সুইমিং পুল এমনকি হেলিপ্যাড-ও রয়েছে এই গাড়িতে, চড়বেন নাকি American Dream?

এমন কখনো শুনেছেন যে কোনো গাড়ির দৈর্ঘ্য ১০০ ফুট? যেখানে একটি মানুষের বিনোদন থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় কার্যকলাপের সমস্ত কিছুই উপলব্ধ। হ্যাঁ অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি! আর এর জন্যই ১৯৮৬ সালেই Guinness World Records-এ এর নামও রয়েছে সেই গাড়িটির। আমেরিকার এই যানটির নাম Limousine। যদিও রেকর্ড দৈর্ঘ্যের এই গাড়িটি ‘American Dream’ নামেই অধিক পরিচিত। অতীতে বহু জনপ্রিয় হলিউড মুভিতেই ব্যবহৃত হয়েছে এই গাড়িটি, হয়তো দেখেও থাকবেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক Limousine-এর সৃষ্টির ইতিহাস।

আমেরিকার এই আজব গাড়িটিকে ‘লেমোজিন’ (Lemogin) নামেও জানা যায়। মজার ব্যাপার হল ‘আমেরিকান ড্রিম’ বা ‘লিমুসিন’ গাড়িটিকে কোনো অটোমোবাইল প্রস্তুতকারী সংস্থা ডিজাইন করেনি। বিখ্যাত ভেহিকেল ডিজাইনার জে ওহরবার্গ (Jay Ohrberg) গাড়িটির নকশা তৈরি করেছিলেন। প্রধানত হলিউড মুভিগুলিতে ব্যবহারের জন্যই এটির নির্মাণ করা হয়েছিল। ওহরবার্গ ছিলেন একজন চরম গাড়ি প্রেমী, যিনি নতুন নতুন সব ডিজাইনের বিখ্যাত যানবাহনের নকশা বানাতেন। তিনিই গত ১৯৮০ সালে আমেরিকান ড্রিম-এর ডিজাইন করেছিলেন।

১৯৮০ সালে ডিজাইন করা হলেও এটি পুরোদস্তুর প্রস্তুতিতে ১২ বছর অতিবাহিত হয়ে যায়। বস্তুত ১৯৯২ সালে এটি প্রথম পথ চলা শুরু করে। গাড়িটিতে রয়েছে ২৬টি চাকা। অনেকটা ট্রেনের মতন এই গাড়িটিকেও উভয় দিক থেকেই চালানো সম্ভব। তবে আশ্চর্যের বিষয় হল এর বোনেট-টি হেলিপ্যাড হিসেবে ব্যবহার করা যায়। চলতে শক্তি জোগানোর জন্য এতে রয়েছে একাধিক ভি৮ ইঞ্জিন। আরেকটি আশ্চর্যের বিষয় হল গাড়িটি মাঝখান থেকে বেঁকে যেতেও সক্ষম।

কী কী সুবিধা রয়েছে এই আমেরিকান ড্রিমে? আগাগোড়া আশ্চর্যজনক এই গাড়িটিতে একটি পার্সোনাল হেলিপ্যাড, একটি মিনি গল্ফ কোর্স, বৃহৎ স্নানাগার, বাথটাব, একাধিক টেলিভিশন, ফ্রিজ, টেলিফোন এমনকি একটি সুইমিং পুলও রয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে বর্তমান দিনের একটি সর্বাধিক বিলাসবহুল গাড়ির চাইতেও অধিক বিলাসিতায় পূর্ণ এটি। লিমুসিন-এর রয়েছে ৭০ জন যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা। প্রধানত ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহারের জন্যই নির্মাণ করা হলেও মাঝেমধ্যে সেদেশের ধনকুবের ব্যক্তিদের উল্লাস যাত্রার জন্য এটি ভাড়া খাটানো হত। সেই সময় প্রতি ঘন্টায় এর ভাড়া ছিল ১৪ হাজার টাকা।

তবে এত কিছু সুবিধার পরেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে Limousine একসময় নিজের জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে। এছাড়া এর পার্কিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় বৃহৎ জায়গা ও নানাবিধ কারণে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও এর চাহিদা ক্রমাগত কমতে থাকে। ধুলো জমতে জমতে একসময় American Dream-এর বিভিন্ন অংশে মরচে ধরে যায়। তবে খুশির খবর, সম্প্রতি একটি মার্কিন কার মিউজিয়াম এই পুরানো গাড়িটির মালিকানা নিয়েছে। তাঁরা Lemogin-এর অতীতের সেই জৌলুস ফিরিয়ে আনতে জোর কদমে কাজ শুরু করেছে।