ফোনে ভাইরাস আছে কি না কীভাবে বুঝবেন? থাকলে কীভাবে রিমুভ করবেন জেনে নিন

এখনকার দিনে হাতে একটা স্মার্টফোন না থাকলে জীবন যেন এককথায় অচল বলে মনে হয়! বর্তমানে বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি স্মার্টফোন সক্রিয়ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে, এবং সাম্প্রতিক করোনা পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ কাজই অনলাইনে হয়ে যাওয়ায় স্মার্টফোনের ব্যবহার আরও বহুল পরিমাণে বেড়েছে। তবে পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে সাইবার আক্রমণকারীদের দৌরাত্ম্য। ইদানিংকালে সাইবার হামলা সম্পর্কে নতুন করে কাউকে আর কিছু বলার প্রয়োজন পড়ে না। হ্যাকারদের সৃষ্ট নিত্যনতুন কারসাজিতে ইউজারদের প্রতারিত হওয়ার ঘটনা এখন রোজকার খবরের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। ইউজারের অজান্তেই ডিভাইসে ক্ষতিকারক ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে দিয়ে ব্যবহারকারীদের কষ্টার্জিত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সাইবার আক্রমণকারীরা। পাশাপাশি অনেক সময় ব্যবহারকারীদের ভুলেও ফোনে ম্যালিশিয়াস ভাইরাসের আগমন ঘটে।

তাই আপনার কাছে Android স্মার্টফোন বা Apple iPhone যাই থাকুক না কেন, সাইবার অপরাধীরা এই ধরনের ক্ষতিকারক ভাইরাস ছড়িয়ে আপনাকে যে কোনো সময় ভয়ঙ্কর বিপদের মুখোমুখি করতে পারে। তাই ফোনে ভাইরাস আছে কি না এবং যদি থেকে থাকে তাহলে সেগুলিকে কীভাবে দূর করা সম্ভব, সে সম্পর্কে যদি জেনে রাখা যায় তাহলে এই ধরনের বিপদের হাত থেকে অনেকটাই নিরাপদে থাকা যাবে। আসুন ম্যালওয়্যার কী এবং কীভাবে সেগুলি খুঁজে পাওয়া যাবে জেনে নেওয়া যাক।

ম্যালওয়্যার কী?

Cisco-র মতে, “ম্যালওয়্যার হল অনুপ্রবেশকারী সফ্টওয়্যার যা কম্পিউটার এবং কম্পিউটার সিস্টেমের ক্ষতি এবং ধ্বংস করার জন্য ডেভেলপ করা হয়েছে। ক্ষতিকারক (ম্যালিশিয়াস) সফ্টওয়্যারের একটি ছোটোখাটো অপভ্রংশ হল ম্যালওয়্যার। সাধারণ ম্যালওয়্যারের উদাহরণগুলির মধ্যে রয়েছে ভাইরাস, ওয়ার্ম, ট্রোজান ভাইরাস, স্পাইওয়্যার, অ্যাডওয়্যার এবং র‌্যানসমওয়্যার।”

আপনার ফোনে কোনো ভাইরাস আছে কি না তা কীভাবে বুঝবেন?

১. খুব বেশি ব্যবহার না করা সত্ত্বেও যদি আপনার স্মার্টফোনে হাত দিয়ে দেখেন যে সেটি খুব গরম হয়ে রয়েছে, তাহলে হতে পারে যে কেউ আপনার ফোনটি হাইজ্যাক করেছে এবং অসৎ কার্যসিদ্ধি করার জন্য অবৈধভাবে আপনার ফোনটিকে ব্যবহার করছে।

২. আপনার ডেটা বা ব্যাটারি খুব দ্রুত শেষ হওয়া বা উল্লেখযোগ্য কোনো ক্রিয়াকলাপ ছাড়াই হঠাৎ করে ফোনের বিল বেশি আসা ফোনে ভাইরাসের অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয়।

৩. আপনার ফোনে যদি প্রায়শই খুব বেশি অপ্রাসঙ্গিক অ্যাড প্রদর্শিত হয়, তাহলে তা ফোনে লুকানো অ্যাডওয়্যারের ইঙ্গিত দেয়। তারা কেবল অবাঞ্ছিত বিজ্ঞাপনই পরিবেশন করে না, সেইসাথে ফোনটিকে ক্ষতিকারক ম্যালওয়্যার দিয়ে সংক্রামিত করতে পারে।

৪. আপনার ফোনের কন্টাক্টসে থাকা ব্যক্তিদের কাছে যদি আপনার ফোন থেকে স্প্যাম মেসেজ যেতে থাকে, তাহলে ধরে নিতে হবে যে নিঃসন্দেহে আপনার ফোনে ভাইরাস রয়েছে। এর ফলে আপনার ফোনটির পাশাপাশি যে ফোনগুলিতে আপনার ফোন থেকে মেসেজ যাচ্ছে, সেগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

কীভাবে আপনার ফোন থেকে ম্যালিশিয়াস অ্যাপগুলি খুঁজে বের করে সেগুলিকে ডিলিট করবেন?

১. আপনার ফোনে কি এমন কোনো অ্যাপ আছে যেটি আপনি ডাউনলোড করেননি? তাহলে ধরে নিতে হবে যে সেগুলি সম্ভবত ক্ষতিকারক ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে।

২. আপনার ফোনের কোন অ্যাপগুলি সবচেয়ে বেশি ডেটা ক্ষয় করছে সেগুলিকে খুঁজে বার করুন এবং যদি খুব প্রয়োজন না হয় তাহলে সেই সকল অ্যাপগুলিকে অবিলম্বে ডিলিট করুন।

৩. আপনার ফোনের সবকটি অ্যাপকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। এর মধ্যে যদি এমন কোনো অ্যাপ খুঁজে পান যেগুলি আপনি ব্যবহার করেন না বা আপনি কবে ডাউনলোড করেছেন তা ঠিক মনে করতে পারছেন না বা অ্যাপ স্টোরে সেই অ্যাপটির রিভিউ খুবই খারাপ, তাহলে সেই অ্যাপগুলিকে তৎক্ষণাৎ ডিলিট করুন।

কীভাবে আপনার ফোনে ভাইরাসের অনুপ্রবেশ আটকানো সম্ভব?

আগেই বলেছি যে, সাইবার আক্রমণকারীদের কারসাজির পাশাপাশি অনেক সময় স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের ভুলেও ফোনে ক্ষতিকারক ম্যালওয়্যারের আগমন ঘটে। তাই ফোনে অযাচিতভাবে ভাইরাসের অনুপ্রবেশ রুখতে নীচে উল্লিখিত কাজগুলি কোনোমতেই করবেন না:

১. অজানা উৎস থেকে যাচাই না করা অ্যাপগুলি কখনোই ডাউনলোড করবেন না। অ্যাপ ডাউনলোড করার জন্য সর্বদা Google Play Store বা Apple app store-এর মতো অফিসিয়াল অ্যাপ স্টোরগুলি ব্যবহার করুন। যদিও এই দুটি স্টোরেও এখন বহু ম্যালিশিয়াস অ্যাপের আবির্ভাব ঘটেছে, যেগুলি ডাউনলোড করলেই ইউজাররা বিশাল বড়ো ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন। তাই যে কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করার সময় সর্বদা সতর্ক থাকুন, কেননা অসতর্কভাবে কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করে ফেললেই হয়ে যেতে পারে ভয়ঙ্কর রকমের বিপদ।

২. আপনি যখনই কোনো অ্যাপ ডাউনলোড করবেন তখন এটি আপনার ফোনে কী করতে পারে সে সম্পর্কে আপনার কাছ থেকে পারমিশন চাইবে। তাই সেই সমস্ত অ্যাপ কখনোই ডাউনলোড করা উচিত নয়, যেগুলি এমন কোনো বিষয়ে পারমিশন চায় যাতে সম্মত হতে আপনি সম্পূর্ণভাবে রাজি নন। পাশাপাশি যদি কোনো অ্যাপ আপনার পার্সোনাল ডিটেলস চুরি করতে পারে বলে সন্দেহ বোধ করেন, তাহলে তৎক্ষণাৎ সেটি এড়িয়ে চলুন।

৩. একটি ভালো এবং নির্ভরযোগ্য অ্যান্টিভাইরাস সফ্টওয়্যার ছাড়া অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করবেন না। মোবাইল অ্যান্টি-ভাইরাস আপনাকে এবং আপনার ফোনকে অনলাইন হ্যাকারদের হাত থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন