জলের দামে পাওয়া যাবে 5G স্মার্টফোন? বিশেষ পদক্ষেপ নিচ্ছে TRAI

5G হ্যান্ডসেটের উচ্চ মূল্য দেশের ডিজিটাল অগ্রগতির পথে বাধার সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে গত বছরের ১ অক্টোবর ভারতে চালু হয়েছে 5G পরিষেবা৷ আর তার পর থেকেই এই দুরন্ত গতির পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সার্ভিস ক্রমাগত একের পর এক শহরে পৌঁছে দিচ্ছে দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই টেলিকম কোম্পানি Reliance Jio এবং Airtel। এর ফলে বর্তমানে ভারতের নির্বাচিত কিছু শহরের বাসিন্দারা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নিজেদের 5G স্মার্টফোনে বিদ্যমান 4G সিম মারফতই কোম্পানিদ্বয়ের আনলিমিটেড 5G নেট সার্ভিস ব্যবহার করতে সক্ষম হচ্ছেন। উল্লেখ্য যে, চলতি সময়ে গোটা দেশে 5G রোলআউটকে কেন্দ্র করে উক্ত দুটি সংস্থার মধ্যে জোর প্রতিযোগিতা চলছে। উভয় টেলিকম কোম্পানিই ২০২৪ সালের মধ্যে গোটা দেশে এই সার্ভিসকে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। সেক্ষেত্রে অদূর ভবিষ্যতে আপামর দেশবাসী যাতে এই বিদ্যুৎ গতির নেট পরিষেবা ব্যবহারের মজা উপভোগ করতে সক্ষম হন, তার জন্য হালফিলে একটি বিশেষ কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা ট্রাই (TRAI)।

সস্তায় যাতে আপামর দেশবাসী 5G স্মার্টফোন কেনার সুযোগ পায়, সেদিকে কড়া নজর রাখবে TRAI

উল্লেখ্য যে, এয়ারটেল এবং জিও বর্তমানে ভারতের নির্বাচিত কিছু শহরের বাসিন্দাদেরকে আনলিমিটেড ৫জি পরিষেবা ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে। এর জন্য গ্রাহকদের কাছে কেবলমাত্র একটি পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটিযুক্ত স্মার্টফোন থাকাই যথেষ্ট। সেক্ষেত্রে যদি এদেশের মার্কেটে সাশ্রয়ী মূল্যে ৫জি হ্যান্ডসেট উপলব্ধ না থাকে, তাহলে আপামর দেশবাসী কোনোমতেই এই পরিষেবা ব্যবহারের মজা উপভোগ করতে পারবে না। এর ফলে ভারতের ডিজিটাল উন্নতি ব্যাপকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হবে। তাই সকল শ্রেণির গ্রাহকদের জন্য যাতে কম দামে বাজারে ৫জি স্মার্টফোন উপলব্ধ থাকে, সেদিকে বিশেষ মনোনিবেশ করার পরিকল্পনা করেছে ট্রাই।

5G হ্যান্ডসেটের উচ্চ মূল্য দেশের ডিজিটাল অগ্রগতির পথে বাধার সৃষ্টি করতে পারে

উল্লেখ্য, ট্রাই-এর চেয়ারম্যান পি. ডি. বাঘেলা (P. D. Vaghela) সম্প্রতি ইন্টারনেট অ্যান্ড মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া কর্তৃক আয়োজিত এক ডিজিটাল সামিটে জানিয়েছেন যে, ৫জি হ্যান্ডসেটের উচ্চ মূল্য যাতে দেশের ডিজিটাল উন্নতির পথে কোনোরকম ব্যাঘাত ঘটাতে না পারে, সেদিকে অদূর ভবিষ্যতে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবে সংস্থাটি। সেক্ষেত্রে আগামী দিনে বিষয়টি সম্পর্কে বিশদে বর্ণনা করে একটি বিশেষ পরামর্শপত্র প্রকাশের পরিকল্পনা করেছে ট্রাই। অর্থাৎ সহজে বললে, সাশ্রয়ী মূল্যে যাদের এদেশের মানুষ ৫জি পরিষেবা ব্যবহারের মজা উপভোগ করার সুযোগ পান, তার জন্য উল্লেখযোগ্য তথা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চলতি সময়ে ট্রাই একেবারে উঠেপড়ে লেগেছে। তবে গ্রামাঞ্চলের মানুষ যাতে অতি অনায়াসে এই পরিষেবা ব্যবহার করতে সক্ষম হন, তার জন্য সংস্থাটি কোনো ভর্তুকি প্রদানের ব্যবস্থা করবে কি না, সে বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়।

ভারতীয় মার্কেটে ২০,০০০ টাকার কম মূল্যের 5G ফোনের প্রাপ্যতা বাড়ানো প্রয়োজন

প্রসঙ্গত কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে যন্ত্রাংশের মূল্যবৃদ্ধি সহ আরও একাধিক কারণে স্মার্টফোনের গড় বিক্রয় মূল্য প্রায় ২০% বেড়ে গিয়েছে। উল্লেখ্য যে, ২০১৮ সালে একটি চলনসই হ্যান্ডসেট কিনতে গেলে খরচ পড়তো ৫,৯৯১ টাকা; কিন্তু ২০২২ সালে সংখ্যাটি বেড়ে হয়েছে ৭,১২৬ টাকা। স্বভাবতই 5G স্মার্টফোনের দামও ক্রমশ বেড়েই চলেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, যদিও 5G ফোনের শিপমেন্টের পরিমাণ ইদানীংকালে কিছুটা বেড়েছে, তবে ডিভাইসগুলির চড়া দাম গ্রাহকদের কাছে প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলে রাখি, বর্তমানে 5G ফোনের গড় বিক্রয় মূল্য প্রায় ৩২,০০০ টাকা। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, অদূর ভবিষ্যতে আপামর দেশবাসীর হাতের মুঠোয় পঞ্চম প্রজন্মের নেটওয়ার্ক পরিষেবা পৌঁছে দিতে গেলে ভারতীয় মার্কেটে ২০,০০০ টাকার কম মূল্যের 5G ফোনের প্রাপ্যতা আরও অধিক পরিমাণে বাড়ানো প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে ইউজারদের সুবিধার্থে আগামী দিনে ট্রাই ঠিক কী পদক্ষেপ নেয়, এখন সেটাই দেখার।