Science News: পৃথিবীর হার্টে সমস্যা! থেমে গেল কেন্দ্রের ঘূর্ণন, কোন আশঙ্কার মুখে মানুষ?
অনন্তকাল ধরে পৃথিবী নিজের নিয়মে ঘুরে চলেছে এবং আমরা নিশ্চিন্তে গ্রহটিতে বসবাস করছি। যতক্ষণ না ভূমিকম্প বা সুনামির মতো...অনন্তকাল ধরে পৃথিবী নিজের নিয়মে ঘুরে চলেছে এবং আমরা নিশ্চিন্তে গ্রহটিতে বসবাস করছি। যতক্ষণ না ভূমিকম্প বা সুনামির মতো কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মনে কোনোরকম চিন্তার উদ্রেক হয় না। তবে এই ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তো আমরা জানতে পারি, কিন্তু এছাড়াও পৃথিবীর গহীনে এমন অনেক আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে চলেছে, যেগুলির কথা আমাদের কানে এসে পৌঁছোয় না। তদুপরি, ধরিত্রীর অভ্যন্তরে প্রায় ৫,০০০ কিলোমিটার জায়গায় কোনো গোলযোগ ঘটছে কি না, সে বিষয়ে জানতে আমরা বিশেষ আগ্রহবোধও করি না বললেই চলে। জানিয়ে রাখি, যদিও আমরা পৃথিবীর উপরিতলে বাস করি, তবে এর অভ্যন্তরীণ স্তরও রয়েছে, যাকে পৃথিবীর হার্ট বা কেন্দ্র বললেও অত্যুক্তি হবে না। সম্প্রতি পাওয়া খবর অনুযায়ী, হালফিলে সেই হার্টেই ধরা পড়েছে সমস্যা, যা নিয়ে গোটা দুনিয়ায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। কিন্তু কী এমন ঘটলো হঠাৎ? আসুন বিশদে জেনে নিই।
পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কোরের ঘূর্ণন থেমে গেছে
সম্প্রতি একটি নতুন গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কোর (Earth’s Inner Core) ঘূর্ণন বন্ধ করে দিয়েছে, এবং এরপরে বিপরীত দিকে তার ঘূর্ণন অভিমুখ স্থির করেছে। এই প্রসঙ্গে নেচার জিও সায়েন্সে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে অভ্যন্তরীণ কোর ঘূর্ণন বিরাম লাভ করে, এবং পরে তা সামঞ্জস্য বজায় রেখেই ভিন্ন দিকে অভিমুখ বদলায়। এখন একথা শুনে খুব স্বাভাবিকভাবে সকলের মনে নিশ্চয়ই এই প্রশ্ন আসছে যে, এর ফলে পৃথিবীবাসীর জীবনে ঠিক কী প্রভাব পড়তে চলেছে? জবাবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে, খবরটি শুনে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই, কারণ প্রায় প্রতি সাত দশকে এইরকম ঘটনা ঘটে থাকে। সর্বপ্রথম ১৯৭০-এর গোড়ার দিকে একই ধরনের ঘটনা লক্ষ্য করা গিয়েছিল।
কী কারণে ঘটে এরকম ঘটনা?
এখন প্রশ্ন হল, ঠিক কী কারণে এমন ঘটনা ঘটে? সেক্ষেত্রে বলি, বেজিংয়ের পিকিং ইউনিভার্সিটির ভূ-পদার্থবিদ ই ইয়াং (Yi Yang) এবং জিয়াডং সং (Xiadong Song) সম্প্রতি প্রকৃতি ভূবিজ্ঞানে (nature Geoscience) একটি নতুন তথ্য প্রকাশ করেছেন, যা পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কোরের চলাচলের প্রকৃতি ব্যাখ্যা করে। গবেষণায় জানা গিয়েছে যে, পৃথিবীর মূল অংশ বা ইনার কোর গলিত লোহা এবং নিকেল খাদ দিয়ে তৈরি। এর ফলে পৃথিবীতে চৌম্বক ক্ষেত্র এবং মহাকর্ষ বল তৈরি হয়। তবে অনেক সময় রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ইনার কোরে থাকা লোহা লাল রঙের অবশিষ্টাংশ ছেড়ে যায় এবং শক্তিশালী লোহা দুর্বল হয়ে পড়ে, যার ফলে অনেক আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
ভবিষ্যতে আবারও এরকম ঘটনা ঘটবে
গবেষকরা আরও জানিয়েছেন যে, পৃথিবীপৃষ্ঠের সাপেক্ষে ভিতরের অংশটি ঘূর্ণায়মান হয়। এটি সামনে পিছনে দোলনার মতো দুলতে থাকে। এই দোলের একটি চক্র প্রায় সাত দশক। সেক্ষেত্রে গবেষণায় দেখা গেছে যে, ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে সর্বপ্রথম এরকম ঘটনা ঘটেছিল। স্বভাবতই ভবিষ্যতেও যে এই ধরনের ঘটনা আবারও ঘটবে, সেকথা নিঃসন্দেহে বলাই বাহুল্য। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত সং-এর স্পিনিং তত্ত্ব অনুসারে, পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কোরকে সঠিকভাবে বোঝার কোনো বিশেষ উপায় নেই। অনেকের বিশ্বাস যে, পৃথিবীর কোর পৃথিবীর বাকি অংশ থেকে আলাদাভাবে ঘোরে। তবে যাইহোক, বিজ্ঞানীরা যখন জোর গলায় বলেছেন যে, এর জন্য পৃথিবীবাসীর কোনোরকম ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই, তাহলে বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের খুব বেশি চিন্তা করার একেবারেই কোনো কারণ নেই বলেই ধরে নেওয়া যেতে পারে।