অ্যাপ স্টোর থেকে এই অ্যাপ ডাউনলোড করায় খোয়া গেল ৪৩ লক্ষ টাকা, আপনি করেননি তো?

এবার অ্যাপল অ্যাপ স্টোর (Apple App Store) থেকে অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করে প্রতারণার শিকার হলেন একজন মার্কিন নাগরিক। তবে যেমন-তেমন প্রতারণা নয়, গোটা ঘটনার চক্করে তার ৬০,০০০ মার্কিন ডলার (প্রায় ৪৩ লক্ষ টাকা) জলে গিয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অভিযোগ উঠছে অ্যাপলের বিরুদ্ধে। আসলে যে কোন অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোডের ক্ষেত্রে আইওএস (iOS) ও অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস ব্যবহারকারীরা যথাক্রমে অ্যাপল অ্যাপ স্টোর ও গুগল প্লে-স্টোরের (Google Play Store) উপরেই ভরসা দেখিয়ে থাকেন। এর সবথেকে বড় কারণ হিসেবে আমরা উভয় প্ল্যাটফর্মের শক্তিশালী নিরাপত্তা বলয়ের কথা বলতে পারি। কোন অ্যাপ্লিকেশনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পূর্বে অ্যাপল বা গুগল অ্যাপটিকে যথাযথভাবে যাচাই করে নেয়। ফলে অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করার পর, সেই অ্যাপ্লিকেশনের দ্বারা যদি কেউ প্রতারিত হন, তবে তার দায় অনেকটাই অ্যাপলের (Apple) ঘাড়ে চাপতে বাধ্য!

এবার মূল ঘটনায় ফিরে আসা যাক। ঘটনার কেন্দ্রে রয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ফিলিপ ক্রিস্টাড্যুলু (Phillipe Christadoulu), যিনি অ্যাপ স্টোর থেকে ট্রেজর (Trezor) অ্যাপের লোগো সম্বলিত একটি ভুয়ো অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করে বসেন। অবগতির জন্য জানিয়ে রাখি, ট্রেজর একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি অ্যাপ্লিকেশন, যার মাধ্যমে একজন বিটকয়েন (Bitcoin) জাতীয় ডিজিটাল মুদ্রার (Currency) লেনদেন করতে পারেন। সুতরাং মানুষের মধ্যে এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশনের চাহিদা থাকা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে এই অ্যাপ ডাউনলোড করতে গিয়ে যে বিপাকে পড়তে হবে, সেকথা এর আগে কারোর ভাবনাতেই আসেনি। ফলে ফিলিপ ক্রিস্টাড্যুলু একেবারে বোকা বনে গিয়েছেন। নিজের যাবতীয় তথ্য ঐ জাল অ্যাপ্লিকেশনে দাখিল করতেই তার সঞ্চয়ের সিংহভাগ বেহাত হয়ে যায়, যার ফলে তিনি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েন।

অ্যাপ স্টোর থেকে ফিলিপ যে অ্যাপ্লিকেশনটি নিজের ডিভাইসে ইন্সটল করেন, তা হুবহু ট্রেজর অ্যাপের মতোই দেখতে। অ্যাপটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে প্রতারকেরা চেষ্টার কোনরকম ত্রুটি রাখেননি। তাই এর কাছে ধোকা খাওয়া স্বাভাবিক। আর খোদ অ্যাপল অ্যাপ স্টোর যেখানে প্রতারণাকারীদের চিনতে ব্যর্থ, সেখানে সাধারণ মানুষের সহজে ঠকে যাওয়াটা বোধহয় নিয়তি-নির্ধারিত!

ভুয়ো অ্যাপের কারসাজিতে ৬০,০০০ মার্কিন ডলার খুইয়ে, ফিলিপ অ্যাপলকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। তিনি বারংবার বলেছেন যে ‘অ্যাপলের (Apple) কাছে এটা আশা করা যায়না।’ অভিযোগের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অ্যাপল কর্তৃপক্ষ অবশ্য তাদের কৈফিয়ত হাজির করেছে। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী ট্রেজরের (Trezor) ডিজাইন নকল করে বানানো জাল অ্যাপ্লিকেশনটি একটি ক্রিপ্টোগ্রাফি অ্যাপ হিসেবে নিজেদের নথিভুক্ত করে। ফলে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক থাকার কথা নয়। অথচ বাস্তবে এর বিপরীতটাই ঘটেছে যা অ্যাপল ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি।

এই প্রতারণার ঘটনা অ্যাপল অ্যাপ স্টোরের গায়ে যে কলঙ্কের দাগ এঁকে দিয়েছে, তা সহজে মিটবেনা বলেই প্রযুক্তিদুনিয়ার একাংশের অভিমত। যদিও ভবিষ্যতে এই ধরণের ঘটনা রুখে দিতে অ্যাপল (Apple) নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে বলে দাবী করেছে। আর একথা বলা বাহুল্য যে মানুষের প্রতি তারা দায়বদ্ধ এবং এই দায়বদ্ধতাই তাদের এযাবৎ সুখ্যাতির কারণ যা তারা কখনোই সহজে খোয়াতে চাইবেনা। তাই অভিযোগ সামনে আসতেই অ্যাপল (Apple) তড়িঘড়ি উদ্যোগ গ্রহণ করে। প্রথমে তারা ভুয়ো ট্রেজর (Trezor) অ্যাপটিকে অ্যাপ স্টোর থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর তারা আরেকটি জাল ক্রিপ্টোকারেন্সি অ্যাপকে চিহ্নিত করে এবং অ্যাপ স্টোর (App Store) থেকে তার উপস্থিতি নিষিদ্ধ করে।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন