জুলাই মন্ডল, কলকাতা: অ্যান্টার্কটিকা নামক এই বরফের দেশটিকে আমরা কতটুকুই বা চিনি বা বুঝি। দুনিয়ার সপ্তম বৃহত্তম মহাদেশের আড়ালে কোন রহস্য লুকিয়ে আছে তাও এখনও অজানা অনেকের কাছে। তবে বিংশ শতাব্দী থেকেই সেই রহস্য উদ্ঘাটনের মহাযজ্ঞে রাতদিন এক করেছেন গবেষকরা। সম্প্রতি ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভে (BAS) এর বিজ্ঞানীরা অ্যান্টার্কটিকার বিস্তৃত বরফের আড়ালে লুকানো ভূদৃশ্যের সবচেয়ে বিস্তারিত মানচিত্র তুলে ধরেছেন।
বরফের এই মহাদেশের উচ্চতা, বরফের ঘনত্ব এবং হিমবাহের উপ-ভৌগোলিক অবস্থানের তথ্য সমৃদ্ধ বেডম্যাপ ৩ উপস্থাপন করেছেন বিজ্ঞানীরা। ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিকার সার্ভের এই অভিযানে অংশ নিয়েছে একাধিক প্রতিষ্ঠান। বর্তমান ডেটার পাশাপাশি ৬০ বছরের পুরনো ডেটাও খতিয়ে দেখা হয়েছে। যার ফলস্বরূপ বেডম্যাপ ৩ এর মাধ্যমে অ্যান্টার্কটিকার একাধিক না জানা তথ্য আজ জনসমক্ষে।
যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানীদের একটাই প্রশ্ন ছিল অ্যান্টার্কটিকার বরফের নীচে আদতে রয়েছে টা কী? উত্তরের খোঁজে বহু অভিযান হয়েছে এর আগে। যার মধ্যে সাম্প্রতিক সাফল্য এই বেডম্যাপ ৩। বিভিন্ন উৎস থেকে জড়ো করা হয়েছে ডেটা। যেমন, উপগ্রহ, বিমান, জাহাজ, এমনকি কুকুরের আঁকা স্লেজও বাদ যায়নি।
কী রয়েছে অ্যান্টার্কটিকার বরফের নীচে
দক্ষিণতম মহাদেশের বরফের নীচে যে আশ্চর্য এক বিস্ময় লুকিয়ে রয়েছে তা নিয়ে বহু জল্পনা-কল্পনা ভিড় করেছে বই ও ডিজিটাল দুনিয়ায়। তবে নতুন সমীক্ষায় তা কিছুটা স্পষ্ট হয়েছে। গভীর উপত্যকা থেকে শুরু করে সুউচ্চ পর্বতমালা, যার বেশিরভাগ অস্পষ্ট ছিল তা সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া গিয়েছে। বিজ্ঞানীদের মতে, অ্যান্টার্কটিকার বিশাল বরফের স্তর প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ ৬৩ হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। এবং, এর গড় পুরুত্ব ১,৯৪৮ মিটার।
উইলকস ল্যান্ড গিরিখাত
অ্যান্টার্কটিকার সবচেয়ে ঘন বরফ রয়েছে এই উইলকস ল্যান্ড নামক গিরিখাতে। বিশেষজ্ঞদের অতন্দ্র হিসেবনিকেশের বলে আজ সেই গিরিখাত সম্পর্কে নানা তথ্য জানা গিয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই বিশাল গঠনটি ৪,৭৫৭ মিটার পুরু। এই ম্যাপিং বরফের গতিশীলতা এবং সম্ভাব্য সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পরিস্থিতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করবে বিজ্ঞানীদের।
বেডম্যাপ ৩ এর আগে হয়েছিল বেডম্যাপ ২ এবং বেডম্যাপ ১। তবে সাম্প্রতিক গবেষণাটি বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। এই গবেষণার মাধ্যমে অ্যান্টার্কটিকার বরফ পৃষ্ঠ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং ভবিষ্যতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির উপর এর প্রভাব কীভাবে পড়তে পারে তা সম্পর্কে একটি ধারণা পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বরফের গভীর পাদদেশ ছাড়াও এই ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে দক্ষিণ মেরুর চারপাশে পূর্ব অ্যান্টার্কটিকা, অ্যান্টার্কটিকা উপদ্বীপ, পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকা উপকূলরেখা এবং ট্রান্সঅ্যান্টার্কটিকা পর্বতমালা সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি, তাঁদের মতে, এই সমস্ত উন্নত ইমেজিং কৌশলগুলির সাহায্যে মহাদেশের বিন্যাস সম্পর্কে গভীর অন্তর্দৃষ্টি পাওয়া যাবে এবং মহাদেশের ভূতাত্ত্বিক অতীত অধ্যয়নে সাহায্য করবে।