দুর্ঘটনা কমাতে ট্রাক চালকদের জন্য AC আবশ্যক করছে কেন্দ্র, মানতে হবে Tata-সহ সমস্ত সংস্থাকে

আগামী ২০২৫ সাল থেকে দেশের সমস্ত ট্রাকে বাতানুকূল যন্ত্র বাধ্যতামূলক করল মোদি সরকার। এই মর্মে সম্প্রতি নির্দেশিকা জারি করে তাতে স্বাক্ষর করেছেন কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী। ট্রাকের চালকদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হল সরকার। এতদিন পর্যন্ত ভলভো কিংবা স্ক্যানিয়ার মত বৈদেশিক ট্রাক নির্মাণকারী সংস্থাগুলি চালকদের জন্য শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কেবিন চালু করলেও দেশীয় সংস্থাগুলি এই বিষয়ে তেমন কোন আগ্রহ প্রকাশ করেনি। পরিবহন দপ্তরের এই নির্দেশিকা এবার থেকে মানতে একপ্রকার বাধ্য হবে এই সমস্ত সংস্থাগুলি।

2025 সাল থেকে দেশের সমস্ত ট্রাকে বাতানুকূল যন্ত্র লাগানো বাধ্যতামূলক

আমাদের দেশে পণ্য পরিবহণের জন্য রেল ব্যবস্থার সাহায্য নেওয়া হলেও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এমনকি দুর্গম অঞ্চলেও সময়ের মধ্যে মালপত্র পৌঁছে দিতে ট্রাক চালকদের অবদান অনস্বীকার্য। প্রতিদিন কয়েক লক্ষ ট্রাক ছুটে চলেছে তাদের নিজেদের গন্তব্যে। এদিকে বিশ্ব উষ্ণায়নের যাঁতাকলে পড়ে গোটা বিশ্বের পাশাপাশি ভারতের মতো গ্রীষ্ম প্রধান দেশে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি বিভিন্ন অংশে দেখা গিয়েছে সাম্প্রতিককালে। চলতি বছরের গরমের সময় আমাদের নানা অংশের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে অনায়াসে। বাইরের পরিবেশের এমন দাবদাহ থাকা অবস্থায় ট্রাকের কেবিনে ইঞ্জিনের উষ্ণতার কল্যাণে তাপমাত্রা পৌঁছায় প্রায় ৪৫ থেকে ৪৭° সেন্টিগ্রেডে। অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে এমন কেবিনের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ থাকা নরক যন্ত্রণার সমান।

যেহেতু দেশে পণ্য পরিবহণের বড় অংশ ট্রাকের উপরেই নির্ভরশীল তাই চালকদের দৈনিক প্রায় ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা থাকতে হয় স্টিয়ারিংয়ে। বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা এই দীর্ঘ সময় অস্বস্তিকর তাপমাত্রার মধ্যে চালকদের থাকার ভারতের রাস্তায় ট্রাক দুর্ঘটনার একটি অন্যতম বড় কারণ। সেই কারণেই চালকদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে এবং সড়কপথে ট্রাকের দুর্ঘটনার সংখ্যা কমাতে বাতানুকূল যন্ত্র বাধ্যতামূলক করতে তৎপর কেন্দ্র। এই একই সুরে সুর মিলিয়েছেন পরিবহণ মন্ত্রী গডকড়ী।

তাঁর কথায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একটানা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ট্রাক চালানোর পরে প্রতিটি চালককে বিশ্রাম নেওয়া বাধ্যতামূলক করা রয়েছে। আমাদের দেশে এখনও পর্যন্ত এমন কোন নিয়ম চালু করা যায়নি। তাই উপায় না পেয়ে এই ভিন্ন রাস্তায় হাঁটতে বাধ্য হলেন তিনি। যদিও প্রথমদিকে এমন প্রস্তাবনা এলেও শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কেবিন বসাতে অতিরিক্ত খরচের দোহাই দিয়ে পিছিয়ে আসতে চেয়েছে টাটা মোটরস এবং অশোক লেল্যান্ড এর মত শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় ট্রাক নির্মাতারা। তবে এবার কেন্দ্রীয় সরকারের দৃঢ় মনোভাবে সুরাহার পথ খুলবে বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও সূত্র মারফত জানা গিয়েছে এর ফলে ট্রাক মালিকদের অতিরিক্ত ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করতে হবে।

শুধু এখানেই শেষ নয়, ট্রাকের চালকদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে আরও একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্র। এদের মধ্যে রয়েছে হাইওয়েতে ট্রাক চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত পানীও জল এবং রাস্তার পাশে বিভিন্ন জায়গায় তাদের জন্য সঠিক টয়লেটের ব্যবস্থা। আসলে ভারতের পণ্য পরিবহণ ব্যবস্থাকে এক নতুন আঙ্গিকে সাজাতে এবং তা ট্রাক চালকদের সুবিধামতো করার লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছে সরকার।