Smartphone: অন্ধকারে স্মার্টফোন চালানোর ফল, মাত্র ৩০ বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি হারালেন মহিলা

চলতি সময়ে স্মার্টফোন যেহেতু আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে, তাই ইদানীংকালে আমরা এই ডিভাইসটির ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। সেজন্য এই ইলেকট্রনিক গ্যাজেটটিকে…

চলতি সময়ে স্মার্টফোন যেহেতু আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে, তাই ইদানীংকালে আমরা এই ডিভাইসটির ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। সেজন্য এই ইলেকট্রনিক গ্যাজেটটিকে এখন এক মুহূর্তের জন্যও কাছছাড়া করা রীতিমতো অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও আমরা সকলেই জানি যে, অতিরিক্ত মাত্রায় মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে চূড়ান্ত রকমের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হতে পারে, কিন্তু তা সত্ত্বেও সাবধান হওয়ার কথা আমাদের মাথাতেই আসে না; বরং যত দিন যাচ্ছে, প্রায় সব মানুষই এই ছোট্ট ডিভাইসটির প্রতি চরমভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। ঠিক এভাবেই হায়দ্রাবাদের এক মহিলারও নিজের মুঠোফোনটির প্রতি অত্যন্ত আসক্তি ছিল। রাতের অধিকাংশ সময়টাই তিনি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে স্ক্রোল করে কাটাতেন (যা চলতি সময়ে কমবেশি অনেকেই করে থাকেন)। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হল, দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করতে করতে তিনি হালফিলে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে! আজ্ঞে হ্যাঁ, শুনে খুব অবাক লাগলেও সম্প্রতি সত্যি সত্যিই এই ঘটনাটি আমাদের দেশে ঘটেছে।

দীর্ঘদিন ধরে অন্ধকারে স্মার্টফোন ব্যবহার করে দৃষ্টিশক্তি হারালেন হায়দ্রাবাদের এক মহিলা

উক্ত মর্মান্তিক ঘটনাটির প্রসঙ্গে হায়দ্রাবাদের এক নিউরোলজিস্ট ডা. সুধীর (Dr. Sudhir) টুইটারে (Twitter) জানিয়েছেন যে, ৩০ বছর বয়সী মঞ্জু নামের ওই মহিলা চোখের সমস্যা নিয়ে তার কাছে এসেছিলেন। মহিলাটি তাকে জানান যে, তিনি চোখে ঝাপসা দেখছেন, আবার কখনো কখনো অস্বাভাবিক আলোর ঝলকানি তার চোখে ভেসে উঠছে। এছাড়া, তার চোখে হঠাৎ ফ্লোটার্স দেখা দিচ্ছে (অর্থাৎ, মনে হচ্ছে যেন চোখের সামনে ফুটকি, দাগ, ছেঁড়া মেঘ বা মাকড়সার জালের মতো কিছু ভেসে বেড়াচ্ছে; তবে আদতে সেগুলি যে চোখের সামনে ভাসছে তা কিন্তু নয়, সেগুলি আসলে ঘুরে বেড়াচ্ছে চোখের ভেতরে)। শুধু তাই নয়, অনেক আলোর মধ্যে থাকা সত্ত্বেও মাঝে মাঝে ওই মহিলার চোখের সামনে সবকিছু যেন অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ সোজা কথায় বললে, তিনি কার্যত তার দৃষ্টিশক্তি খোয়াতে বসেছেন। এরপর ওই মহিলাকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষানিরীক্ষা করে ডাক্তার জানতে পারেন যে, তিনি স্মার্টফোন ভিশন সিনড্রোমে (SVS) ভুগছেন, যা অন্ধত্ব সহ চোখের একাধিক সমস্যার অন্যতম কারণ।

কিন্তু মাত্র ৩০ বছর বয়সেই কীভাবে অকালে এই কঠিন সমস্যায় পড়লেন মঞ্জু? এর জবাবে ওই চিকিৎসক জানিয়েছেন যে, অন্ধকার ঘরে ফোনে প্রচুর সময় কাটানোই ছিল তার দৃষ্টিশক্তি হারানোর মূল কারণ৷ ডাক্তারের কথায়, বছর দেড়েক আগে ওই মহিলা তার বিশেষভাবে সক্ষম সন্তানের যত্ন নেওয়ার জন্য বিউটিশিয়ানের চাকরি ছেড়ে দেন। এরপরেই প্রতিদিন রাতে কয়েক ঘণ্টা করে স্মার্টফোন ব্রাউজ করা তার একটি নতুন অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়। তিনি প্রায় দেড় বছরেরও অধিক সময় ধরে রাতে প্রায় দু’ঘণ্টারও বেশি অন্ধকার ঘরে ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করতেন, যার জেরে তার চোখের ওপর ব্যাপক কুপ্রভাব পড়ে এবং তিনি কার্যত অন্ধ হয়ে যান।

সঠিক সময়ে রোগ ধরা পড়ায় ইতিমধ্যেই সেরে উঠেছেন ওই মহিলা

তবে আনন্দের বিষয় হল, সঠিক সময়ে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করায় মঞ্জু যথাযথ ওষুধ এবং পরামর্শ পেতে সক্ষম হয়েছেন, যার জেরে একমাস চিকিৎসার পর তার দৃষ্টি পুনরুদ্ধার করা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই ডাক্তার। সুধীরের কথায়, দেড় বছর যাবৎ চোখের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করার পরেও বর্তমানে সঠিক চিকিৎসার সুবাদে মঞ্জু এখন পুরোপুরি সুস্থ। হালফিলে তার চোখে আর কোনো সমস্যা নেই। এক্ষেত্রে চিন্তার বিষয় হল, যদিও মঞ্জু সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেয়েছেন, কিন্তু অনেকেই ইদানীংকালে ‘স্মার্টফোন ভিশন সিনড্রোম’ (SVS) বা ‘কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম’ (CVS) বা ‘ডিজিটাল ভিশন সিনড্রোম’-এ ভুগছেন; তবে দুঃখের কথা হল, তারা নিজেরাই তা জানেন না। সেক্ষেত্রে হয়তো এমন সময়ে তারা বিষয়টি অনুধাবন করতে পারবেন, যখন আর কিছুই করার থাকবে না (অর্থাৎ, ইউজাররা আংশিক কিংবা স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলবেন)। তাই চোখ তথা গোটা শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য সকলকে কম পরিমাণে স্মার্টফোন ব্যবহারের আর্জি জানিয়েছেন ওই চিকিৎসক।

দিন-কে-দিন মানুষের স্মার্টফোন ব্যবহারের সময়সীমা বাড়ছে

প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, মোবাইল অ্যানালিটিক্স ফার্ম data.ai (পূর্বে App Annie)-এর মতে, ২০১৯ সালে ভারতে স্মার্টফোন ব্যবহারের গড় সময়কাল ছিল দিনে ৩.৭ ঘণ্টা। তবে ক্রমাগত এই সময়সীমা বেড়ে ২০২০ সালে দিনে ৪.৫ ঘণ্টা এবং এরপর ২০২১ সালে দিনে ৪.৭ ঘণ্টায় দাঁড়িয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে বহু ভারতীয় নাগরিকের যে আংশিক কিংবা স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি হারানোর সম্ভাবনা প্রবল, তা এখান থেকেই বোঝা যাচ্ছে। উল্লেখ্য, স্মার্টফোনের ডিসপ্লে এক ধরনের উজ্জ্বল নীল আলো নিঃসরণ করে, যা দিনের কড়া আলোতেও আমাদেরকে ফোনের স্ক্রিন স্পষ্টভাবে দেখতে সাহায্য করে। ফলে রাতে ফোন ব্যবহার করলে মস্তিষ্ক এই নীল আলোকরশ্মির কারণে ধাঁধায় পড়ে যায় এবং একে দিনের আলো হিসেবে ধরে নেয়, যার ফলে মানুষের চোখের ওপর ব্যাপক কুপ্রভাব পড়ে।

চোখ তথা শরীরকে সুস্থ রাখতে এই উপায়গুলি মেনে চলুন

সেক্ষেত্রে দৈনন্দিন জীবনযাপনের সুবিধার জন্য স্মার্টফোনকে উপেক্ষা করা যদিও সম্ভব নয়, তবে শরীরের সুস্থতার স্বার্থে এর ব্যবহারের ওপর অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ আনা যেতে পারে। তাই ইউজারদের স্মার্টফোনের ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে দেওয়া উচিত। এছাড়াও বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির যুগে এমন অনেক ফিচার উপলব্ধ রয়েছে, যা স্মার্টফোনের ক্ষতিকর নীল আলোর থেকে ব্যবহারকারীদের চোখকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করবে। উদাহরণস্বরূপ – এর জন্য ইউজাররা জেন মোড (Zen mode) ব্যবহার করতে পারেন। এটি স্মার্টফোনের নীল আলো থেকে ব্যবহারকারীদের চোখকে বাঁচাতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

এছাড়া, একটানা অনেকক্ষণ স্মার্টফোন ব্যবহার করা একেবারেই উচিত নয়। তাই প্রতি কুড়ি থেকে ত্রিশ মিনিট অন্তর কিছুক্ষণের জন্য চোখকে অবশ্যই বিশ্রাম দেওয়া উচিত। প্রসঙ্গত, ডা. সুধীরের কথায়, কুড়ি ফুট দূরে থাকা কোনো ডিজিটাল স্ক্রিনকে একটানা কুড়ি মিনিট দেখার পর ইউজারদের চোখকে অবশ্যই কুড়ি সেকেন্ডের জন্য বিরতি দেওয়া প্রয়োজন। তাই চলতি সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এই ২০-২০-২০ নিয়ম মেনে চললে ব্যবহারকারীরা নিশ্চিতভাবে তাদের চোখকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম হবেন।