Redmi, Samsung -দের মাথায় হাত, সমস্ত প্রি-ইনস্টল অ্যাপ ডিলিটের সুযোগ দিতে হবে

স্মার্টফোন নির্মাতাদের প্রি-ইনস্টল করা অ্যাপগুলিকে আনইনস্টল করার অপশন দিতে হবে

বর্তমান সময়ে কমবেশি সকলের হাতেই দেখা যায় স্মার্টফোন, আর স্মার্টফোন মানেই তাতে রয়েছে একগুচ্ছ অ্যাপের সমাহার। সেক্ষেত্রে নতুন ফোন কেনার পর কাজের প্রয়োজনে ব্যবহারকারীদেরকে জরুরী কিছু অ্যাপ ডাউনলোড করে নিতে হয়; পাশাপাশি এও দেখা যায় যে, হ্যান্ডসেটটিতে আগে থেকেই মজুত রয়েছে কিছু প্রি-ইনস্টলড অ্যাপ (Pre-Installed Phone Apps), যেগুলিকে সহজে ডিলিট করা যায় না। এর ফলে অনেক অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ইউজারদের ফোনের স্টোরেজ দখল করে থাকে, যার জেরে ব্যবহারকারীদেরকে বেশ মুশকিলে পড়তে হয়। তাই গ্রাহকদের এই সমস্যার সমাধান করতে এবার এক নতুন পদক্ষেপ নিতে চলেছে মোদি সরকার।

স্মার্টফোন নির্মাতাদের প্রি-ইনস্টল করা অ্যাপগুলিকে আনইনস্টল করার অপশন দিতে হবে

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুব শীঘ্রই সরকার মোবাইল থেকে প্রি-ইনস্টলড অ্যাপগুলি সরিয়ে দেওয়ার অপশন প্রদান করার জন্য হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলিকে বাধ্য করতে চলেছে। অর্থাৎ সহজে বললে, শিগগিরই ফোন থেকে প্রি-ইনস্টল করা অ্যাপগুলি সরিয়ে ফেলার অপশন পেতে চলেছেন ইউজাররা। জানা গিয়েছে, খুব শীঘ্রই এই কঠোর নিয়মটি কার্যকর করতে চলেছে ভারত সরকার। এর ফলে আগামী দিনে স্যামসাং (Samsung), অ্যাপল (Apple), ভিভো (Vivo) এবং শাওমি (Xiaomi)-র মতো নামজাদা স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলির স্বেচ্ছাচারিতা যে নিশ্চিতভাবে বন্ধ হবে, সেকথা বলাই বাহুল্য।

আগেই বলেছি যে, বর্তমানে বেশিরভাগ স্মার্টফোনেই একাধিক প্রি-ইনস্টলড অ্যাপ্লিকেশন মজুত থাকে, যেগুলিকে ডিলিট করা যায় না। যেমন – শাওমির অ্যাপ স্টোর গেটঅ্যাপস (GetApps), স্যামসাংয়ের পেমেন্ট অ্যাপ স্যামসাং পে মিনি (Samsung Pay mini) এবং আইফোন (iPhone) নির্মাতা অ্যাপলের ব্রাউজার সাফারি (Safari)। সেক্ষেত্রে আলোচ্য নিয়মটি কার্যকর হলে উপরিউক্ত অ্যাপগুলিকে ডিভাইস থেকে সরানোর সুযোগ পাবেন ইউজাররা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ভারতই একমাত্র দেশ নয় যারা আগামী দিনে স্মার্টফোন নির্মাতাদেরকে প্রি-ইনস্টল করা অ্যাপগুলি সরানোর নির্দেশ দিতে চলেছে; ইতিমধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের দেশে এই নিয়ম চালু করেছে।

সরকারের নয়া নিয়ম মানতে কার্যত বাধ্য হবে স্মার্টফোন কোম্পানিগুলি

রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, উক্ত নিয়মটি কার্যকর হওয়ার পর স্মার্টফোন নির্মাতাদেরকে সেটি অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার জন্য এক বছর সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। তবে কবে নাগাদ আলোচ্য নিয়মটি চালু হবে, তার কোনো সুনিশ্চিত দিনক্ষণ এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। উল্লেখ্য যে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মার্টফোন মার্কেট হল ভারত। তাই এদেশে ব্যবসা করতে গেলে দুনিয়ার তাবড় তাবড় হ্যান্ডসেট নির্মাতা কোম্পানিগুলিকে যে অবশ্যই কেন্দ্রের নিয়ম মেনে চলতেই হবে, সেকথা বলাই বাহুল্য। তবে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন যে, নতুন নিয়মটি কার্যকর হলে ভারতে যে-কোনো কোম্পানির স্মার্টফোন লঞ্চ অন্যান্য দেশের তুলনায় তুলনামূলকভাবে কিছুটা দেরিতে হবে। শুধু তাই নয়, এর জেরে স্যামসাং, শাওমি, ভিভো এবং অ্যাপলের মতো সংস্থাগুলি বড়োসড়ো ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীনও হতে পারে।

জাতীয় নিরাপত্তার কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে

আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি, শুধুমাত্র ফোনের স্টোরেজ খালি করার বিষয়টিকে মাথায় রেখেই কিন্তু এই নিয়ম কার্যকর করার কথা ভাবছে না কেন্দ্র। এই প্রসঙ্গে এক সরকারি আধিকারিক জানিয়েছেন যে, আগে থেকে কিছু অ্যাপ ফোনে ইনস্টল করা থাকলে সেগুলি গুপ্তচরবৃত্তির কাজ করতে পারে। এর ফলে চীন সহ কোনো বিদেশী দেশ অতি অনায়াসেই ব্যবহারকারীদের গোপন তথ্য জেনে যাবে। আর এই কারণেই কোনোরকম ঝুঁকি নিতে চাইছে না ভারতের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক। সহজে বলতে গেলে, মূলত জাতীয় নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই আলোচ্য নিয়মটি কার্যকর করার কথা ভাবছে কেন্দ্র।

প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, ২০২০ সালের সীমান্ত সংঘর্ষের পর থেকে ভারত টিকটক (TikTok) সহ মোট ৩০০ টিরও বেশি চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে। এর কারণ হিসেবে কেন্দ্র জানিয়েছে যে, ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা, ভারতের প্রতিরক্ষা, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা এবং জনসাধারণের শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে ক্ষতিকর – এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার জন্য এই অ্যাপগুলিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সময় বিশেষে অনেক ইউটিউব (YouTube) চ্যানেল ও সোশ্যাল মিডিয়া পেজও ব্যান করেছে মোদী সরকার। অর্থাৎ, দেশ তথা নাগরিকদের সুরক্ষার্থে কেন্দ্র যে সবরকমের কড়া পদক্ষেপ নিতে বদ্ধপরিকর, তা বেশ ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে।