Realme 10 4G vs Infinix Zero 20 4G vs Redmi 11 Prime 5G: প্রায় একই দামে কোন ফোনটি কেনা লাভজনক

চলতি বছরের প্রথম 4G কানেক্টিভিটির স্মার্টফোন হিসাবে গতকাল অর্থাৎ ৯ই জানুয়ারী ভারতের বাজারে পা রেখেছে Realme 10 4G। এটি একটি বাজেট-রেঞ্জের স্মার্টফোন। বিশেষত্বের কথা বললে এতে – ৯০ হার্টজ রিফ্রেশ রেটের FHD+ ডিসপ্লে প্যানেল, অ্যান্ড্রয়েড ১২ ভিত্তিক কাস্টম ওএস, ১২৮ জিবি পর্যন্ত স্টোরেজ, ৫০ মেগাপিক্সেল ডুয়েল ক্যামেরা সেটআপ, মিডিয়াটেক হেলিও জি৯৯ চিপসেট ইত্যাদি পাওয়া যাবে। দেখতে গেলে, দাম এবং ফিচারের নিরিখে একে ভারতের বাজারে ইতিমধ্যেই বিদ্যমান 4G এবং 5G কানেক্টিভিটির সাথে আসা দুটি মডেল কড়া টক্কর দিতে পারে। আমরা কথা বলছি ডিসেম্বরে আগত Infinix Zero 20 4G এবং জুলাই মাসে আত্মপ্রকাশ করা Redmi 11 Prime 5G স্মার্টফোনের প্রসঙ্গে। এই দুটি ফোনের সাথে সদ্য লঞ্চের মুখ দেখা Realme 10 4G মডেলের একাধিক ফিচারগত সাদৃশ্য বিদ্যমান। ফলে ১৬,০০০ টাকার কমে এই তিনটি স্মার্টফোনের মধ্যে কোনটি কেনা সর্বাধিক লাভজনক হবে তা এবার খতিয়ে দেখা দরকার। তাই আজ আমরা Realme 10 4G, Infinix Zero 20 4G এবং Redmi 11 Prime 5G স্মার্টফোনের দাম ও ফিচারের মধ্যে পার্থক্যগুলি জানাবো।

Realme 10 vs Redmi 11 Prime 5G vs Infinix Zero 20 : ডিসপ্লে, সেন্সর

রিয়েলমি ১০ ৪জি স্মার্টফোনে কর্নিং গরিলা গ্লাস ৫ প্রটেকশন সহ ৬.৪-ইঞ্চির ফুল এইচডি প্লাস AMOLED ডিসপ্লে দেওয়া হয়েছে। এই ডিসপ্লের ডিজাইন হোল-পাঞ্চ স্টাইলের (উপরি বাম কোণে অবস্থিত) এবং এটি ৯০ হার্টজ রিফ্রেশ রেট, ৩৬০ হার্টজ টাচ স্যাম্পেলিং / রেসপন্স রেট এবং ১,০০০ নিট পিক ব্রাইটনেস সমর্থন করে। ফোনটি অলওয়েজ অন ডিসপ্লে (AOD) ফিচার সাপোর্ট করে। এর সেন্সর বিভাগে – অ্যাক্সেলেরোমিটার, অ্যাম্বিয়েন্ট লাইট সেন্সর, জাইরোস্কোপ, প্রক্সিমিটি সেন্সর এবং কম্পাস/ ম্যাগনেটোমিটার অন্তর্ভুক্ত।

রেডমি ১১ প্রাইম ৫জি ফোনে একটি ৬.৫৮ ইঞ্চি ফুল এইচডি প্লাস (১০৮০ x ২৪০৮ পিক্সেল) ডিসপ্লে দেখা যাবে। এই ডিসপ্লের ডিজাইন পাঞ্চ-হোল স্টাইলের এবং এটি ৯০ হার্টজ রিফ্রেশ রেট ও ২৪০ হার্টজ টাচ স্যাম্পলিং রেট সাপোর্ট করে। সিকিউরিটির জন্য এতে সাইড মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার দেওয়া হয়েছে।

ইনফিনিক্স জিরো ২০ ফোনের সামনে ৬.৭-ইঞ্চির ফুল এইচডি প্লাস (২,৪০০ x ১,০৮০ পিক্সেল) AMOLED ডিসপ্লে উপস্থিত, যা ৯০ হার্টজ রিফ্রেশ রেট সাপোর্ট করে। আর সিকিউরিটি ফিচার হিসাবে এতে সাইড-মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর উপলব্ধ।

Realme 10 vs Redmi 11 Prime 5G vs Infinix Zero 20 : প্রসেসর, অপারেটিং সিস্টেম, র‌্যাম, স্টোরেজ

রিয়েলমি ১০ স্মার্টফোনে পারফরম্যান্সের জন্য মিডিয়াটেক ডাইমেনসিটি জি৯৯ প্রসেসর আছে। অপারেটিং সিস্টেম হিসাবে এতে অ্যান্ড্রয়েড ১২ ভিত্তিক রিয়েলমি ইউআই ৩.০ (Realme UI 3.0) কাস্টম স্কিন পাওয়া যাবে। ডিভাইসটি ৮ জিবি পর্যন্ত LPDDR4X র‌্যাম এবং সর্বোচ্চ ১২৮ জিবি UFS 2.2 স্টোরেজ সহ এসেছে।

উন্নত পারফরম্যান্স সরবরাহ করতে রেডমি ১১ প্রাইম ৫জি স্মার্টফোনে আর্ম মালি জি৫৭ এমসি২ জিপিইউ সহ ৭এনএম প্রসেসিং নোড ভিত্তিক মিডিয়াটেক ডাইমেনসিটি ৭০০ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। এটি অ্যান্ড্রয়েড ১২ ভিত্তিক এমআইইউআই ১৩ কাস্টম ইউজার ইন্টারফেস দ্বারা চালিত। আর স্টোরেজ হিসাবে এতে ৬ জিবি পর্যন্ত র‌্যাম ও ১২৮ জিবি পর্যন্ত রম পাওয়া যাবে।

অভ্যন্তরীণ স্পেসিফিকেশনের কথা বললে, ইনফিনিক্স জিরো ২০ স্মার্টফোনটি মিডিয়াটেক হেলিও জি৯৯ প্রসেসর সহ এসেছে। এটি অ্যান্ড্রয়েড ১২ ভিত্তিক এক্সওএস ১২ কাস্টম স্কিনে রান করে। আলোচ্য হ্যান্ডসেটে ৮ জিবি র‌্যাম এবং ১২৮ জিবি স্টোরেজ বর্তমান থাকছে।

Realme 10 vs Redmi 11 Prime 5G vs Infinix Zero 20 : ক্যামেরা সেটআপ

ফটোগ্রাফির জন্য রিয়েলমি ১০ ফোনের ব্যাক প্যানেলে LED ফ্ল্যাশ সহ ডুয়েল ক্যামেরা সেটআপ উপস্থিত রয়েছে। এই ক্যামেরাগুলি হল – ৫০ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি সেন্সর এবং ২ মেগাপিক্সেল ব্ল্যাক-অ্যান্ড-হোয়াইট সেকেন্ডারি লেন্স। আর সেলফি ও ভিডিও কলিংয়ের জন্য এতে ১৬ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট-ফেসিং ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে।

রেডমি ১১ প্রাইম ৫জি ফোনের পিছনে ডুয়েল ক্যামেরা সেটআপ বর্তমান। এই ক্যামেরাগুলি হল – এফ/১.৮ অ্যাপারচার সহ ৫০ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি সেন্সর এবং এফ/২.৪ অ্যাপারচার সহ ২ মেগাপিক্সেল ডেপ্থ সেন্সর। অন্যদিকে সেলফি ও ভিডিও কলিংয়ের জন্য ডিসপ্লের উপরের দিকে থাকা কাটআউটের মধ্যে ৫ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট-ফেসিং ক্যামেরা লক্ষণীয়।

ইনফিনিক্স জিরো ২০ ফোনের রিয়ার প্যানেলে – ১০৮ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি সেন্সর, ১৩ মেগাপিক্সেল আল্ট্রা-ওয়াইড লেন্স এবং ২ মেগাপিক্সেল ডেপ্থ সেন্সর সমন্বিত ট্রিপল ক্যামেরা সেটআপ উপস্থিত। আবার ডিভাইসের সামনে ‘অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন’ (OIS) সমর্থিত ৬০ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে।

Realme 10 vs Redmi 11 Prime 5G vs Infinix Zero 20 : ব্যাটারি, কানেক্টিভিটি অপশন

রিয়েলমি ১০ ফোনের কানেক্টিভিটি অপশনের মধ্যে সামিল আছে – ওয়াই-ফাই, জিপিএস, মাইক্রোএসডি কার্ড স্লট এবং একটি ইউএসবি টাইপ-সি পোর্ট। আর পাওয়ার ব্যাকআপের জন্য এতে ৩৩ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং প্রযুক্তি সমর্থিত ৫,০০০ এমএএইচ ক্যাপাসিটির ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। রিয়েলমির দাবি অনুসারে, ফোনটির সাথে পাওয়া চার্জার দিয়ে মাত্র ২৮ মিনিটের মধ্যে ডিভাইসকে ৫০% পর্যন্ত চার্জ করা সম্ভব।

কানেক্টিভিটির জন্য রেডমি ১১ প্রাইম ৫জি স্মার্টফোনে – ডুয়েল সিম স্লট, ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, জিপিএস এবং ইউএসবি টাইপ-সি পোর্ট অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে পাওয়ার ব্যাকআপের জন্য এটি ৫,০০০ এমএএইচ ক্যাপাসিটির ব্যাটারি সহ এসেছে, যা ১৮ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট করে। সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ফোনের রিটেল বক্সে ২২.৫ ওয়াটের চার্জার অ্যাডাপ্টার দেওয়া হয়েছে।

ইনফিনিক্স জিরো ২০ স্মার্টফোনে কানেক্টিভিটি বিকল্প হিসাবে – ওয়াই-ফাই ৮০২.১১ এ/বি/জি/এন/এসি, জিপিএস, এনএফসি, মাইক্রোএসডি স্লট এবং ইউএসবি টাইপ-সি ২.০ পোর্ট পাওয়া যাবে। পাওয়ার ব্যাকআপের ক্ষেত্রে, ফোনটি ৪৫ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং টেকনোলজি সমর্থিত ৪,৫০০ এমএএইচ ক্যাপাসিটির ব্যাটারি সহ এসেছে।

Realme 10 vs Redmi 11 Prime 5G vs Infinix Zero 20 : পরিমাপ

রিয়েলমি ১০ স্মার্টফোনের পরিমাপ ১৫৯.৯০x৭৩.৩০x৭.৯৫ মিমি এবং ওজন প্রায় ১৭৮ গ্রাম।

রেডমি ১১ প্রাইম ৫জি স্মার্টফোনের পরিমাপ ১৬৩.৬x৭৫.৮x৮.৮ মিমি এবং ওজন ১৯৫ গ্রাম।

ইনফিনিক্স জিরো ২০ স্মার্টফোনের পরিমাপ ১৬৪.৪x৭৬.৭x৮ মিমি এবং ওজন ১৯৬ গ্রাম।

Realme 10 vs Redmi 11 Prime 5G vs Infinix Zero 20 : দাম

ভারতে রিয়েলমি ১০ ৪জি স্মার্টফোনকে দুটি স্টোরেজ কনফিগারেশনে লঞ্চ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪ জিবি র‌্যাম ও ৬৪ জিবি স্টোরেজ যুক্ত বেস মডেলের দাম ১৩,৯৯৯ টাকা ধার্য করা হয়েছে। আর ৮ জিবি র‌্যাম ও ১২৮ জিবি স্টোরেজ যুক্ত টপ-এন্ড ভ্যারিয়েন্টকে নিয়ে আসা হয়েছে ১৬,৯৯৯ টাকায়। এটি – ক্ল্যাশ হোয়াইট এবং রাশ ব্ল্যাক কালার ভ্যারিয়েন্টে এসেছে।

রেডমি ১১ প্রাইম ৫জি ফোনকে দুটি স্টোরেজ বিকল্পের সাথে ভারতে লঞ্চ করা হয়েছে। যার মধ্যে ৪ জিবি র‌্যাম + ৬৪ জিবি স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্টের দাম ১৩,৯৯৯ টাকা রাখা হয়েছে। আর ৬ জিবি র‌্যাম + ১২৮ জিবি স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্টের দাম ১৫,৯৯৯ টাকা। এটিকে – পেপি পার্পেল, ফ্ল্যাশি ব্ল্যাক, প্লেফুল গ্রিন কালারে পাওয়া যাবে।

ইনফিনিক্স জিরো ২০ স্মার্টফোনকে ৮ জিবি র‌্যাম + ১২৮ জিবি স্টোরেজ যুক্ত একক ভ্যারিয়েন্টে নিয়ে আসা হয়েছে, যার দাম রাখা হয়েছে ১৫,৯৯৯ টাকা। এটি – স্পেস গ্রে, গ্লিটার গোল্ড ও গ্রীন ফ্যান্টাসি কালার অপশনে উপলব্ধ।