হোয়াটসঅ্যাপের প্রাইভেসি পলিসি ফিরিয়ে নেওয়ার মামলা খারিজ করলো সুপ্রিম কোর্ট

হোয়াটসঅ্যাপের সুরক্ষা ও প্রাইভেসি নিরাপত্তা (WhatsApp New Privacy Policy) সংক্রান্ত বিতর্ক এবার উঠে এলো সুপ্রিম কোর্টেও। ঘটনার সূচনা হয় কয়েকদিন আগে, যখন অ্যাডভোকেট বিবেক নারায়ণ শর্মা দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। তার আবেদনে তিনি হোয়াটসঅ্যাপের বদলে যাওয়া সুরক্ষানীতি ও প্রাইভেসি শর্তাবলীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলেন। তার দাবী, হোয়াটসঅ্যাপের নতুন আপডেট তামাম ভারতীয় নাগরিকের ব্যক্তিগত অধিকার, সুরক্ষা এবং কথা বলা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করছে। এমনকি তাদের নতুন প্রাইভেসি পলিসি যে ভারতীয় আইন ও নিরাপত্তার পরিপন্থী, সেটাও তিনি তার আবেদনে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সুতরাং জনপ্রিয় ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্মটি যাতে অবিলম্বে নয়া প্রাইভেসি পলিসিকে রোল-ব্যাক করা শুরু করে – এই মর্মে বিবেক নারায়ণ শর্মা বিচারালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

তবে বিবেক নারায়ণ শর্মার আবেদনকে সুপ্রিম কোর্ট ততটা আমল দিতে নারাজ। শুক্রবার তারা এই আবেদনটিকে সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে। সবকিছু শোনার পর প্রধান বিচারপতি এস.এ বোবরের (S.A Bobde) নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ইতিমধ্যেই এই সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দিল্লি হাইকোর্টে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাই উপযুক্ত সমাধানের জন্য তারা পিটিশন দায়েরকারীকে অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন।

দিল্লি হাইকোর্টের বিচারাধীন আবেদনটি কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্সের পক্ষ থেকে জমা করা হয়েছে। জাস্টিস এ.এস বোপান্না ও ভি রামাসুব্রম্যনিয়ান বিষয়টিকে পর্যালোচনা করছেন যেখানে Whatsapp, Facebook Inc এর মতো প্রযুক্তিনির্ভর বড় বড় সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ দাবী করা হয়েছে। এই অনলাইন মাধ্যমগুলির জন্য কেন্দ্র যাতে নির্দিষ্ট নির্দেশাবলী স্থির করে দেয়, আবেদনকারীরা সেই দাবী তুলেছেন।

সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে হোয়াটসঅ্যাপ তাদের প্রাইভেসি শর্তাবলী অসংখ্য মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে। তাই এক্ষেত্রে নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষায় কেন্দ্রের এগিয়ে আসা উচিত বলে আবেদনকারীরা মনে করছেন। তাদের দাবী অবিলম্বে এই বিষয়ে ক্ষমতাসীন সরকার অভিভাবকের ভূমিকা গ্রহণ করুক।

গত ৪ঠা জানুয়ারি,২০২১ তারিখে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন প্রাইভেসি শর্তাবলী প্রকাশ্যে আসে। তারপর থেকেই একে কেন্দ্র করে বারংবার বিতর্ক ঘনিয়ে উঠেছে। এই নতুন আপডেটে হোয়াটসঅ্যাপ নিজেদের পুরোনো অপ্ট-আউট (opt-out) পলিসিকে বাতিল করে, যার ফলে তারা ইউজারের অনুমতি ছাড়াই তাদের ব্যক্তিগত তথ্যগুলিকে ফেসবুক সহ অন্যান্য সহযোগী সংস্থার সাথে বিনিময় করতে পারবে। প্রাথমিকভাবে ৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ অর্থাৎ আজ থেকে নয়া পলিসিটিকে কার্যকর করার কথা হেয়াটসঅ্যাপের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

আসলে আইনত আমাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং আলাপচারিতাকে অনলাইন মেসেজিং প্ল্যাটফর্মগুলির কোনভাবেই নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারেনা। আমাদের অনুমতি ছাড়া কোন ব্যক্তি,সংস্থা বা টেলিকম অপারেটর – কারো পক্ষেই সেগুলি অ্যাক্সেস করা অনুচিত। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপের নতুন শর্তাবলী এই নিয়মকে লঙ্ঘন করছে। এর প্রতিবিধানের জন্য আবেদনকারীরা কেন্দ্রকে উচিত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। নাগরিকদের অধিকার রক্ষার দায়ভার যে বহুলাংশে রাষ্ট্রের ওপরেই বর্তায়, সেটাও তারা মনে করিয়ে দিয়েছেন।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন