Smartphones: চলতি বছরে ৫৩০ কোটি মোবাইল বর্জ্যে পরিণত হবে, জেনে নিন কারণ

ই-ওয়েস্ট (E-waste) বা ইলেকট্রনিক বর্জ্য কথাটার সাথে আমরা অনেকেই পরিচিত। তবে যারা জানেন না তাদের অবগতের জন্য জানিয়ে রাখি, ই-বর্জ্য হল পরিত্যক্ত বৈদ্যুতিক বা ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম তথা যন্ত্রপাতি। আমাদের দ্বারা ব্যবহৃত – ফ্রিজ, ক্যামেরা, মাইক্রোওয়েভ, ওয়াশিং মেশিনের মতো কনজিউমার ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে শুরু করে করে টেলিভিশন, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন ইত্যাদি প্রত্যেকটি গ্যাজেটই কিন্তু একটা সময় পর অকেজো হয়ে বর্জ্যে পরিণত হয়। যারপর সেগুলিকে বাড়ির কোণায় জমিয়ে রাখা, নয়তো যেখানে সেখানে ফেলে অথবা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আর এইরূপ ইলেকট্রনিক বর্জ্যের নিয়মনীতিহীন ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াকরণের কারণে বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের উপর। তাই এখন Apple, Google, Samsung সহ বহু ছোট-বড় টেক সংস্থা ই-বর্জ্য কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। সাম্প্রতিক একটি সার্ভে থেকে উঠে এসেছে, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী ১৬ বিলিয়ন বা ১,৬০০ কোটি মোবাইল ফোনের প্রায় এক তৃতীয়াংশ ই-বর্জ্যে পরিণত হবে এবং এই বিপুল সংখ্যক হ্যান্ডসেটের খুবই ছোট একটি অংশকে হয়তো সঠিকভাবে প্রক্রিয়াকরণ করা হবে।

২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে ৫.৩ বিলিয়ন মোবাইল ফোন ই-বর্জ্যে পরিণত হবে

ওয়েস্ট ইলেকট্রিকাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইকুইপমেন্ট রিসাইকেলিং’ বা সংক্ষেপে WEEE ফোরাম ‘ইন্টারন্যাশনাল ই-ওয়েস্ট ডে’ -তে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে তারা বলেছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ প্রায় ৫.৩ বিলিয়ন বা ৫৩০ কোটি মোবাইলকে ফেলে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে, অব্যবহৃত ডাম্প ফোনগুলিকে একে অপরের উপরে সমতল ভাবে রাখা হয় তবে এর উচ্চতা প্রায় ৫০,০০০ কিমি হবে, যা পৃথিবী এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪২০ কিমি উচ্চতায় অবস্থিত ‘ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন’ (ISS) -এর মধ্যেকার দূরত্বের চেয়ে ১২০ গুণেরও বেশি।

ইলেকট্রনিক বর্জ্যের বিশেষ উপকরণগুলি পুনর্ব্যবহার করার পরামর্শ WEEE ফোরামের

একটি স্মার্টফোন নির্মাণের ক্ষেত্রে বহুবিধ বিশেষ উপকরণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন – প্লাস্টিক, গ্লাস, সিন্থেটিক রাবার, টিন, সিলিকন, অ্যালুমিনিয়াম, ব্রোঞ্জ, লিকুইড ক্রিস্টাল, লিথিয়াম, ট্যানটালাম, কার্বন, পলিকার্বোনেট ইত্যাদি। পাশাপাশি – সোনা, তামা, রূপা, প্যালাডিয়াম সহ অন্যান্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদানও ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা একটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন যে, উল্লেখিত উপাদান সহ স্মার্টফোনকে মানুষ তাদের বাড়িতে ফেলে রাখে অথবা পুড়িয়ে ফেলে, যা পরিবেশ এবং বিশেষত মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক প্রমাণিত হতে পারে।

এই বিষয়ে WEEE ফোরামের ডিটেক্টর জেনারেল প্যাসকেল লেরয় বলেছেন, “মানুষেরা বুঝতে পারছেন না যে এই সমস্ত আপাতদৃষ্টিতে তুচ্ছ উপাদানগুলির মূল্য অনেক এবং বিশ্বস্তরে এগুলিকে একত্র করলে কয়েক মিলিয়ন মেট্রিক টন হবে।” আর এই বিপুল পরিমাণ ই-বর্জ্য সঠিকভাবে ‘রিসাইকেল’ করা খুবই জরুরি।

প্রসঙ্গত আলোচ্য সার্ভে ২০২২ সালের জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে WEEE ফোরামের সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল এবং ফলাফল একত্রিত করা হয়েছে ‘ইউএন ইনস্টিটিউট ফর ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ’ (UNITAR) ও সাসটেইনেবল সাইকেল (SCYCLE) প্রোগ্রাম দ্বারা। এক্ষেত্রে সার্ভের দায়িত্বে থাকা ম্যাগডালেনা চ্যারিটানোভিজ বলেছেন যে, “শুধুমাত্র ২০২২ সালেই আনুমানিক মোট ২৪.৫ মিলিয়ন টনের ছোট ছোট ইলেক্ট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক ইকুইপমেন্ট (EEE) আইটেম যেমন – সেল ফোন, ইলেকট্রিক টুথব্রাশ, টোস্টার এবং ক্যামেরা বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত হয়েছে, যা গিজার গ্রেট পিরামিডের ওজনের চারগুণ। আর এই গ্যাজেটগুলি প্রায় ৮% ইলেকট্রনিক্স বর্জ্য তৈরী করে, যা ট্র্যাশ বিনে ফেলে দেওয়া হয় এবং পুড়িয়ে ফেলা হয়।”