Flipkart, Amazon থেকে আর কেনা যাবে না এই প্রোডাক্ট, কড়া নির্দেশ ভারত সরকারের

সিট বেল্ট না পড়ার মতো অবহেলার কারণে প্রাণ হারিয়েছে হাজারো মানুষ

যেটা বারণ করা হয় সেটাই আরো বেশি করে করার প্রবণতা মানুষের মধ্যে বরাবরই বেশি। আর তাই তো আকছার ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের একাধিক ঘটনা ঘটতেই থাকে। এই কারণে, সড়ক নিরাপত্তার নিয়ম না মেনে নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলছেন এমন ব্যক্তিদের দমন করতে ভারত সরকার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। ‘ভোক্তা সুরক্ষা নিয়ন্ত্রক’ (CCPA) -ও এই সংকল্পকে সফল করার উদ্দেশ্যে হালফিলে গাড়ির সিট বেল্ট অ্যালার্ম বন্ধ করার ক্লিপ সহ এই জাতীয় অন্যান্য পণ্যের বিক্রি অবিলম্বে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে অ্যামাজন (Amazon), ফ্লিপকার্ট (Flipkart), স্ন্যাপডিল (Snapdeal) সহ মোট পাঁচটি শীর্ষস্থানীয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মকে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রণালয় (MoRTH) পূর্বেও এই ধরনের প্রোডাক্টের ওপেন সেল সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। সাথে, এই বিষয়ে অবগত করানোর জন্য CCPA-কেও একটি চিঠি পাঠানো হয়। উদ্বেগের কারণ জানিয়ে সরকারি বিভাগটি জানিয়েছে, গাড়ির সিট বেল্টের অ্যালার্ম তখনই বন্ধ হওয়া উচিত যখন সিটে বসা যাত্রীরা নিজেদের সুরক্ষার জন্য বেল্টটি পড়বেন। কিন্তু এইধরণের অ্যালার্ম বন্ধ করার পণ্য ব্যবহার করলে পরিণাম বিপজ্জনক হতে পারে। মন্ত্রণালয়ের চিঠির পর এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলিকে এরকম প্রোডাক্ট বিক্রি করা নিয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে CCPA।

সিট বেল্ট না পড়ার মতো অবহেলার কারণে প্রাণ হারিয়েছে হাজারো মানুষ

MoRTH -এর শেয়ার করা তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে সিট বেল্ট না পরার কারণে ১৬,০০০ -এরও বেশি মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। সরকারি রিপোর্ট বলছে, এই ধরনের দুর্ঘটনার সাথে জড়িত ভিক্টিমদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী যুবক। এক্ষেত্রে অনেকেই ‘অ্যাক্সিডেন্টাল ডেথ’ হলে পরিবার যাতে বীমার লাভ ওঠাতে পারে তার ব্যবস্থা করে রাখে। কিন্তু অবগতির জন্য জানিয়ে রাখি, সিট বেল্ট অ্যালার্ম নিষ্ক্রিয়করণ ক্লিপ ব্যবহার করলে এবং এই কারণে কোনো ভাবে দুর্ঘটনার কবলে পড়লে বীমা কোম্পানি ক্লায়েন্টের ক্লেম প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা রাখে। কেননা এই ধরণের দুর্ঘটনাকে ক্লায়েন্টের অবহেলা হিসাবে বিবেচিত করা হয়।

সিট বেল্ট স্টপার ক্লিপ প্রস্তুতকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে

CCPA বিভাগের তরফ থেকে মুখ্য সচিব এবং জেলা কালেক্টরদের এই ধরনের ক্লিপ প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একই সাথে, অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট, স্ন্যাপডিল সহ মোট পাঁচটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মকে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট জমা দেওয়া নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ১৩,১১৮টি গাড়ির সিট বেল্ট স্টপার ক্লিপ প্রোডাক্টকে ডি-লিস্ট করা হয়েছে।

জানিয়ে রাখি সেন্ট্রাল মোটর ভ্যাইকেল রুলস, ১৯৮৯-এর ১৩৮ বিধি অনুসারে – চার চাকার গাড়িতে সিট-বেল্ট পরা বাধ্যতামূলক। চালক সহ গাড়িতে থাকা অন্যান্য যাত্রীদেরও সিট বেল্ট পরতে হবে, যাতে ট্রাফিক চালানের পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনাও এড়িয়ে যাওয়া যায়।

কেন বিপজ্জনক সিট বেল্ট অ্যালার্ম স্টপার ক্লিপ?

এখন প্রায় প্রত্যেকটি গাড়ির কোম্পানি, তাদের নতুন গাড়িগুলিতে সিট বেল্ট অ্যালার্ম দিচ্ছে। এইধরণের অ্যালার্ম যাত্রীরা যতক্ষণ না পর্যন্ত সিট বেল্ট পড়ছেন ততক্ষন বাজতেই থাকে এবং সিট বেল্ট লক করার পর বন্ধ হয়ে যায়। অর্থাৎ সিট অ্যালার্ম বারংবার সিট বেল্ট লাগানোর কথা মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু সিট বেল্টের অ্যালার্ম বন্ধ করার পণ্যগুলি গাড়িতে লাগানোর মাধ্যমে যাত্রীরা অ্যালার্মের আওয়াজ এবং সিট বেল্ট পরার প্রয়োজনীয়তা উভয়ই উপেক্ষা করতে চান। এই ধরণের কাজ করার অর্থ শুধুমাত্র সড়ক নিরাপত্তার নিয়ম লঙ্ঘনই নয়, সাথে নিজের জীবন নিয়েও ছিনিমিনি খেলা।