চাঁদে বরফের অস্তিত্বের সন্ধান দিল চন্দ্রযান-২, বিরল কৃতিত্বের অধিকারী ISRO

মহাশূন্যের গহীনে লুকিয়ে থাকা বহু রহস্যের খোঁজ জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন। এই সুবাদে বহুক্ষেত্রেই একাধিক যুগান্তকারী আবিষ্কারের খোঁজ মেলে যা গোটা বিশ্বকে চমকে দেয়। কোনো সন্দেহ নেই এই মুহূর্তে বিজ্ঞানীদের প্রথম লক্ষ্য হল পৃথিবীর বাইরে অন্য কোথাও জীবনের অস্তিত্ব আছে কি না তার সন্ধান খুঁজে বের করা। আর জলই যেহেতু জীবন, তাই অন্যান্য গ্রহ বা উপগ্রহে জলের অস্তিত্ব আছে কি না তা জানার জন্য বিজ্ঞানীরা দীর্ঘকাল ধরে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবং এই তথ্য অনুসন্ধানে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে পছন্দের জায়গা হল মঙ্গল গ্রহ অথবা চাঁদ। মঙ্গল গ্রহকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বব্যাপী প্রচুর হইচই হলেও চাঁদ যেন অনেকেরই চোখের আড়ালে চলে গেছে। কিন্তু সবার অলক্ষ্যে থাকলেও পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহটিতে যে কোনো আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটবে না, তার তো কোনো মানে নেই। এবং সেই জায়গাতেই জলের অস্তিত্বের সন্ধান করে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করল ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গ্যানাইজেশন (ISRO)।

আমরা জানি যে, চাঁদের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে গোটা চন্দ্রপৃষ্ঠ ও দূরতম প্রান্ত পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে ২০১৯-এর ২২ জুলাই চন্দ্রযান-২ (Chandrayaan-2)-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্ব বিপুল প্রত্যাশা ও উত্তেজনা নিয়ে তাকিয়ে ছিল ভারতের এই দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযান মিশনটির দিকে। মহাকাশযানটি ইতিমধ্যেই চাঁদ ও মহাকাশ বিষয়ক অন্যান্য একাধিক খবর সফলভাবে প্রেরণ করতে সক্ষম হয়েছে। সম্প্রতি চাঁদের চারপাশে চন্দ্রযান-২-এর দুই বছরের অভিযানের সাফল্যে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গ্যানাইজেশন Lunar Science Workshop 2021-এর আয়োজন করেছিল। এই কর্মশালায় ইসরোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, চাঁদে ওয়াটার আইস অর্থাৎ বরফের অস্তিত্ব মিলেছে।

অর্থাৎ খুব সহজ ভাষায় বললে, সম্প্রতি এই চন্দ্রযান দ্ব্যর্থহীন ভাষায় চাঁদে জলের অস্তিত্বের কথা ঘোষণা করেছে। মহাকাশযানটি কর্তৃক প্রেরিত তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে যে, চাঁদের যে অংশে কখনো আলো পৌঁছোয় না, সেখানেই বরফাকারে এই জলের অস্তিত্ব মিলেছে। চাঁদের এই চির ছায়াবৃত অঞ্চলের একটি নামও রয়েছে – Permanently shadowed regions বা PSR। আসলে যেহেতু এই PSR-এ সূর্যের আলো পৌঁছোয় না, তাই এই অঞ্চলের ছবি তোলাও এতদিন পর্যন্ত ততটা সহজ হয়নি। ফলে বিষয়টি এতদিন অস্পষ্টই ছিল, এবং বিশ্বের অন্য কোনো দেশেরও এই বিষয়টির ওপর নজর পড়েনি। আর তাই চন্দ্রযান-২-এর হাত ধরে এই বিরল আবিষ্কারের সুবাদে মহাকাশ কেন্দ্রিক গবেষণায় ভারত বিশ্বে এক অনন্য নজির গড়ল।

ISRO-র চেয়ারম্যান এবং মহাকাশ বিভাগের (Department of Space বা DoS) সেক্রেটারি কে সিভান (K Sivan) বলেছেন, “চন্দ্রযান-২ মহাকাশযানে থাকা আটটি পেলোড চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার উচ্চতায় চাঁদের রিমোট সেন্সিং এবং ইন-সিটু পর্যবেক্ষণ পরিচালনা করছে। এর মধ্যে ডুয়াল ফ্রিকোয়েন্সি সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার (DFSAR) পেলোড চন্দ্রপৃষ্ঠে জল বা বরফের অস্তিত্ব সন্ধানের জন্য বিশেষভাবে আমেদাবাদের Space Applications Centre (SAC)-এ তৈরি করা হয়েছিল। এই পেলোড এবং চন্দ্রযান-২-তে থাকা অত্যাধুনিক এবং উচ্চমানের বিরল ক্ষমতাসম্পন্ন সব যন্ত্রপাতির কল্যাণেই এই চমকপ্রদ তথ্য আবিষ্কার করা সম্ভব হল।” নিঃসন্দেহে এই সাফল্য প্রত্যেক ভারতবাসীর কাছেই এক অত্যন্ত গৌরবের বিষয়।

হোয়াটসঅ্যাপে খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন