কম স্মার্টফোন তৈরি করছে Samsung, Apple সহ প্রমুখরা, চাহিদায় ভাটার মূল কারণ

বিশ্বব্যাপী মোবাইল ফোন বাজারের গতিবিধি যতটা সহজ মনে হয় ততটা নয়। এমনকি স্যামসাং (Samsung) এবং অ্যাপল (Apple)-এর মতো বড় মোবাইল ফোন ব্র্যান্ডগুলির ক্ষেত্রেও, উৎপাদন পরিচালন করার জন্য ব্যাপক হারে বাজার পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। এটি ক্রেতাহীন অবস্থায় বহু ডিভাইসের বাজারে থাকার পরিস্থিতিটি এড়াতে সাহায্য করবে। তাইওয়ানের এক সংবাপত্রের দাবি, বিশ্বব্যাপী মোবাইল ফোন শিল্পে এবছরে বেশ ভাটা দেখা যাচ্ছে। শুধু বিক্রিই কমেনি, তার সাথে সাথে অ্যাপল এবং স্যামসাং সহ একাধিক শীর্ষস্থানীয় স্মার্টফোন নির্মাতারা তাদের উৎপাদন কমাতে শুরু করেছে।

বড় ব্র্যান্ডগুলি বর্তমানে বাজারের ঝুঁকি কমাতে এবং ডেস্টকিংয়ের গতি ত্বরান্বিত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। বিশ্লেষকরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, এবছর অর্থনৈতিক মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি এবং মহামারীর মতো কারণগুলির কারণে বিশ্বব্যাপী মোবাইল ফোনের সরবরাহ মাত্র ১.২৬ বিলিয়ন ইউনিট হবে। গত বছরের তুলনায় ৬.৮ শতাংশ কম। তবে অনুমান, পরের বছর বিশ্বব্যাপী মোবাইল ফোনের চালান প্রায় ১,৩২৭ বিলিয়ন ইউনিট হবে, যা বছরে ৫.২% বৃদ্ধি পাবে।

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় স্মার্টফোন নির্মাতারা স্মার্টফোনের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে

শাওমি (Xiaomi), ওপ্পো (Oppo) এবং ভিভো (Vivo)-এর মতো তিনটি প্রধান চীনা ব্র্যান্ডের বৃদ্ধি ২০২১-এর তুলনায় ২০ শতাংশ পতনের সাক্ষী। অ্যাপল শীর্ষ ছয়টি মোবাইল ফোন ব্র্যান্ডের মধ্যে একমাত্র যাদের এবছর ইতিবাচক বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, চতুর্থ ত্রৈমাসিকে সীমিত উৎপাদন ক্ষমতার কারণে, চূড়ান্ত শিপমেন্ট আগের পূর্বাভাসের মতো ভাল নাও হতে পারে।

আবার, স্যামসাংও বেশ কিছু কারণ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে। সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে যে, দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানিটির ভিয়েতনাম তাদের সবচেয়ে বড় অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্টের উৎপাদন কমিয়েছে। বর্তমানে, স্যামসাংয়ের মোট মোবাইল ফোনের সরবরাহে ভিয়েতনাম প্ল্যান্টের অনুপাত ৫০%-এ নেমে এসেছে। এটি পরের বছর ৪০%-এ নেমে যেতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, মোবাইল ফোন শিল্পে ডেস্টকিংয়ের গতি ইন্ডাস্ট্রির প্রত্যাশার চেয়ে আগে ঘটছে। তবে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে, আগের পরিস্থিতিতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

সারা বিশ্বের স্মার্টফোন বাজারে শীর্ষ সাতটি ব্র্যান্ড হল স্যামসাং, অ্যাপল, ওপ্পো, শাওমি, ভিভো, ট্রানসন এবং অনর। এই ব্র্যান্ডগুলির হ্যান্ডসেটই বিশ্বব্যাপী মোবাইল ফোনের বাজারে ৮০%-এরও বেশি সরবরাহ হয়। বেশিরভাগ কোম্পানির মোবাইল ফোন বছরের প্রথমার্ধে, যেখানে অ্যাপলের ফোন বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বেশি সরবরাহ হয়ে থাকে।

কৌশল বিশ্লেষণ: ২০২২ সালের নভেম্বরে গ্লোবাল মোবাইল ফোন শিপমেন্ট/সেলের র‌্যাঙ্কিং

ওয়্যারলেস স্মার্টফোন স্ট্র্যাটেজি (WSS) সার্ভিস রিসার্চ রিপোর্ট অনুসারে, ২০২২ সালের নভেম্বরে বিশ্বব্যাপী মোবাইল ফোনের শিপমেন্ট (বিক্রির জন্য পাঠানো) এবং সেল (বিক্রয়) যথাক্রমে ২০% এবং ১৮% কমেছে। মুদ্রাস্ফীতি এবং মুদ্রা বিনিময় হারের অস্থিরতা, দুর্বল মোট ইন্ডাস্ট্রি ইনভেন্টরি, অতিমারি দ্বারা সৃষ্ট উৎপাদন ব্যাঘাত, চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং একাধিক বাজারে দুর্বল চাহিদার কারণে কর্মক্ষমতাও বেশ দুর্বল।

আবার, মোবাইল ফোন ব্র্যান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে, ২০২২ সালের নভেম্বরে স্যামসাং শিপমেন্ট এবং সেলে ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে নেতৃত্ব দিয়েছে। সরবরাহ ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে স্যামসাংয়ের পরেই রয়েছে অ্যাপল। শাওমি সরবরাহ এবং বিক্রয় উভয় ক্ষেত্রেই তার তৃতীয় অবস্থান বজায় রেখেছে। তালিকার অন্যান্য ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে ওপ্পো (ওয়ানপ্লাস সহ), ভিভো, ট্রানশন, অনর, রিয়েলমি, লেনোভো (মোটোরোলা) এবং হুয়াওয়ে।

CINNO: মোবাইল ফোন প্যানেলের দাম গোটা ২০২২ অর্থবর্ষে হ্রাস পাবে

সিআইএনএনও গবেষণায় দেখিয়েছে যে, অতিমারির প্রভাব এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে অব্যাহত মন্দার কারণে বাজারের অবস্থা আগের বছরের মতো নয়। বিশ্বব্যাপী মোবাইল ফোনের বাজার নিম্নমুখী প্রবণতায় বদল আনতে ব্যর্থ হয়েছে। প্যানেলের চাহিদার জন্য কোনও ভালো প্রত্যাশাও নেই। এছাড়াও, মোবাইল ফোন প্যানেলের দাম ২০২২ অর্থবর্ষ জুড়ে হ্রাস পাবে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোরিয়ান প্যানেল ব্র্যান্ডগুলি ধীরে ধীরে এলসিডি প্যানেলের বাজার থেকে সরে আসবে, বড় আকারের প্যানেলের দাম স্থিতিশীল হওয়ার পরে, উচ্চ প্রজন্মের লাইনগুলির অপারেটিং চাপ হ্রাস পাবে। এটি কম দামে বাজার দখল করতে মোবাইল ফোন পণ্য ব্যবহার করার ইচ্ছাকেও কমিয়ে দেবে। তবে স্বল্প মেয়াদে মোবাইল ফোন প্যানেলের দাম চাপে থাকবে।

এগুলির মধ্যে, এলসিডি মোবাইল ফোন প্যানেলের দাম ২০২১-এর জুলাই থেকে কমতে শুরু করেছে। মনে করা হচ্ছে, এর মূল্য ২০২২ সাল জুড়ে নিম্নমুখী প্রবাহেই চলতে থাকবে।, চতুর্থ ত্রৈমাসিকে এর পতন আরও বেশি হবে। ২০২২ সালে, a-Si প্যানেলের ক্রমবর্ধমান পতন হবে ১৩.৩%, এবং এলটিপিএস প্যানেলের ক্রমবর্ধমান পতন হবে ৯.৭%। প্যানেল নির্মাতাদের a-Si উৎপাদন ক্ষমতা আইটি/শিল্প নিয়ন্ত্রণ/যানবাহন পণ্যে স্থানান্তরিত হচ্ছে এবং মূলধারার এলটিপিএস প্যানেল নির্মাতারা হোয়াইট-লেবেল বাজারে সরবরাহ বাড়াচ্ছে।

AMOLED প্যানেল যুক্ত ডিভাইসের চাহিদায় হ্রাস

অ্যামোলেড মোবাইল ফোন প্যানেলের চাহিদা বৃদ্ধির হার কমে গেছে। এটি হাই ইনভেন্টরি স্তরের সাথে মিলিত হয়েছে, যার মানে হল যে বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। এটি বেশিরভাগই ফ্লেক্সিবেল অ্যামোলেড প্যানেলের জন্য হয়েছে, যেখানে দামের প্রতিযোগিতা তীব্র। ২০২২ সালে, ফ্লেক্সিবেল অ্যামোলেড মোবাইল ফোন প্যানেলের দাম ১৯.৮% কমে যাবে। এছাড়াও, অনমনীয় অ্যামোলেড মোবাইল ফোন প্যানেলের দাম ১০.৯% হ্রাস পাবে। প্রধান প্যানেল নির্মাতা, স্যামসাং ডিসপ্লে (এসডিসি)-এর শিপমেন্ট এবং মার্কেট শেয়ারে উল্লেখযোগ্য হ্রাস পেয়েছে, বিশেষ করে চীনা বাজারে।

সিআইএনএনও রিসার্চ ভবিষ্যদ্বাণী করেছে যে, চাহিদার সুস্পষ্ট ইতিবাচক কারণের অনুপস্থিতিতে, মোবাইল ফোন প্যানেলের দাম কমতে থাকবে। এছাড়াও, ২০২২ সালের ডিসেম্বর এবং ২০২৩- lএর জানুয়ারিতে a-Si / LTPS প্যানেলের দাম প্রতি মাসে ০.৩ মার্কিন ডলার বা প্রায় ২৫ টাকা কমে যাবে। অনমনীয় অ্যাম্বুলেন্স প্যানেলের দাম ০.৫ ডলার বা প্রায় ৪২ টাকা কমতে থাকবে এবং নমনীয় অ্যামোলেড প্যানেলের দাম ১ ডলার বা ৮৩ টাকা কমতে পারে। দামের এই ক্রমবর্ধমান হ্রাস ব্র্যান্ডগুলিকে তাদের প্রজেকশন কমাতে বাধ্য করছে৷