InvisDefense: কোট গায়ে চাপালেই অদৃশ্য হয়ে যাবেন, একদল ছাত্রের আবিষ্কারে মুগ্ধ গোটা বিশ্ব

মিস্টার ইন্ডিয়া (Mr. India) সিনেমাটির কথা মনে পড়ে? আশির দশকে যে সকল বলিউড সিনেমা দারুণ সাফল্য লাভ করেছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম একটি হল অনিল কাপুর (Anil Kapoor) এবং শ্রীদেবী (Sridevi) অভিনীত এই ছবি। মুভিটি যারা দেখেছেন, তাদের অবশ্যই মনে আছে যে সিনেমাতে বিশেষ একটি ঘড়ি পড়ে বাটন টিপে অদৃশ্য হয়ে যেতেন নায়ক; এবং তারপরে নিজের ইচ্ছেমতো যা খুশি তাই করতে পারতেন, ঠিক যেমনটা রূপকথার গল্পে হয়ে থাকে। তাই আজও সিনেমাটি দেখার সময় কমবেশি প্রত্যেকেরই এরকমভাবে আচমকা অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার ইচ্ছে জেগে ওঠে। সেক্ষেত্রে বর্তমান ডিজিটাল যুগে উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের এই স্বপ্নও এবার সত্যি হতে চলেছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। এখন নিশ্চয়ই আপনাদের মনে প্রশ্ন আসছে যে, কীভাবে এই অসম্ভবকে সম্ভব করা যাবে? আসুন জেনে নিই।

কোট গায়ে দিলেই অদৃশ্য! চমকপ্রদ এই জিনিস বানিয়ে সকলকে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে কয়েকজন চীনা ছাত্র

হালফিলে কয়েকজন চীনা ছাত্র এমন একটি কোট তৈরি করেছে, যেটিকে দেখতে সাধারণ কোটের মতো হলেও জিনিসটি আদতে অসাধারণ। এই কোটটি গায়ে দিলেই ইউজাররা অচিরেই অদৃশ্য হয়ে যাবেন, এবং সিকিউরিটি ক্যামেরাতেও তাদের কোনো হদিশ পাওয়া যাবে না। তবে এক্ষেত্রে বলে রাখি, সব সিকিউরিটি ক্যামেরা কিন্তু এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত নয়। মূলত এআই (AI) বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে যে সকল সিকিউরিটি ক্যামেরা মনিটরিং করে, এই কোট গায়ে দিলে সেই সমস্ত ক্যামেরার চোখে ধুলো দেওয়া অতি অনায়াসে সম্ভবপর হবে। অর্থাৎ সোজা কথায় বললে, কোটটি পড়ে কোনো ব্যক্তি প্রকাশ্যে ঘুরলে-ফিরলে তাকে অন্য কেউই দেখতে পাবে না। এই দুর্দান্ত তথা অত্যাশ্চর্য পোশাকটির নাম দেওয়া হয়েছে ইনভিসডিফেন্স (InvisDefense)। 

InvisDefense-এ ব্যবহৃত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি অনায়াসেই ধোঁকা দেবে এআই-পাওয়ারড সিকিউরিটি ক্যামেরাকে

আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি, গত ২৭ নভেম্বর চীনে অনুষ্ঠিত ক্রিয়েটিভ কম্পিটিশনে প্রথম পুরস্কার জিতে নিয়েছে ইনভিসডিফেন্স কোট। চীনের পোস্টগ্র্যাজুয়েট ইনোভেশন অ্যান্ড প্র্যাকটিস প্রতিযোগিতার একটি অংশ হিসেবে এই প্রোগ্রামটি হুয়াওয়ে টেকনোলজিস কোম্পানি (Huawei Technologies Co) স্পন্সর করেছিল। যে সকল শিক্ষার্থীরা একযোগে মিলে এই কোটটি তৈরি করেছে, তাদের কথায়, ইনভিসডিফেন্স গায়ে দেওয়া মাত্রই মানুষ এক নিমেষে অদৃশ্য হয়ে যাবে। কারণ এই কোটটিতে এমন কিছু অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে, যা এআই-পাওয়ারড সিকিউরিটি ক্যামেরাকে অতি অনায়াসে ধোঁকা দিতে পারে। কোটটি দিনের বেলার নির্দিষ্ট কিছু প্যাটার্নের মাধ্যমে এবং রাতে টেম্পারেচার ডিটেকশন মডিউলকে টেম্পারিং করে ইনফ্রারেড ক্যামেরাকে বিভ্রান্ত করে। সিকিউরিটি ক্যামেরাকে সম্পূর্ণভাবে অন্ধ করে দেওয়ার জন্য ইনভিসডিফেন্সে মাত্র চারটি টেম্পারেচার কন্ট্রোল মডিউল ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলে কোটটি গায়ে থাকলে মানবদেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হবে, সেক্ষেত্রে ইনফ্রারেড ক্যামেরায় ওই কোট পড়া মানুষের অস্তিত্ব ধরা পড়বে না। 

একদম নামমাত্র খরচে অদৃশ্য হওয়ার সুযোগ পাবেন ইউজাররা

আলোচ্য চমকপ্রদ কোটটির প্রস্তুতকারীরা আরও জানিয়েছে যে, দীর্ঘদিন ধরে বহু প্রচেষ্টার পর এটিকে তৈরি করা গিয়েছে। সবচেয়ে বড়ো কথা হল, চাইলেই যে কেউ এই অত্যাশ্চর্য জিনিসটিকে হাতে পেতে পারেন, কারণ এটির দাম খুবই কম। ৫০০ ইউয়ান অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় মাত্র ৬,০০০ টাকা (প্রায়) খরচ করলেই এই কোটটি কেনা যাবে। ফলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে চুটকিতে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া যে এখন আর কোনো কঠিন ব্যাপার নয়, সেকথা নিঃসন্দেহে বলাই বাহুল্য। স্রষ্টাদের দাবি অনুযায়ী, অ্যান্টি-ড্রোন যুদ্ধ সহ মানবসমাজের কল্যাণের স্বার্থে নানাবিধ উপায়ে এটিকে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া, চীন সহ যেসব দেশে সরকার এআই-চালিত সিকিউরিটি ক্যামেরা দিয়ে নাগরিকদের ওপর অযথা নজরদারি চালায়, সেই সমস্ত জায়গাতে এই কোটটি ইউজারদের জন্য খুবই সহায়ক হবে। 

সরকার কিন্তু নিষিদ্ধ করতে পারে এই InvisDefense কোট

তবে এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, সহজেই অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার জন্য এই কোট চাইলেই কিন্তু ব্যবহার করা যাবে না বলে মনে করছেন একদল বিশেষজ্ঞ। চীনা সংবাদ প্রকাশক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট (South China Morning Post)-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, সরকার এই প্রযুক্তি নিষিদ্ধ করতে পারে। কেননা প্রতিটি দেশেই এমন কিছু গোপনীয় বা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা রয়েছে, যেটিকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখা হয়। এর সাথে সেই দেশের তথা আপামর জনগণের নিরাপত্তা জড়িত রয়েছে। সেক্ষেত্রে এই ধরনের কোট যদি বাজারে চলে আসে এবং তা সর্বসাধারণের জন্য সহজেই উপলব্ধ হয়ে যায়, তাহলে সাধারণ মানুষের গোপনীয়তা তথা নিরাপত্তা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আমজনতার হাতে আদৌ এই InvisDefense কোট এসে পৌঁছোবে কি না, তার উত্তর একমাত্র সময়ের কাছেই রয়েছে।