Apple নাকি Samsung? কোন সংস্থার ফোন ব্যবহারকারী বেশি, রিপোর্টে অবাক করা তথ্য

Samsung -কে পেছনে ফেলে সর্বাধিক সংখ্যক গ্রাহক এখন Apple -এর দখলে

বিশ্ব ইলেক্ট্রনিক্স বাজারে প্রতিনিয়ত চলতে থাকা প্রতিযোগিতার অন্যতম দুই প্রতিদ্বন্দ্বি হল আইফোনের কোম্পানি Apple এবং অ্যান্ড্রয়েডের ফোনের রাজা Samsung। টিম কুকের সংস্থাটি যেখানে প্রিমিয়াম হ্যান্ডসেট আনার দিকে অধিক মনোনিবেশ করেছে, সেখানে দক্ষিণ কোরিয়া ভিত্তিক টেক জায়ান্টটি বাজেট থেকে শুরু করে ফ্ল্যাগশিপ প্রতিটি সেগমেন্টের উপর সমান ফোকাস রেখেছে। অন্যান্য বিভাগে Samsung বিজয়ী থাকলেও, প্রিমিয়াম সেগমেন্টে প্রথম স্থানটি দীর্ঘ সময় ধরে Apple -এর দখলেই রয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, গত বছর উক্ত আমেরিকা ভিত্তিক সংস্থাটি ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া স্মার্টফোন (most sold smartphones in 2022) তালিকারও শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে। এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী বিক্রি হওয়া প্রতি ১০টি স্মার্টফোনের মধ্যে ৮টিই ছিল আইফোন (iPhone)। আর এখন, গ্লোবাল স্ট্যাটস (Global Stats) প্রদত্ত একটি লেটেস্ট রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে – ২০২৩ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে ‘সবচেয়ে জনপ্রিয় স্মার্টফোন কোম্পানি’ (most popular smartphone company) হিসেবে Samsung -কেও ছাপিয়ে গেছে Apple।

Samsung -কে পেছনে ফেলে সর্বাধিক সংখ্যক গ্রাহক এখন Apple -এর দখলে

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের মধ্যেই স্যামসাং বিশ্বব্যাপী একাধিক আকর্ষণীয় হ্যান্ডসেট লঞ্চ করেছে। এই তালিকায় – Samsung Galaxy S23 ফ্ল্যাগশিপ সিরিজ এবং একাধিক A-সিরিজের স্মার্টফোন সামিল রয়েছে। অতএব, ২০২৩ সালের প্রথমার্ধ তথা ‘ফিন্যান্সিয়াল ইয়ার এন্ডিং কোয়ার্টার’ স্যামসাংয়ের যথেষ্ট ব্যস্ততার মধ্যে কেটেছে বললে ভুল বলা হবে না। তুলনায় অ্যাপলকে, ডিভাইস আনার ক্ষেত্রে ততটা মরিয়া হয়ে উঠতে দেখিনি আমরা। কিন্তু তাসত্ত্বেও স্যামসাংকে হারিয়ে ‘সবচেয়ে জনপ্রিয় স্মার্টফোন কোম্পানি’ হিসাবে অ্যাপল উঠে এসেছে তালিকার শীর্ষে। মনে করা হচ্ছে, ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হওয়ার দরুন স্যামসাংয়ের এই অবস্থা।

গ্লোবাল স্ট্যাটস প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, ২০২২ সালে সমস্ত স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের মধ্যে স্যামসাংয়ের মার্কেট শেয়ার সবথেকে বেশি ছিল। যদিও গত ছয় মাসের মধ্যে, স্যামসাং এবং তার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপলের মধ্যে মার্কেট শেয়ারের ব্যবধান কমতে থাকে। আসলে, সেপ্টেম্বরে আইফোন ১৪ (iPhone 14) সিরিজ লঞ্চ হওয়ার পর ধীরে ধীরে অ্যাপলের জনপ্রিয়তা উর্দ্ধমুখী হতে থাকে। আর অক্টোবর মাস থেকে টিম কুক পরিচালিত এই টেক জায়ান্টটি ‘সর্বাধিক জনপ্রিয় স্মার্টফোন ব্র্যান্ড’ হওয়ার প্রতিযোগিতায় স্যামসাংকে ছাড়িয়ে যেতে শুরু করে।

এমনটা হওয়া আশ্চর্যের নয়, বরং খুবই স্বাভাবিক ছিল। কেননা Apple তাদের নয়া আইফোন লাইনআপের ফিচার-সমূহ দেখিয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে এতটাই সফল হয়েছিল যে, iPhone 14 Pro এবং iPhone 14 Pro Max মডেল দুটি ২০২২ সালের তৃতীয় কোয়ার্টারের শেষার্ধ ও প্রায় পুরো চতুর্থ কোয়ার্টার জুড়ে ভোক্তাদের পছন্দের নিরিখে সেরা হ্যান্ডসেটগুলির মধ্যে একটি ছিল।

২০২৩ সালে এসেও দেখা যাচ্ছে স্যামসাংয়ের খুব একটা পদোন্নতি ঘটেনি। অর্থাৎ চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে অ্যাপলের বিশ্বব্যাপী মার্কেট শেয়ার ছিল ২৭.৬%। অন্যদিকে স্যামসাং সংস্থার মার্কেট শেয়ার সামান্য নিম্নমুখী হয়ে ২৭.০৯% হয়ে গিয়েছিল। জানিয়ে রাখি, গত ফেব্রুয়ারি মাসে উভয় টেক জায়ান্টেরই মার্কেট শেয়ার সামান্য হ্রাসপ্রাপ্ত হয়েছে।

একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, ফেব্রুয়ারিতে স্যামসাং তাদের সর্বশেষ ফ্ল্যাগশিপ সিরিজ Galaxy S23 লঞ্চ করেছিল এবং এই একই মাসেই ডিভাইসগুলির ওপেন সেল লাইভ করে দেওয়া হয় বিভিন্ন আঞ্চলিক বাজারে। কিন্তু তাসত্ত্বে দেখে যায়, স্যামসাং বিশ্বব্যাপী তাদের ‘লেটেস্ট’ এবং ‘গ্রেটেস্ট’ স্মার্টফোন লাইনআপ চালু করলেও অ্যাপলকে হারাতে পারেনি। জানিয়ে রাখি, কুপারটিনো ভিত্তিক টেক জায়ান্টটি এই বছর কেবলমাত্র বিদ্যমান আইফোন ১৪ মডেলের নতুন ইয়ালো কালার ভ্যারিয়েন্টই লঞ্চ করেছে।

যাইহোক অ্যাটলাস ভিপিএন -এর একটি নয়া রিপোর্ট অনুসারে, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৬.৮৪ বিলিয়ন স্মার্টফোন ব্যবহারকারী রয়েছে। যার মধ্যে ১.৮৫ বিলিয়ন আইফোন এবং ১.৮২ বিলিয়ন স্যামসাং ডিভাইস ব্যবহার করছেন। তবে এই পরিসংখ্যান নির্ভুল নাও হতে পারে। কারণ, আজকাল বহু মানুষ একাধিক হ্যান্ডসেট হাতে নিয়ে ঘোরেন। ফলে এমনও হতে পারে যে, সার্ভে অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে কিছুজন অ্যাপল এবং স্যামসাং উভয় ব্র্যান্ডিংয়ের ফোনই ব্যবহার করছেন।

আজ চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের দ্বিতীয় অন্তিম দিন। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, বিশ্বব্যাপী Apple -এর মার্কেট শেয়ার ২৭.৬% থেকে বেড়ে ২৭.১১% হয়ে গেছে। যেখানে কিনা Samsung -এর মার্কেট শেয়ার ২৭.০৯% থেকে ২৬.৭৪% -এ নেমে এসেছে এবং সংস্থাটি বর্তমানে ‘মোস্ট পপুলার স্মার্টফোন ব্র্যান্ড’ এর তালিকার দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে Xiaomi, যাদের বিশ্বব্যাপী মোট স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২.৩%। এছাড়া Oppo এই মুহূর্তে ৬.৮৭% মার্কেট শেয়ার এবং Vivo ৫.৩% মার্কেট শেয়ারের সাথে যথাক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম স্থান দখল করে রয়েছে।