সিটিং পজিশন, নীচু আসন, হাইওয়ে রাইডেও ক্লান্তি অনুভব না করা। সুজুকি ইন্ট্রুডার ১৫৫-এ সে সব গুণ থাকলেও, শক্তিশালী প্রতিপক্ষের উপস্থিতি বাজারে বাইকটির বিদায় নেওয়ার পিছনে অনুঘটকের কাজ করেছে বলেও অভিমত ব্যক্ত করছেন বিশেষজ্ঞরা। দামও এমন এক কারণ, যার জন্য ক্রেতাদের ইন্ট্রুডারমুখী করতে ব্যর্থ হয়েছে সুজুকি। রাস্তায় এর দর্শন পাওয়া ছিল সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।
ইন্ট্রুডারের বিদায়ঘন্টা বাজানোর পিছনে বাজাজ অ্যাভেঞ্জার স্ট্রিট ১৬০ এবং অ্যাভেঞ্জার ২২০ ক্রুজারের অবদান সর্বাপেক্ষা বেশি। বিপক্ষ যখন শক্তসামর্থ হয়, তখন প্রতিযোগিতায় চাপটাও বেশি থাকে। আর সেই চাপেই ইন্ট্রুডার বাধ্য হয়েছে নতজানু হতে। কলকাতার এক্স-শোরুম দামে আসা যাক। এ শহরে সুজুকির ক্রুজার বাইকের সর্বশেষ দাম ১ লাখ ৩১ হাজার টাকা (রাউন্ড ফিগার)। এর থেকেই ১৭ থেকে ১৮ হাজার কমে বাজারে অ্যাভেঞ্জার স্ট্রিট পাওয়া যায়। এই ছোট অ্যাভেঞ্জারের ক্ষমতাও ইন্ট্রুডারের তুলনায় প্রায় দেড় বিএইচপি বেশি।
অন্য দিকে, প্রায় ৯ হাজার বেশি খরচ করলে ২২০ সিসির অ্যাভেঞ্জার ক্রুজের অপশন রয়েছে। ইন্ট্রুডারের চেয়ে ক্ষমতার ফারাক ৫ বিএইচপি। এন্ট্রি লেভেল অর্থাৎ একটু কমের দিকে বাজেট ক্রুজার মোটরসাইকেল মার্কেট ততটা জনপ্রিয় না হওয়া সত্বেও, এই বিভাগে লাভের গুড় খাচ্ছে বাজাজ। গত মাসের বিক্রির পরিসংখ্যানও সেই দাবি ফের জোরালো করেছে। অ্যাভেঞ্জার স্ট্রিট ১৬০-এর হাত ধরে বাজাজ পরিবারে যুক্ত হয়েছেন ১,৮২৪ জন নতুন গ্রাহক। সেখানে আর্যভট্টের আবিস্কৃত সংখ্যাকে আঁকড়ে পড়ে আছে ইন্ট্রুডার। মে মাসেও কেউউ কিনতে আসেনি৷ গত ছয় মাসে বিক্রি কার্যত শূন্য।
এটুকু স্পষ্ট, সস্তায় ভাল বিকল্প থাকায় ভুগেছে Suzuki Intruder 155। তাছাড়া বাজাজ অ্যাভেঞ্জার সিরিজের ক্ষেত্রে প্রায়ই একটি বাগধারার প্রয়োগ করেন বাইকপ্রেমীরা। আর সেটি হল 'বেয়ার বোন'। অর্থাৎ অ্যাভেঞ্জারকে বাকিদের থেকে আলাদা করতে বা দেখাতে অতিরিক্ত কম্পোনেন্ট, বডি প্যানেল, বা পার্টসের ব্যবহার হয়নি। কাঠামো একদম সাধারণ কিন্তু বলিষ্ঠ। প্রকৃত ক্রুজার বাইকের ক্ষেত্রে যেমনটা প্রয়োজন। যার জন্য বাইকাররা আরও একাত্ম হয়েছেন এবং মন থেকে মাধুর্য অনুভব করতে পেরেছেন। ভিন্ন কিছু করার প্রচেষ্টায় এখানেই ব্যর্থতা নিয়ে থাকতে হয়েছে সুজুকি ইন্ট্রুডার ১৫০-কে।
ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে নেওয়া মতামত বলছে, অ্যাভেঞ্জারের কন্ট্রোল ও হ্যান্ডলিং নাকি বেশি ভাল। বিশেষ করে শহুরে পরিবেশে ব্যবহার করলে। তবে এরোডায়নামিক ডিজাইনের কারণে হাইওয়ে ক্রুজিংয়ের জন্য ইন্ট্রুডারকে এগিয়ে রেখেছেন কয়েক জন। যদিও সমস্ত দিক বিচার করলে অ্যাভেঞ্জার কিনলে বেশি লাভের কথা একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন সবাই।
Suzuki Intruder 155-এর আচমকা বিদায় প্রত্যাশিত ভাবেই Intruder 250-এর প্রসঙ্গে টেনে এনেছে। ২০১৯-এ ভারতে বাইকটির পেটেন্টও নেওয়া হয়েছে। তবে ইন্ট্রুডার নিয়ে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করল সুজুকি, তাতে ভবিষ্যতে আরও পাওয়ারফুল Intruder 250 এ দেশে লঞ্চ হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় বজায় থাকল। সূত্রের দাবি, আপাতত নেকেড, ফেয়ার্ড, এবং অ্যাডভেঞ্চার মোটরসাইকেল সেগমেন্টে মনোনিবেশ করতে চাইছে জাপানি সংস্থাটি। কারণ এই ধরনের টু-হুইলারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।