গাড়ি জমে আছে, কেনার লোক নেই, দেশে ডিজেল গাড়ির চাহিদা হু হু করে কমছে কেন

অনেক বছর ধরেই ডিজেল গাড়ি ভারতীয় ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় প্রথম স্থানে বিরাজমান থেকেছে। মূলত যার পেছনে রয়েছে ডিজেল ইঞ্জিনের অতিরিক্ত তেল সাশ্রয় করার ক্ষমতা এবং…

অনেক বছর ধরেই ডিজেল গাড়ি ভারতীয় ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় প্রথম স্থানে বিরাজমান থেকেছে। মূলত যার পেছনে রয়েছে ডিজেল ইঞ্জিনের অতিরিক্ত তেল সাশ্রয় করার ক্ষমতা এবং এর কম খরচ। এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন যারা তাদের জীবনের বেশিরভাগ সময়ই ডিজেল ইঞ্জিনের উপরেই আস্থা রেখেছেন। তবে সাম্প্রতিককালে এই ছবিতে কিন্তু খানিক বদল এসেছে। যেখানে ২০১২ সালে ভারতের বাজারে ডিজেল চালিত যাত্রি গাড়ির যেখানে ৫৪ শতাংশ অংশীদারিত্ব ছিল, সেখানে বিএস-৬ নির্গমন নীতি চালু হওয়ার পর থেকেই মার্কেট শেয়ারে পতন ঘটতে শুরু করে। ২০২০ সালে ডিজেল চালিত গাড়ির বিক্রিতে ১৮ শতাংশ ধস নামে। যদিও গত বছর তাতে ১৯ শতাংশ উন্নতি দেখা গেলেও সামগ্রিকভাবে বর্তমানে ডিজেল গাড়ি বিক্রির সংখ্যা কমেছে এ কথা সত্য। আচমকা, ক্রেতাদের ডিজেল গাড়ির প্রতি অনীহা জন্মানোর কারণগুলি নিয়ে আলোচনা করা হলো আজকের এই প্রতিবেদনে।

সরকারি নিয়ম

বিগত কয়েক বছরের মধ্যেই ভারত সরকার ডিজেল চালিত গাড়ি বিক্রি কমানোর জন্য নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হলো ২০২০ সাল থেকে চালু হওয়া ভারত স্টেজ-৬ বা বিএস-৬ কার্বন নীতি। বর্তমানে এই ধরনের গাড়িতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ডিপিএফ ফিল্টার ব্যবহার করা হয়। ব্যাপারটি শুনতে সহজ হলেও এর জন্য ডিজেলের গাড়িগুলির দাম বেড়েছে যথেষ্ট।

মরার উপর খাড়ার ঘা হিসাবে চলতি বছর থেকেই শুরু হয়েছে BS6 এর দ্বিতীয় পর্যায়। এই কারণেই বিভিন্ন গাড়ী নির্মাতা তাদের বিভিন্ন ডিজেল গাড়ি বন্ধ করতে একপ্রকার বাধ্য হয়েছে। তার উপর দেশে ডিজেল গাড়ির সবচেয়ে বড় জায়গা দিল্লিতেই কেজরিওয়াল সরকার ১০ বছরের পুরনো ডিজেল গাড়ির উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই কারণেই বর্তমানে ডিজেল ইঞ্জিন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ক্রেতারা।

পরিবেশগত কারণ

বর্তমানে পরিবেশ সচেতন নাগরিক ডিজে ইঞ্জিন থেকে নির্গত ক্ষতিকর গ্যাসগুলির সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। সাধারণত পেট্রল ইঞ্জিনের তুলনায় ডিজেল ইঞ্জিনের ধোঁয়ার মধ্যে থাকে অতিরিক্ত পরিমাণ কার্বন-মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক ভাসমান ধূলিকণা। এই পদার্থগুলি বায়ুমন্ডলে থাকার ফলে অতি দ্রুত মানবদেহের শ্বাসনালী ও ফুসফুসে স্থায়ী রোগের জন্ম দিয়ে চলেছে। এছাড়াও ভারতের বেশ কিছু শহর বিশ্বের মধ্যে অতিরিক্ত পরিবেশ দূষণের শিকার। অতএব এই দূষণকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন ডিজেল চালিত ইঞ্জিনে ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করা। আগামী দিনে ধীরে ধীরে পেট্রোল চালিত গাড়ির ব্যবহারও বন্ধ করে ইলেকট্রিক কিংবা হাইব্রিড মোবিলিটি সিস্টেমের দিকেই এগোতে হবে আমাদের।

নতুন প্রযুক্তির জন্ম

বিজ্ঞানের জয়যাত্রা যত এগিয়েছে ততই উন্নত হয়েছে এই পৃথিবী। ২০২৩ সালের আজকের দিনে দাঁড়িয়ে পেট্রোল মডেল ডিজেল চালিত ইঞ্জিনের সমান তেল সাশ্রয় করার ক্ষমতা রাখে। উপরন্তু বর্তমানে সবচেয়ে বড় ধামাকা নিয়ে এসেছে হাইব্রিড প্রযুক্তি সম্পন্ন গাড়িগুলি। এর মধ্যে ইঞ্জিনের সঙ্গে ইলেকট্রিক ইঞ্জিনের সহাবস্থান থাকায় স্বাভাবিকভাবেই অবাক করা মাইলেজ পাওয়া সম্ভব। অর্থাৎ সহজ ভাবে বলতে গেলে আজকের এই পৃথিবী এতটাই আধুনিক হয়ে গিয়েছে যে যাত্রি গাড়িতে ডিজেল চালিত ইঞ্জিনের ব্যবহার প্রায় নিষ্প্রয়োজন। এমন ভাবেই চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রাইভেট ডিজেল কার থেকে যাবে কেবলমাত্র ইতিহাসের পাতাতেই।

WhatsApp Follow Button

লেটেস্ট খবর পড়তে হোয়াটসঅ্যাপে

WhatsApp Logo যুক্ত হোন