মাইলেজ না বেড়ে উল্টে কমে যায়! তেল খরচ কমাতে যে সব আজব যুক্তি শুনে আসছি আমরা
নিজের শখের গাড়িটি প্রতি লিটার তেলে কতটা রাস্তা চলতে পারছে তার হিসেব করতে থাকেন বেশিরভাগ গাড়ি মালিকই। মধ্যবিত্ত প্রধান...নিজের শখের গাড়িটি প্রতি লিটার তেলে কতটা রাস্তা চলতে পারছে তার হিসেব করতে থাকেন বেশিরভাগ গাড়ি মালিকই। মধ্যবিত্ত প্রধান এই দেশে যে কোনো যানবাহনের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত মাইলেজ বরাবরই প্রাধান্য পেয়ে এসেছে। এমনকি কিভাবে নিজের এই চার চাকার বাহনটি থেকে মনপসন্দ মাইলেজ পাওয়া সম্ভব তার হাজার একটা পন্থা ইন্টারনেট সার্চ করলেই ভেসে উঠবে চোখের সামনে। এদের মধ্যে কিছু সত্যি হলেও বেশিরভাগটাই লোকমুখে প্রচারিত। অর্থাৎ তাদের বাস্তবিক সারবত্তা প্রায় নেই বললেই চলে। সে সব আজব যুক্তি বিশ্বাস করলে গাড়ির মাইলেজ না বেড়ে উল্টে কমে যাওয়ারও সম্ভাবনা দেখা যায়। আজকের প্রতিবেদনে এমনই কিছু ভুল ভাঙানোর চেষ্টা করবো আমরা।
ছোট গাড়ি মানেই বেশি তেল সাশ্রয়
একটা সময় অনেকেই মনে করত গাড়ির চেহারা ছোট হলেই প্রতি লিটার তেলে চোখ বুজে আরও কয়েক কিলোমিটার অতিরিক্ত পাড়ি দেবে সেটি। সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে এই জাতীয় গাড়িগুলির প্রযুক্তিতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। এখন আর ভালো মাইলেজ পেতে গাড়ির চেহারার উপর নির্ভর করতে হয় না। বরং তা আধুনিক ইঞ্জিন এবং টায়ারের উপর নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ কিছুদিন আগেই লঞ্চ হওয়া এসইউভি মডেল Maruti Suzuki Grand Vitara-র হাইব্রিড ইঞ্জিন থেকে যেখানে ২৭.৮৯ কিমি/ লিটার মাইলেজ পাওয়া সম্ভব সেখানে এর তুলনায় ছোট আকারের হ্যাচব্যাক মডেল Celerio কিন্তু মাত্র ২৫.২৪ কিমি/লিটার মাইলেজ প্রদান করতে সক্ষম।
অটোমেটিক গাড়ির তুলনায় ম্যানুয়াল মডেল তেল খায় কম
শুরুর দিকে এমন ঘটনার সাক্ষী অনেক গ্রাহক থাকলেও আজকালকার দিনে অটোমেটিক প্রযুক্তি পূর্বের তুলনায় অনেকটাই আপডেটেড। বর্তমানে এতে গিয়ারের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া কম ঘর্ষণ বল উৎপাদনকারী যন্ত্রাংশ এবং উন্নত ধরনের লুব্রিক্যান্ট ব্যবহার করার জন্যই আধুনিক অটোমেটিক গিয়ারবক্স যুক্ত গাড়িগুলির তেলের সাশ্রয় বেড়েছে অনেকটাই। তাছাড়াও ইলেকট্রনিক শিফট কন্ট্রোল সিস্টেম এক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পাওয়ার/প্রিমিয়াম পেট্রোল ভালো কাজ দেয়
বাইক কিংবা চারচাকা চালানোর সঙ্গে যুক্ত এমন মানুষদের সঙ্গে কথা বললেই শুনতে পাবেন প্রিমিয়াম পেট্রোলের মাহাত্ম্য। আসলে এর চেয়ে বড় ভ্রান্ত ধারণা গাড়ির দুনিয়ায় অনেক কমই আছে। প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে বিক্রি হওয়া এই পাওয়ার পেট্রোল কিংবা প্রিমিয়াম পেট্রোলের অক্টেন সংখ্যা থাকে অনেক বেশি। এই অতিরিক্ত অক্টেন সংখ্যা সমৃদ্ধ পেট্রোল কেবলমাত্র উচ্চ ক্ষমতার ইঞ্জিন কিংবা টার্বো চার্জড ইঞ্জিনগুলির ক্ষেত্রেই যথাযথ কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। যে কোনো সাধারণ ইঞ্জিনের ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম পেট্রলের বিন্দুমাত্র উপকারিতা নেই।
গাড়ি চালানোর আগে ইঞ্জিন গরম করা
পুরনো দিনের গাড়িগুলিতে এই পদ্ধতি কিন্তু সত্যিই যথেষ্ট কার্যকর ছিল। আধুনিক দিনের গাড়িগুলির প্রযুক্তি পূর্বের তুলনায় পর্যাপ্ত উন্নতি সাধন করতে পেরেছে। তাই এই ভ্রান্ত ধারণা কেবলমাত্র প্রাচীন প্রযুক্তির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আজকালকার দিনের আধুনিক গাড়িগুলিতে ব্যবহৃত ইঞ্জিনের মধ্যে ফুয়েল ইনজেক্টর থাকায় তা প্রতিমুহূর্তে ইঞ্জিনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। সেই কারণেই গাড়ি চালানোর পূর্বে দীর্ঘক্ষণ ইঞ্জিন চালু রেখে তা গরম করা অপ্রয়োজনীয়।
বারবার ইঞ্জিন অফ/অন না করে একটানা চালু রাখা
অনেকেই দেখবেন বলে থাকে শহরের ব্যস্ততম রাস্তায় প্রতিটি সিগনালে বারবার ইঞ্জিন চালু কিংবা বন্ধ না করে একটানা চালু রাখা উচিত। তাদের মতে যতবার করে ইঞ্জিন চালু করা হবে ততবারই অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ হতে পারে। এটিও একটি অন্যতম বড় ভুল ধারণা। বর্তমান দিনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উপর নির্ভর করে তৈরি গাড়িগুলি চালু করার সঙ্গে সঙ্গেই অতিরিক্ত তেল খরচের মতো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই কোনও ট্রাফিক সিগন্যালে ২০ সেকেন্ডের বেশি সময় দাঁড়াতে হলে অবশ্যই ইঞ্জিনটি বন্ধ করুন। এর ফলে সারাদিনে নিজের অজান্তেই অনেকটা পেট্রোল সাশ্রয় করবেন আপনি।