বাইক কেনার আগে সবার প্রথমে এই বিষয়গুলি দেখে নিন, নাহলে পরে হা-হুতাশ করতে হবে

একটি দুই চাকার বাহন এক একজন মানুষের কাছে এক একটা চাহিদা পূরণ করতে পারে। কারোর কাছে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যাওয়া এবং আসার জন্য অর্থাৎ প্রতিদিনের…

একটি দুই চাকার বাহন এক একজন মানুষের কাছে এক একটা চাহিদা পূরণ করতে পারে। কারোর কাছে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যাওয়া এবং আসার জন্য অর্থাৎ প্রতিদিনের নিত্যনৈমিত্তিক কাজে ব্যবহৃত হয় মোটরসাইকেল। আবার অনেকের কাছে কেবলমাত্র স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ানোর একটি মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত হয় এই টু-হুইলার। তাছাড়াও আজকালকার দিনে বিশেষত করোনা পরবর্তী সময় থেকেই নিজের সখের পক্ষীরাজকে নিয়ে সপ্তাহ শেষে দূর দূরান্তে পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে যথেষ্ট। তাই এই সখ পূরণ করতেও মোটরসাইকেলের জুড়ি মেলা ভার। তবে কারণ যাই হোক না কেন একটি নতুন বাইক ঘরে আনতে গেলে অবশ্যই কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা একান্ত প্রয়োজন। চটপট সেই তালিকায় চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।

পর্যাপ্ত সচেতনতা এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা

এটি সাধারণ বাইসাইকেল কেনার সঙ্গে একটি আস্ত মোটরবাইক কেনার অনেক পার্থক্য রয়েছে সেটা প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে আপনাকে। যেমন রাস্তায় বাইক চালানোর আগেই বিভিন্ন রকম নিয়ম-কানুন এবং ট্রাফিক আইন সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল থাকা প্রয়োজন। তাছাড়াও ভারতের মোটর ভেহিকেলস অ্যাক্ট অনুযায়ী পেট্রোল চালিত সমস্ত দুই চাকা চালানোর জন্য চালকের সঙ্গে একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স অবশ্যই থাকতে হবে। সেই কারণেই যত শীঘ্রই সম্ভব বানিয়ে নিন এমন একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স।

আপনি নিজে যত ভালই রাইডার হোন না কেন রাস্তায় কিন্তু বহু মানুষের সঙ্গেই আপনাকে বাইক চালাতে হবে। তাই নিজের সুরক্ষার বিষয়টি অতিরিক্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত। উপরন্তু বিভিন্ন বাইকের বীমা প্রদানকারী সংস্থাগুলি থেকে নিজের প্রিয় দুই চাকাটিকে সুরক্ষিত করে রাখবেন।

আপনার প্রয়োজনীয়তা

ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে বর্তমানে নানাবিধ সংস্থার তৈরি প্রচুর মোটরসাইকেলের মডেল উপলব্ধ রয়েছে। তাই বাইক কেনার পূর্বে প্রথমেই আপনার প্রয়োজনীয়তার বিষয়গুলি লিপিবদ্ধ করুন। আপনার চাহিদা অনুযায়ী তারপরেই নির্দিষ্ট মডেল কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যবহারের কথা ভেবে বাইক কিনতে চান তবে নির্দিষ্ট কমিউটার বাইক গুলি আপনার জন্য উপযুক্ত হবে। অন্যদিকে মোটরসাইকেল নিয়ে দূরে পাড়ি দিতে হলে প্রয়োজন অ্যাএডভেঞ্চার ট্যুরার বাইক। আবার ধরুন শহরের ব্যস্ততম রাস্তার মধ্যেই ব্যবহার করার জন্য মোটরসাইকেল কিনতে চাইছেন আপনি। সে ক্ষেত্রে কিন্তু আলাদা বাইক পছন্দ করতে হবে আপনাকে।

বাজেট নির্ধারণ করা

দেশ কিংবা রাজ্য চালানো হোক অথবা নিজের বাইক কেনা সব ক্ষেত্রেই কিন্তু একটি নির্দিষ্ট বাজেট অনুসরণ করে চলা প্রয়োজন। সেই কারণেই কত দামের মধ্যে বাইক কেনা আপনার সামর্থের মধ্যে পড়ে সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। একটি দুই চাকার বাহন কেনার জন্য মাত্রাতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা নির্বুদ্ধিতার কাজ। কারণ যত দামি বাইক কিনুন না কেন এটি কিন্তু আসলে ক্ষয়িষ্ণু সম্পদের তালিকায় পড়ে। এছাড়াও একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে মোটরসাইকেলের নিজস্ব দাম ছাড়াও রেজিস্ট্রেশন খরচ এবং অন্যান্য বিভিন্ন ট্যাক্স ও ইন্সুরেন্স বাবদ অতিরিক্ত কিছু খরচ অবশ্যই করতে হবে আপনাকে। এছাড়াও আজকালকার দিনের আধুনিক বাইক গুলিতে অনেক সময় বাড়তি কিছু এক্সেসরিজ লাগানোর প্রয়োজন পড়ে। তার হিসেবটিও আগে থেকে করে রাখা উচিত।

মাইলেজ

বর্তমানের পেট্রোলের দাম মাত্রাতিরিক্ত থাকায় মাইলেজ কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। মোটরসাইকেল কেনার পর এই পেট্রোলের দাম অনেক সময়ই মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। সেই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই অতিরিক্ত মাইলেজ দিতে সক্ষম এমন বাইক পছন্দ করতে পারেন। এই মোটরসাইকেলগুলি অল্প তেল খরচ করেই অনেকটা রাস্তা পার হতে পারে। এর ফলে অদূর ভবিষ্যতে জ্বালানি খাতে বেশ খানিকটা খরচ কমানো সম্ভব।

ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা

যে কোনো মোটরসাইকেলের প্রাণ ভোমরা হল তার ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতাকে আমরা কিউবিক ক্যাপাসিটি বা সিসি (CC) দিয়ে চিহ্নিত করি। শহরের ব্যস্ত ট্রাফিকের মধ্যে দিয়ে বেশিরভাগ সময় বাইক চালাতে হলে প্রয়োজন কম সিসির বাইকের। কারণ এই জাতীয় ইঞ্জিনগুলির তেল সাশ্রয় করার ক্ষমতা থাকে অনেকটা বেশি। অন্যদিকে দূরের রাস্তায় ভ্রমণ করতে গেলে অবশ্যই অত্যাধিক শক্তি সম্পন্ন ইঞ্জিন প্রয়োজন হবে আপনার। তাছাড়াও বেশি সিসির ইঞ্জিনের প্রারম্ভিক মূল্য যেমন বেশি থাকে তেমনই এর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ কিংবা পেট্রোলের খরচ সমস্তটাই থাকে অনেক বেশি।

স্টাইল

আগেই বলেছি বিভিন্ন সংস্থার তৈরি নানা ধরনের বাইকের মডেল পাওয়া যায় দেশে। তাই অবশ্যই নিজের বাজেট, সেফটি এবং কমফোর্টের কথা চিন্তা করে বাইকের মডেল বেছে নেওয়া উচিত। এক একটি সেগমেন্টের বাইকের বসার ভঙ্গি এক এক ধরনের। সাধারণত যেগুলি স্পোর্টস বাইক হয় সেগুলিতে খানিকটা সামনের দিকে ঝুঁকে বসতে হয় রাইডারকে। সে তুলনায় কমিউটার বাইকগুলির বসার ভঙ্গি অনেক সহজ। একটানা চালানোর জন্য আদর্শ ক্রুজার বাইকগুলিতে বেশ আরামদায়ক ভঙ্গিতে বসতে হবে আপনাকে। এক্ষেত্রে বাইকের হ্যান্ডেল খানিকটা উপরের দিকে থাকে বলে হাত এবং কাঁধে অনেকটাই কম চাপ অনুভূত হয়। তাই এই বিষয়গুলি মাথায় রাখা প্রয়োজন।