চার্জে বসিয়ে বিপত্তি, নতুন কেনা দুই ইলেকট্রিক স্কুটার একসাথে আগুনে পুড়ে ছাই
সরকারের তর্জন গর্জনই সার। পরিস্থিতির উন্নতি যে এক ফোটা হয়নি তা আবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল হায়দ্রাবাদের ঘটনা। এই...সরকারের তর্জন গর্জনই সার। পরিস্থিতির উন্নতি যে এক ফোটা হয়নি তা আবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল হায়দ্রাবাদের ঘটনা। এই মুহূর্তে গোটা দেশজুড়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়টি হলো ব্যাটারি চালিত স্কুটারে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে ডজন খানেকের বেশি এমন ঘটনার সাক্ষী ভারত মে-জুন মাসের প্রবল তাপপ্রবাহের মাঝে এই জাতীয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়ে যাওয়ায় যথেষ্ট চিন্তিত হয়ে পড়েছিল দেশের প্রশাসনিক মহল। মাঝে বর্ষার শুরুতে পরিস্থিতি খানিকটা উন্নতি হলেও আবারও ইলেকট্রিক স্কুটারে আগুন এই ধরনের দু'চাকার বৈদ্যুতিক গাড়ির সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ১৫ই আগস্ট গোটা দেশ যখন আজাদির অমৃত মহোৎসব পালনে ব্যস্ত তখন একসাথে পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে এক হায়দ্রাবাদের বাসিন্দা এক ব্যক্তির দুই সাধের বৈদ্যুতিক স্কুটার। ঘটনাটি ঘটেছে হায়দ্রাবাদের রাজাকোন্ডা পুলিশ কমিশনারের অধীনস্থ এলাকায়। যদিও এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কেউ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট ই-স্কুটার দুটির মালিক টি হরিবাবু বলেন, তিনি সম্প্রতি ব্যাটারি চালিত দু'চাকাগুলি কিনেছিলেন। বিকেল চারটে নাগাদ স্কুটার দুটি বাড়ির সামনে চার্জে বসিয়েছিলেন। তার এক ঘন্টার মধ্যে বিস্ফোরণের শব্দ পান তিনি।
তড়িঘড়ি বাইরে বেরিয়ে তিনি দেখেন দুটি স্কুটারই সম্পূর্ণ আগুনের গ্রাসে চলে গিয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও স্কুটারগুলিকে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এমনকি আগুন ছড়িয়ে পড়ে বাড়ির ভেতরের অংশেও। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ ছুটে আসে অগ্নি নির্বাপন বাহিনী। তাদের তৎপরতায় নিয়ন্ত্ৰণে আসে আগুন। চিরলাপল্লীর সাগর কলোনির এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই চারিদিকে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে যথেষ্ট। উল্লেখ্য, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশে এর আগে এমন ঘটনা ঘটেছে।
আবার এই ঘটনার ক'দিন আগে বনস্থলীপুরমের এনজিও কলোনিতে ঠিক একই রকম ভাবে একটি বৈদ্যুতিক স্কুটারের ব্যাটারিতে বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত হয়েছেন একজন। কোটেশ্বর রাও নামে এক ব্যক্তি তার দাঁড় করানো ই-বাইকের চাবি অন করতে গিয়েই আগুন ধরে যায়। তৎক্ষণাৎ আগুনের হলকায় পুড়ে যায় তার হাত ও শরীরের খানিকটা অংশ। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তারও আগে জুন মাসে তেলেঙ্গানার সিদ্দীপেট জেলায় একটি ব্যাটারিচালিত বাইকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুনের গ্রাসে চলে যায় আস্ত একটি বাড়ি। এছাড়াও গত মে মাসে হায়দ্রাবাদে একটি ইলেকট্রিক বাইকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। যদিও সেখানে আহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি। তবে গত এপ্রিল মাস নাগাদ অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়াতে একটি বাড়ির মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা বৈদ্যুতিক স্কুটারে বিস্ফোরণের ফলে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। আহত হন তিনজন।
একের পর এক এই ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যথেষ্ট বিরক্ত কেন্দ্রীয় সরকার। ইতিমধ্যেই এক কমিটি তৈরি করে সমস্ত ব্যাপারগুলি পর্যবেক্ষণ করছেন তারা। তাছাড়াও ডিফেন্স রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO) এর তদন্তে উঠে আসে ভয়ংকর তথ্য। তাদের পর্যবেক্ষণে জানা গিয়েছে কম দাম নিয়ে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি ব্যাটারি তাদের দু-চাকার মডেলগুলিতে লাগাচ্ছে বিভিন্ন নির্মাতা। সাথে যোগ হয়েছে ভারতীয় উষ্ণ আবহাওয়া। খুব শীঘ্রই এই পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামীতে বৈদ্যুতিক গাড়ি শিল্পের মতো সম্ভাবনাময় এক শিল্প বাস্তবিক ক্ষেত্রে মুখ থুবড়ে পড়বে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। তাই আগাম সতর্কতা হিসাবে ১ অক্টোবর থেকে ব্যাটারির জন্য আলাদা সুরক্ষাবিধি চালু করতে চলেছে সরকার।