5G ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াবে? কি বলছে ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের গবেষণা?

স্মার্টফোন বা এই ধরনের ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন ডিভাইস থেকে যে রেডিয়েশন নির্গত হয়, সেকথা আমাদের সকলেরই জানা। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতি সময়ে মোবাইল ফোনের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে এর বিকিরণ নিয়েও মানুষের মধ্যে ক্রমশ উদ্বেগ বাড়ছে। অনেকেরই ধারণা যে, দীর্ঘক্ষণ ফোন ব্যবহার করলে ব্রেন ক্যান্সার হতে পারে। আবার, ক্যান্সার ছাড়াও মানবদেহের অনেক ভয়ঙ্কর ক্ষতিও এর প্রভাবে হতে পারে বলে একাধিক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু এই বিষয়ে বিজ্ঞান কী বলে? সত্যিই কি এরকম কোনো পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে যা থেকে বলা যায় যে, মোবাইল ফোনের রেডিয়েশনের কারণে মানুষের ক্যান্সার হতে পারে? সম্প্রতি এক রিপোর্টে এই সমস্ত বিষয় সম্পর্কে ইউজারদের মনের কৌতূহল বেশ খানিকটা নিবারণ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট (National Cancer Institute)। সেলফোন থেকে নির্গত রেডিওফ্রিকোয়েন্সি বিকিরণের তীব্রতা এবং সেইসাথে এর প্রভাবে মানবদেহের কীরূপ ক্ষতি হতে পারে, এ সম্পর্কিত বেশ কিছু তথ্য হালফিলে তারা জনসমক্ষে এনেছে।

মোবাইল নেটওয়ার্কের রেডিয়েশন থেকে কি সত্যিই ক্যান্সার হতে পারে?

সাধারণভাবে বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করেন যে, মোবাইল ফোন অধিক পরিমাণে ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্ক এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি এই সমস্ত জায়গায় টিউমার হওয়ার সম্ভাবনাও বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। বিশেষত মাথার কাছাকাছি ফোন রাখলে এই ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে বলে অনেকেই মনে করেন। আবার নতুন প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে অনেক ইউজারেরই ধারণা যে, ৫জি (5G) নেটওয়ার্ক এর পূর্ববর্তী সেলুলার নেটওয়ার্কগুলির চেয়ে বেশ অনেকটাই আলাদা। এই নেটওয়ার্ক সিগন্যাল বহন করতে রেডিও তরঙ্গের ওপর নির্ভর করে এবং কানেকশনের জন্য এটির একাধিক অ্যান্টেনা এবং ট্রান্সমিটারের প্রয়োজন হয়, যে কারণে এটি ২জি (2G), ৩জি (3G), কিংবা ৪জি (4G)-র তুলনায় অনেক বেশি ক্ষতিকর। তবে এ ব্যাপারে কী বলছে ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট?

গবেষকদের মতে, বিকিরণ বা রেডিয়েশনের দুটি ধরন রয়েছে – আয়নাইজিং ও নন-আয়নাইজিং। আয়নাইজিং তরঙ্গগুলির তরঙ্গদৈর্ঘ্য স্বল্প হলেও এগুলির ফ্রিকোয়েন্সি খানিকটা বেশি, যা মানবদেহের পক্ষে বিপজ্জনক। তবে অন্যদিকে, নন-আয়নাইজিং তরঙ্গগুলির তরঙ্গদৈর্ঘ্য দীর্ঘতর হলেও এগুলিতে কম ফ্রিকোয়েন্সি থাকে, ফলে এটি কোনোভাবেই মানবদেহের প্রভূত ক্ষতিসাধন করে না। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, সেলফোনগুলি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রামের রেডিওফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জে বিকিরণ নির্গত করে। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ প্রজন্মের নেটওয়ার্কে ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জের পরিমাণ থাকে ০.৭ থেকে ২.৭ গিগাহার্টজের মধ্যে, এবং ৫জি নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে এই সাংখ্যমানটি ৮০ গিগাহার্টজের কাছাকাছি দাঁড়ায়। তবে আনন্দের বিষয় এটাই যে, এই প্রতিটি ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জকে নন-আয়নাইজিং ক্যাটাগরিতে ফেলা যায়। অর্থাৎ, এগুলির ফ্রিকোয়েন্সি খুবই কম; ফলে এটি মানবদেহের ডিএনএ (DNA)-কে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না। ফলে শরীরে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও কোনোমতেই বৃদ্ধি পায় না।

নিশ্চিন্তে মোবাইল ব্যবহার করতে পারেন ইউজাররা, জানালো ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট

সবমিলিয়ে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, সেলফোনের ব্যবহার মানবদেহে ব্রেন ক্যান্সার বা অন্য কোনো ধরনের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায় না। তদুপরি, দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ব্যবহার করলে অন্য কোনো প্রাণঘাতী রোগ হওয়ারও একেবারেই কোনো সম্ভাবনা নেই। ফলে একথা বেশ জোর দিয়েই বলা যায় যে, মোবাইল বা ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের বিকিরণ থেকে মানুষের স্বাস্থ্যের সমস্যা হয় বা কোনো প্রাণীর ক্ষতি হয় – এর কোনো যথাযথ প্রমাণ এখনও অবধি পাওয়া যায়নি। সুতরাং, আগামী দিনে এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার প্রয়োজন নেই বললেই চলে।