5G in India: দেশে কবে ও কেমন খরচে চালু হবে ৫জি, দুরকম কথা সরকার ও টেলিকম সংস্থাদের

গোটা দেশে কবে 5G (৫জি) পরিষেবা রোলআউট হবে, সেটাই এই মুহূর্তে নেটপাড়ার অন্যতম আলোচ্য বিষয়। কারণ স্পেকট্রাম নিলামের পর থেকেই শোনা যাচ্ছে যে, ভারতে খুব…

গোটা দেশে কবে 5G (৫জি) পরিষেবা রোলআউট হবে, সেটাই এই মুহূর্তে নেটপাড়ার অন্যতম আলোচ্য বিষয়। কারণ স্পেকট্রাম নিলামের পর থেকেই শোনা যাচ্ছে যে, ভারতে খুব শীঘ্রই (সম্ভবত অক্টোবরের মধ্যে) লঞ্চ হতে চলেছে সুপারফাস্ট 5G নেটওয়ার্ক সার্ভিস। ফলে পরবর্তী প্রজন্মের দুরন্ত গতির নেট কানেকশন হাতের মুঠোয় পেতে আপামর দেশবাসীকে যে আর খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না বলেই ধরে নেওয়া যায়। এদিকে কারা সর্বপ্রথম দেশে 5G পরিষেবা নিয়ে আসবে, সেই নিয়েও টেক দুনিয়া রীতিমতো সরগরম হয়ে রয়েছে। এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন রিপোর্টে পাওয়া খবর অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, রোলআউটের প্রথম পর্যায়ে দেশের ১৩ টি শহরে 5G পরিষেবা উপলব্ধ হবে। এই শহরগুলির মধ্যে রয়েছে গান্ধীনগর, আহমেদাবাদ, গুরুগ্রাম, মুম্বাই, পুনে, হায়দ্রাবাদ, চেন্নাই, জামনগর, কলকাতা, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, চণ্ডীগড়, এবং লখনউ। তবে তারপরে ধীরে ধীরে খানিকটা সময়ের মধ্যেই গোটা দেশের মানুষ নবপ্রজন্মের দুরন্ত গতির নেটওয়ার্ক পরিষেবা উপভোগ করতে সক্ষম হবেন বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু ঠিক কবে পরিষেবা চালু হবে, তার নির্দিষ্ট দিনক্ষণ যেন কিছুতেই নিশ্চিত হচ্ছে না। এমনকি সম্প্রতি এই বিষয়টি নিয়ে এক দোলাচলের সৃষ্টি হয়েছে!

সরকার কিংবা টেলিকম সংস্থা, কেউই নিশ্চিতভাবে 5G রোলআউটের দিনক্ষণ জানাতে পারছে না

যদিও বিভিন্ন রিপোর্টে বলা হচ্ছে যে আর কিছুদিনের মধ্যেই আপামর দেশবাসীর হাতের মুঠোয় আসবে ৫জি, তবে ঠিক কবে এই পরিষেবা লঞ্চ হবে তার কোনো সুনিশ্চিত দিনক্ষণ এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। আর সবচেয়ে লক্ষণীয় ব্যাপারটি হল, এ বিষয়ে সরকার এবং টেলিকম সংস্থাগুলির তরফ থেকে পাওয়া বিবৃতিতেও বেশ খানিকটা ফারাক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, গত মাসের শেষের দিকে ৫জি স্পেকট্রামের নিলামপর্ব সম্পন্ন হওয়ার পরেই রিলায়েন্স জিও (Reliance Jio) জানিয়েছিল যে, তারা স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব উপলক্ষে তাদের ৫জি পরিষেবা লঞ্চ করবে। এর ফলে ধরে নেওয়া হয়েছিল যে, ১৫ আগস্টই জিও-র ৫জি সার্ভিস চালু হবে, তবে আদতে কিন্তু তা হয়নি। এখন আবার খবর রটেছে যে, যেহেতু আগামী ২৯ আগস্ট রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ (Reliance Industries)-এর বার্ষিক সাধারণ সভা (AGM) রয়েছে, তাই সেদিনই সংস্থাটি তাদের ৫জি সার্ভিস চালু করবে।

অন্যদিকে, ৫জি লঞ্চের বিষয়ে এয়ারটেল (Airtel)-এর তরফেও জানা গিয়েছিল যে, চলতি আগস্ট মাসেই তারা দেশে ৫জি চালু করবে ৷ কিন্তু আগস্ট শেষ হতে তো আর মাত্র চারদিন বাকি, আর এখনও সংস্থার তরফে ৫জি লঞ্চের প্রসঙ্গে কোনো নিশ্চিত বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তাই সংস্থাটির তরফে দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে ইতিমধ্যেই সংশয় দেখা দিয়েছে ব্যবহারকারীদের মনে। আবার, খুব শীঘ্রই দিল্লি এনসিআর-এর বাসিন্দাদের জন্য ভোডাফোন আইডিয়া (Vodafone Idea) বা ভিআই (Vi) তাদের ৫জি সার্ভিস রোলআউট করবে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। তবে সারা দেশে কবে তারা এই পরিষেবা নিয়ে আসবে, সে সম্পর্কে এখনও কোনো নিশ্চিত তথ্য মেলেনি। সেক্ষেত্রে, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় যোগাযোগ, ইলেকট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেছেন যে, ১২ অক্টোবরের মধ্যে দেশে সস্তা ৫জি সার্ভিস চালু হবে। কিন্তু সব মিলিয়ে স্বাভাবিকভাবেই ৫জি-র আগমনের দিনক্ষণকে কেন্দ্র করে আমজনতার মনে চরম সংশয়ের আবির্ভাব ঘটেছে।

5G-র দাম সম্পর্কেও সরকার এবং টেলিকম সংস্থাগুলির বিবৃতিতে রয়েছে অসঙ্গতি

শুধু ৫জি রোলআউটের দিনক্ষণ নিয়েই নয়, আসন্ন পঞ্চম প্রজন্মের নেট পরিষেবার দাম নিয়েও সরকার এবং টেলিকম সংস্থাগুলির মধ্যে মতান্তর দেখা যাচ্ছে। যদিও আসন্ন ৫জি পরিষেবার দাম ঠিক কত হবে, সে নিয়ে কোনো টেলিকম সংস্থাই এখনও পর্যন্ত মুখ খোলেনি, তবে আকারে-ইঙ্গিতে সকলেই স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে যে প্রিমিয়াম মূল্যে (মানে চড়া দামে) এদেশে আসবে ৫জি পরিষেবা। অর্থাৎ, ‘রকেটের’ গতির নেট কানেকশন পেতে হলে গ্রাহকদেরকে ৪জি (4G)-র তুলনায় বেশ খানিকটা অতিরিক্ত গাঁটের কড়ি খসাতে হবে। তবে সম্প্রতি অশ্বিনী বৈষ্ণব আবার জানিয়েছেন যে, ভারতে বেশ সস্তায় আসবে ৫জি। তাই আদতে এই ছবিটা ঠিক কেমন হবে, তা একমাত্র সময়ই বলতে পারবে।

5G পরিষেবা ব্যবহারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষায় আমজনতা

উল্লেখ্য যে, বিগত দু-বছর ধরেই ভারতে ৫জি রোলআউট করাকে কেন্দ্র করে নানা জল্পনাকল্পনা শোনা যাচ্ছে। পরবর্তী প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সার্ভিস ব্যবহারের আশায় জনগণ এতটাই উদগ্রীব হয়ে রয়েছেন যে ইতিমধ্যেই বহু মানুষই ৫জি স্মার্টফোন পকেটস্থ করে ফেলেছেন। আর ইউজারদের এই বিপুল চাহিদাকে প্রত্যক্ষ করে প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০-১৫ টি ৫জি স্মার্টফোন ভারতে লঞ্চ হচ্ছে, যেগুলিকে ৫জি রেডি এবং ফিউচার ফোন হিসেবে দাবি করছে নির্মাতা সংস্থাগুলি। তবে ইতিমধ্যেই এমন বহু ফোন মানুষের নজরে এসেছে, যেগুলিকে ৫জি সাপোর্টেড বলে দাবি করা হলেও আদতে কিন্তু সেগুলিতে পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক অ্যাক্সেস করতে পারবেন না ইউজাররা।

তবে এইরকম তুচ্ছ কিছু ঘটনা সত্ত্বেও একদম চুটিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সার্ভিসের মজা উপভোগ করার আশায় ভারতীয়রা পূর্ণ উদ্যমে ৫জি ফোন কিনে চলেছেন। বলা হচ্ছে, গত দুই বছরে ২০০টিরও বেশি ৫জি ফোন লঞ্চ হয়েছে এবং কোটি কোটি মানুষ সেই ফোনগুলিকে ইতিমধ্যেই পকেটস্থ করে ফেলেছেন। এক্ষেত্রে ভারত সেরা স্মার্টফোন নির্মাতা শাওমি (Xiaomi) দাবি করেছে যে, তারা ২০২০ সালের মে থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ৭০ লক্ষ ৫জি ফোন বিক্রি করেছে। এখনও দেশে ৫জি উপলব্ধ হয়নি, তার আগেই এই ধরনের চমকপ্রদ পরিসংখ্যান উঠে আসা যে নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর সেকথা বলাই বাহুল্য।