Earbuds: ইয়ারফোন ব্যবহার করলে সাবধান, বিশ্ব জুড়ে কোটি কোটি মানুষ কালা হওয়ার পথে

হেডফোন, ইয়ারফোন বা ইয়ারবাডস – এই ইলেকট্রনিক প্রোডাক্টগুলি বর্তমানে আমাদের সকলেরই দৈনন্দিন জীবনের এক অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। অফিস হোক বা বাড়ি, দিনের অনেকটা সময়েই আমাদের কানে এই ধরনের যন্ত্রগুলি গোঁজা থাকে। সারা দিনের ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তিকে দূরে সরিয়ে মন ভালো করতে অনেকেই মোবাইলে গান শোনা বা সিনেমা দেখাকে এক অন্যতম বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন, যার ফলে চলতি সময়ে এই ধরনের ইলেকট্রনিক গ্যাজেটগুলির ব্যবহার ব্যাপক পরিমাণে বেড়েছে। তবে আপনারা কি জানেন যে, দীর্ঘ সময় ধরে এই ধরনের যন্ত্রগুলিকে কানে লাগিয়ে রাখলে দেখা দিতে পারে বড়োসড়ো রকমের বিপদ, এমনকি মানুষ চিরতরের জন্য শ্রবণশক্তিও হারিয়ে ফেলতে পারে! আজ্ঞে হ্যাঁ, ঠিকই বলছি; সম্প্রতি একাধিক গবেষণায় পাওয়া তথ্য থেকে এমন কথাই জানা গিয়েছে।

দীর্ঘক্ষণ কানে হেডফোন লাগিয়ে রাখলে হ্রাস পেতে পারে শ্রবণশক্তি

বিএমজে গ্লোবাল হেলথ (BMJ Global Health) জার্নালে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, হেডফোন ও ইয়ারবাডসের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং অত্যন্ত জোরে গান শোনার ফলে অদূর ভবিষ্যতে প্রায় এক বিলিয়ন কিশোর-কিশোরী এবং তরুণের শ্রবণশক্তি হ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলিনার মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলেছেন যে, ইউজারদের সুরক্ষার্থে সরকারের এই ধরনের অডিও গ্যাজেটগুলির ব্যবহারের সঠিক নিয়ম সংক্রান্ত একটি কঠোর নির্দেশিকা জারি করা উচিত। অন্যদিকে, সিডিসি (CDC অর্থাৎ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল)-এর আর-একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ইয়ারফোনে হাই-ভলিউমে গান শোনার জন্য ৬-১৯ বছর বয়সী প্রায় ১২.৫ শতাংশ শিশু ও কিশোর-কিশোরী (প্রায় ৫.২ মিলিয়ন) এবং ২০-৬৯ বছর বয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের ১৭ শতাংশ (প্রায় ২৬ মিলিয়ন) বেশ গুরুতর রকমের কানের সমস্যায় ভুগছেন। এর পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (World Health Organization বা WHO) আরও একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ৪৩ কোটিরও বেশি মানুষ বর্তমানে বিভিন্ন রকমের কানের সমস্যায় আক্রান্ত।

শ্রবণশক্তি হ্রাসের পাশাপাশি দেখা দিতে পারে আরও নানাবিধ সমস্যা

শুধু শ্রবণশক্তি হ্রাসই নয়, স্মার্টফোন, হেডফোন এবং ইয়ারবাডসের মতো অডিও ডিভাইসগুলি দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করলে মানবশরীরে আরও নানা ধরনের জটিল সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকটা বেশি সময় ধরে ইয়ারফোন ব্যবহার করলে কর্ণকুহরে চাপের তারতম্য ঘটে। এর ফলে কান ও সংলগ্ন এলাকায় ব্যথা হতে পারে, এমনকি মাথা ঘোরা এবং মাইগ্রেনের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এছাড়া, দীর্ঘক্ষণ ইয়ারফোন কানে লাগিয়ে রাখলে কর্ণকুহরে বায়ু চলাচল করতে পারে না, যার ফলে কানের ভিতরের আর্দ্র পরিবেশে জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তদুপরি, হেডফোন থেকে যে ইলেক্ট্রম্যাগনেটিক তরঙ্গ সৃষ্টি হয়, সেটি মস্তিষ্কের জন্যও অত্যন্ত ক্ষতিকর।

তাই ইউজারদের সুরক্ষার স্বার্থে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, অডিও গ্যাজেট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে শব্দের মাত্রা তরুণ ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৮০ ডেসিবেল এবং শিশুদের জন্য ৭৫ ডেসিবেল হওয়া উচিত। তদুপরি, সীমিত সময়ের জন্যই ব্যবহারকারীদের এই ধরনের প্রোডাক্টগুলি ব্যবহার করতে হবে, যা অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের পক্ষে করে ওঠা সম্ভব হয় না। এছাড়া, প্রিয় কোনো গায়কের কনসার্টে কিংবা নাইটক্লাবে গেলে ১০৪ ডেসিবেল থেকে শুরু করে ১১২ ডেসিবেল পর্যন্ত তীব্রতায় মানুষকে গান শুনতে হয়, যাতে তারা অতিশয় আনন্দও পান বটে। কিন্তু এক্ষেত্রে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে যে, সাময়িক আনন্দ হলেও উচ্চমাত্রার শব্দ কিন্তু কান, চুলের কোষ, ঝিল্লি, স্নায়ু সহ দেহের অন্যান্য অনেক অঙ্গের গুরুতর রকমের ক্ষতিসাধন করে। তাই অদূর ভবিষ্যতে নিজের শ্রবণশক্তি কিঞ্চিৎ কিংবা পাকাপাকিভাবে না হারাতে চাইলে ইউজারদের অবশ্যই নিম্নোক্ত নির্দেশিকাগুলি মেনে চলা উচিত।

স্থায়ী কিংবা অস্থায়ীভাবে শ্রবণশক্তি না হারাতে চাইলে এই নিয়মগুলি অবশ্যই মেনে চলুন

১. ভলিউম লো করে রাখুন

গান শোনা কিংবা সিনেমা দেখার জন্য তো বটেই, এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে রাস্তায় ভ্রমণের সময় আশেপাশের যানবাহনের তীব্র শব্দকে এড়িয়ে চলতে মানুষ হেডফোনের ভলিউম হাই করে রাখেন। কিন্তু আগেই বলেছি যে, এতে শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়ার (এমনকি চিরতরের মতো খোয়া যাওয়ার) সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই সবসময় কম ভলিউমে ইয়ারফোনে গান শুনুন। কিছু মানুষ আছেন যারা এমন হাই-ভলিউম করে রাখেন যে, পাশে বসা ব্যক্তিটিও তিনি হেডফোনে কি শুনছেন তা জেনে যান। তবে নিজেদের কানের সুরক্ষার কথা ভেবে এমন কাজ কিন্তু ব্যবহারকারীদের করা কোনোমতেই উচিত নয়।

২. নয়েজ ক্যান্সেলেশন সাপোর্টযুক্ত হেডফোন ব্যবহার করুন

গান শোনার সময় ব্যাকগ্রাউন্ডের শব্দ যাতে কানে এসে না পৌঁছোতে পারে, তার জন্য অনেকেই হেডফোনের ভলিউম বাড়িয়ে রাখেন। সেক্ষেত্রে বলি, এই ধরনের সমস্যার হাত থেকে রেহাই পেতে ব্যবহারকারীরা নয়েজ ক্যান্সেলেশন (Noise Cancellation) সাপোর্টযুক্ত হেডফোন ব্যবহার করতে পারেন। এতে ব্যাকগ্রাউন্ডের শব্দ তো শোনা যাবেই না, সেইসাথে জোরে গান শোনার ফলে ব্যবহারকারীদেরকে কানের সমস্যায়ও ভুগতে হবে না।

৩. ইয়ারবাডস নয়, হেডফোন ব্যবহার করুন

কাজের প্রয়োজনে যদি প্রতিদিন লম্বা সময় ধরে হেডফোন বা ইয়ারফোন ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে তো আর ইউজারদের কাছে এই ডিভাইসগুলিকে দূরে সরিয়ে রাখার কোনো সুযোগ থাকে না। তবে সেক্ষেত্রেও চাইলে কিন্তু তারা নিজেদের কানকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন। কানের সমস্যাকে এড়িয়ে চলতে ইয়ারবাডসের বদলে হেডফোন ব্যবহার করতে পারেন ইউজাররা। কারণ ইয়ারবাডস ইয়ারলোবকে পুরোপুরিভাবে আচ্ছাদিত করে রাখে এবং কানের পর্দার একদম কাছাকাছি থাকে। অন্যদিকে, ওভার-ইয়ার হেডফোনগুলি সবদিক দিয়ে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করে। এই সমস্ত হেডফোন যেহেতু সরাসরি ইয়ার ক্যানালকে টাচ করে না, তাই শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনাও অনেকটাই কমে যায়।

৪. একটানা অনেকক্ষণ ধরে ইয়ারফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে মাঝে কিছুটা সময় কানকে রেহাই দিন

একটানা ৩০ মিনিট ইয়ারফোন ব্যবহারের পর অন্ততপক্ষে ৫ মিনিট কানকে রেহাই দিন। আবার, কাজের প্রয়োজনে নিতান্তই যদি প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে রাখতে হয়, তাহলে অবশ্যই এরপর ১০ মিনিট কানকে বিশ্রাম দেওয়ার চেষ্টা করুন। এই পন্থা অবলম্বন করলে শ্রবণশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি থেকে অনেকটাই মুক্ত হতে পারবেন ইউজাররা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *