ইলন মাস্কের কোম্পানি নয়, ভারতের ইসরোর হাত ধরে মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠাচ্ছে OneWeb

দীর্ঘদিন ধরে বহু নজিরবিহীন কান্ডকারখানা ঘটিয়ে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেসান (Indian Space Research Organisation) বা ইসরো (ISRO) মহাকাশ গবেষণায় একের পর এক মাইলস্টোন তৈরি করেছে। সম্প্রতি ফের একটি বড়ো তথ্য সামনে এনেছে সংস্থাটি। গত বৃহস্পতিবার ISRO-র তরফে জানানো হয়েছে যে, তারা চলতি মাসের তৃতীয় বা চতুর্থ সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল কানেকশন নেটওয়ার্ক ওয়ানওয়েব (OneWeb)-এর ৩৬ টি উপগ্রহকে ভারতের সবচেয়ে ভারী লঞ্চার LVM3 বা লঞ্চ ভেহিকেল মার্ক III-এর মাধ্যমে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করবে। উল্লেখ্য যে, এতদিন পর্যন্ত যাবতীয় কমার্শিয়াল স্পেস অপারেশনের ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের ইলন মাস্কের SpaceX-এরই একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। তবে এবার OneWeb-এর সঙ্গে উক্ত কর্মকান্ডে যোগ দেওয়ায় গ্লোবাল কমার্শিয়াল লঞ্চ সার্ভিস মার্কেটে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটিও যে একটি বিশেষ জায়গা করে নিতে চলেছে, সেকথা বলাই বাহুল্য।

এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, ইসরোর বাণিজ্যিক শাখা ‘নিউস্পেস ইন্ডিয়া লিমিটেড’ লো-আর্থ অরবিটে (LEO) ব্রডব্যান্ড কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য ওয়ানওয়েবের সাথে ২ টি সার্ভিস কন্ট্র্যাক্ট স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তি অনুযায়ী, ইসরো ওয়ানওয়েবের জন্য দুটি উৎক্ষেপণ পরিচালনা করবে, যা কোম্পানির তারামন্ডল বা নক্ষত্রপুঞ্জে (constellation) মোট ৭২ টি উপগ্রহ মোতায়েন করবে। এই উপগ্রহগুলি ওয়ানওয়েবের তারামন্ডলটিকে সম্পূর্ণ করবে, এবং ভারতের সবচেয়ে ভারী ও সবচেয়ে শক্তিশালী উপগ্রহ উৎক্ষেপণ যান জিওসিঙ্ক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল (GSLV) Mk.III রকেটের মাধ্যমে এই উৎক্ষেপণের কাজটিকে সফলভাবে সুসম্পন্ন করা হবে।

OneWeb-এর স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সার্ভিসকে ঠিক কীভাবে সহায়তা করবে ISRO?

আপনাদেরকে জানিয়ে রাখি, ওয়ানওয়েব হল একটি গ্লোবাল কানেকশন নেটওয়ার্ক, যা ৬৪৮ টি লো-আর্থ অরবিট বা এলইও স্যাটেলাইটের একটি গ্রুপ দ্বারা পরিচালিত হয়। বিশ্বের সর্বত্র এলইও স্যাটেলাইটের ক্লাস্টারের মাধ্যমে সংযোগ প্রদান করাই হল সংস্থাটির মূল লক্ষ্য। ইসরোর তরফে জানা গিয়েছে যে, চলতি মাসে যে উপগ্রহগুলিকে উৎক্ষেপণ করা হবে, সেগুলি ওয়ানওয়েবের ৬৪৮ টি লো-আর্থ অরবিট উপগ্রহের অভিপ্রেত নক্ষত্রমন্ডলে স্থাপিত হবে, যা বিশ্বব্যাপী স্যাটেলাইট ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের কিয়দাংশ তৈরিতে সহায়তা করবে। উল্লেখ্য যে, এই স্যাটেলাইটগুলি লঞ্চ হয়ে গেলেই পুরো বিশ্বকে কভার করার জন্য একটি রিলে কনফিগারেশনে ছড়িয়ে পড়বে, এবং প্রাথমিকভাবে সারা বিশ্বের একাধিক কোম্পানিকে ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি সরবরাহ করবে।

এর সুবাদে পৃথিবীবাসী কী কী সুবিধা পাবে?

এতক্ষণ পর্যন্ত যা বললাম, তা পড়ে সকলেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে, এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ পৃথিবীবাসীকে অনেক কাজে সহায়তা করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কানেক্টিভিটিকে নানাবিধ কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে। মূলত কৃষিক্ষেত্র, বনজ এবং খনিজ সম্পদের ডেটা অ্যানালিটিক্স, এবং টেলিকম সংস্থাগুলিকে তাদের স্থলজ (terrestrial) নেটওয়ার্ক বাড়ানোর জন্য ব্যাকহোল ব্যান্ডউইথ (backhaul bandwidth) সরবরাহ করবে এই কানেক্টিভিটি। সোজা কথায় বললে, ISRO এবং OneWeb-এর এই যৌথ উদ্যোগ সরকার, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষকে উচ্চ গতির সংযোগ পরিষেবা প্রদান করবে। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিকম কোম্পানি Bharti Airtel-ও OneWeb-এর এক প্রধান বিনিয়োগকারী এবং শেয়ারহোল্ডার হিসেবে যুক্ত রয়েছে। ফলে বৈশ্বিক ক্ষেত্রে মহাকাশ দুনিয়ার সাথে সম্পর্কিত একাধিক বিষয়ে ভারতের এই প্রত্যক্ষ যোগাযোগ যে নিশ্চিতভাবে এদেশের সুনাম আরও বহুগুণে বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে, সেকথা নিঃসন্দেহে বলাই বাহুল্য।